ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি লিটনের জামিন নাকচ, আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ অক্টোবর ২০১৫

এমপি লিটনের জামিন নাকচ, আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিশু সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলার একমাত্র আসামি সরকারদলীয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের জামিন আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে তাকে আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে গাইবান্ধার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আপীল বিভাগের চেম্বার জজের আদালতে আবেদন (সিএমপি) করব। হাইকোর্টের দেয়া এ নির্দেশনা স্থগিতের প্রার্থনা করব, যাতে পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করতে পারে। এর আগে সকালে শিশু সৌরভের পায়ে গুলি করার মামলায় লিটনের করা আগাম জামিনের আবেদনের শুনানির সময় সোমবার তাকে দুপুর একটায় আদালতে উপস্থিত হতে বলা হলে তিনি বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে আদালতে হাজির হন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন এসএম আরিফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্র্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ। জামিনের বিরোধিতা করে এ্যাটর্র্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা গুরুতর অপরাধ। তার আবেদন নাকচ করে তাকে পুলিশের হেফাজতে দেয়ার আরজি জানান। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবে আলম বলেন, সাংসদ লিটনের জামিন আবেদন খারিজ করা হয়েছে। কিন্তু তাকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা সংক্রান্ত হাইকোর্টের এ আদেশ আপীল বিভাগের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই নির্দেশনার আদেশের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার আপীল করা হবে। সোমবার সকালে লিটনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম আগাম জামিনের আবেদন বেঞ্চে উপস্থাপন করলে আদালত বেলা ১টায় আবেদনকারীকে শুনানিতে হাজির করতে বলে। সে অনুযায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন আদালতে এলে সোয়া ১টায় শুনানি শুরু হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালত আদেশ দেয়। পুরো সময় সাদা শার্ট ও ধূসর প্যান্ট পরা লিটন আদালতকক্ষে দাঁড়িয়েই ছিলেন। আবেদন দাখিলের সময় শুনানিতে লিটনের আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম আদালতকে বলেন, দুঃখজনক একটি শিশু আহত হয়েছে ও মামলা হয়েছে। আদালত বলেন, “অভিযোগে দেখা যাচ্ছে, শুধু গুলিই করেনি, হাসপাতালে নিতে বাধাও দিয়েছেন। অভিযোগে হত্যার উদ্দেশ্য হাতে লেখা হয়েছে। উনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ফ্যাক্ট দেখা প্রয়োজন। অত ভোরে একটি বাচ্চা দাঁড়িয়ে ছিল, এটা কি হতে পারে? ডাকল, শুনল না, গুলি করে দিল? এত ভোরে বাচ্চা কোত্থেকে এলো?’ আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলে, সকাল বেলা আপনিও তো বেরিয়েছেন? আদালত আরও বলেন, ‘আগাম জামিনের বিষয়ে আপীল বিভাগের সিদ্ধান্ত আছে। এর বাইরে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। এর বাইরে কিছু থাকলে দেখান।’ শুনানিতে অংশ নিয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মামলার এফআইআর তুলে ধরে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২ অক্টোবর সৌরভ ব্যায়াম করতে যায়। লিটন তাকে ডাকে, সৌরভ শুনে নাই। বাদীর ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে তিনটি গুলি ছোড়ে। জামিনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘তিনি জনপ্রতিনিধি, এটা কি তার কার্যক্রম হতে পারে? সাধারণ লোক আর প্রতিনিধির করা অপরাধের মধ্যে প্রতিনিধির অপরাধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ওই অপরাধের বিরোধিতার করে কোন বিবৃতিও দেয়নি।’ এরপর আগাম জামিন নিয়ে আপীল বিভাগের কয়েকটি মামলার রায় ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, এখান থেকে তাকে কাস্টডিতে পাঠানো উচিত। আদেশের পর আইনজীবীর চেম্বারে সাংবাদিকরা সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কাছে পলাতক থাকার ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দুটি অস্ত্র জমা নিয়ে নিয়েছে। আমার নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে, কারণ এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত। ওখানে চার জন পুলিশকে মেরেছে। আত্মসমর্পণ করবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোর্টের আইন তো মানতেই হবে। গত ২ অক্টোবর গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য লিটনের ছোড়া গুলিতে শাহাদাত হোসেন সৌরভ নামে নয় বছর বয়সী ওই শিশু আহত হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। আহত শিশুর বাবা সাজু মিয়া ঘটনার পরদিন সাংসদ লিটনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন হাফিজার রহমান নামে সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহাবাজ গ্রামের এক বাসিন্দা। এদিকে গুলির ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান সাংসদ লিটন।
×