ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গল্প গানে উত্তরায়ণের রবীন্দ্রসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১২ অক্টোবর ২০১৫

গল্প গানে উত্তরায়ণের রবীন্দ্রসন্ধ্যা

গৌতম পাণ্ডে ॥ একটাই উদ্দেশ্য, আর তা হলো রবীন্দ্র বাণীকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, অন্তর থেকে অন্তরে ছড়িয়ে দেয়া। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এ কাজটি করে চলেছে রবীন্দ্র মানসে গড়া সংগঠন উত্তরায়ণ। গল্প-গানে যেমন করে সময়কে ধরে রেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সে নিবেদনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁকেই শ্রদ্ধা জানাল সংগঠনটি। গান ও কবিতা রচনার অন্তরালে রবীন্দ্রনাথের যে গল্প রয়েছে, তারই ছোঁয়ায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনপূর্ণ শ্রোতা-দর্শককে শনিবার সন্ধ্যায় মুগ্ধ করে সংগঠনের শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথ যখন শিলাইদহ থেকে শাহযাদপুর আসেন, তখন নদীপথে চলনবিল দিয়ে আসছিলেন। তাঁর সঙ্গে একটি ছোট্ট নোট বই ছিল, নাম ছিল ‘মজুমদার পুথি’। এই নোট বইটিতে একটি কবিতা পাওয়া গিয়েছিল। যার নাম ছিল ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’। পরবর্তিতে এর শব্দের পরিবর্তন করে সুর দিয়ে গানটি গাওয়া হয়। একবার শান্তি নিকেতনে ‘ঋতুরংগ’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ঋতুর গান গাওয়া হচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ দেখলেন, সব ঋতুরই গান রয়েছে, কিন্তু হেমন্তের কোন গান নেই। তখন তিনি ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ গানটি হেমন্ত ঋতুর গান হিসেবে গাইতে নির্দেশ দিলেন। পরবর্তিতে ‘নটরাজ’ লেখার পর বেশ কিছু হেমন্তের গান পাওয়া যায়। জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে অনেক গুণী সঙ্গীতজ্ঞ আসতেন, থাকতেন, গান শেখাতেন। তেমনই একজন ওস্তাদ ছিলেন যদুনাথ ভট্ট, যাকে সবাই যদুভট্ট বলেই জানেন। রবীন্দ্রনাথ যাদের কাছে গান শিখেছিলেন, তিনি তাদেরই একজন। মাত্র চার মাস ঠাকুর বাড়িতে ছিলেন। তাঁর বেশকিছু রচনা ছিল, যার দ্বারা রবীন্দ্রনাথ আকৃষ্ট হয়েছিলেন, -প্রভাবিত হয়েছিলেন। যদিও আড়াল থেকে তাঁর অনেক গানই রপ্ত করে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ‘রুমা ঝুমা’ গানটিকে রবীন্দ্রনাথ ভেঙে রচনা করলেন ‘শূন্য হাতে ফিরি হে’ গানটি। রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গানের পেছনে রয়েছে এ রকম একাধিক গল্প। এ গল্পগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়া মানেই রবীন্দ্রনাথের গানে বেশি মনোযোগী হওয়া। পুরো অনুষ্ঠানটি সাজানো ছিল এ রকম গান ও গল্প দিয়ে। ‘গল্প গানে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের গবেষণা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী লিলি ইসলাম। সহ-পরিচালনায় ছিলেন হিমাদ্রী শেখর। পাঠে অংশ নেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানটি সংস্কৃত ও একই সঙ্গে বাংলায় গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সংগঠনের শিল্পীরা। মৃদঙ্গ, বেহালা ও বাঁশির সমন্বিত সুর পুরো মিলনায়তনে রবীন্দ্র আবহের সৃষ্টি হয়। ধারা বর্ণনা দিতে দিতে ধীর পায়ে মঞ্চে আসেন লিলি ইসলাম। গল্পের মধ্যে তুলে ধরেন রবীন্দ্রনাথের গানের নেপথ্য কাহিনী। একক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে’ গানটি। ‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসি’, ‘ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতন মনে কথা কই’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’, ‘শূন্য হাতে ফিরি হে’, ‘গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে’, ‘ওই আসন তলে’, ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ’, ‘চরণ ধরিতে দিয়োগো আমায়’, ‘চলিগো চলিগো যাইগো চলে’, ‘সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে’, ‘মাধবী হঠাৎ কোথা থেকে এলো’, ‘আজ আকাশের মনের কথা’সহ ২০টি গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। প্রতিটি গানের সঙ্গে তুলে ধরা হয় পেছনের গল্প। পেছনের পর্দায় তুলে ধরা হয় গানটির রচনার সময়ের বয়স, সাল, রচনা স্থান, ধরন ও রাগ। পাশাপাশি পেছনের পর্দাজুড়ে ঠাকুরবাড়ির দেউড়ি-খিড়কি এমনভাবে পর্দায় দেখানো হয় যেন পুরো ঠাকুরবাড়ির দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অনুষ্ঠানের যন্ত্রানুসঙ্গ পরিচালনা করেন সুব্রত মুখার্জী। যন্দ্রানুসঙ্গে ছিলেন বিপ্লব ম-ল, সন্দীপন গাঙ্গুলী, সৌমজ্যোতি ঘোষ ও পার্থ প্রতীম গুহ।
×