ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাকারিয়া স্বপন

মেয়েদের যে বিষয়টি আমি একদমই বুঝি না!

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১২ অক্টোবর ২০১৫

মেয়েদের যে বিষয়টি আমি একদমই বুঝি না!

ঢাকার গুলশান কেএফসির দোতলায় ঠিক কোনার টেবিলটাতে মেয়েটি বসেছিল। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠেই হাতের ডানদিকে সামনের কোনায় তাকে দেখতে পাই। মেয়েটি একা। মেঝের দিকে মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি সোজা নাক বরাবর গিয়ে বসি। মেয়েটির সঙ্গে আমার ঠিক নব্বই ডিগ্রী সমকোণ তৈরি হয়। আমার সঙ্গে একজন জুনিয়র বন্ধু। খাবার নিয়ে আমরা মুখোমুখি বসেছি। মেয়েটি আমার সামনে তিনটা টেবিল পরে, তাকালে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। বয়স কত হবে মেয়েটির? ১২ থেকে ১৫, স্কুলে পড়া কিশোরী। মাথা নিচু করে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মাথায় ওড়না দেয়া, আজান দিলে মেয়েরা যেভাবে ঘোমটা দিয়ে থাকে তার থেকে আরেকটু বেশি। মেয়েটির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কোলের ওপর হাত দুটি রাখা। সেই হাত চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে। সেটা মোছার কোন তাড়া নেই তার। ঠিক মূর্তির মতো এক জায়গায় বসে আছে সে। একটি অচেনা মানুষের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাটা অভদ্রতা। কিন্তু মেয়েটি আমার মাথায় পাথর ছুড়ে দিয়েছে। এত অল্প বয়সী একটা মেয়ে এভাবে পাবলিক প্লেসে বসে কাঁদছে- কী তার কষ্ট! কী তার দুঃখ! আমি একটা করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই মুখে দিই আর মেয়েটির দিকে তাকাই। জুনিয়র যে বন্ধুটিকে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম তার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। একটু পরে সমকোণ ত্রিভুজের ঠিক আরেক প্রান্ত থেকে একজন মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা এসে বসেন মেয়েটির সামনে। আমি দু’জনকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। ভদ্রমহিলা এসে মেয়েটিকে কী যেন বোঝাতে শুরু করলেন। তার মুখভঙ্গি এবং মুখের এক্সপ্রেশন থেকে যেটুকু বুঝতে পারলাম, ভদ্রমহিলা কিশোরী মেয়েটিকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কেউ অপরাধ করলে তাকে যেভাবে রাগারাগি করে বোঝানো হয়, অনেকটা তেমন। তবে ভদ্রমহিলাকে মেয়েটির মা মনে হলো না। ভদ্রমহিলা বিভিন্ন ভঙ্গিতে তাকে ভর্ৎসনা করে যাচ্ছেন এবং মাঝে-মধ্যে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু মেয়েটির তাতে কোন বিকার নেই। তার চোখ দিয়ে শুধু পানিই পড়ছে। কেএফসির ঠিক আরেক প্রান্তে সম্ভবত মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা বসেছিলেন। ভদ্রমহিলা মেয়েটিকে একই জায়গায় বসিয়ে রেখে বেশ কয়েকবার সেই প্রান্তে গেলেন। সেখানে আরও কিছু মানুষ ছিল। দূর থেকে ঠিক অনুমান করা যাচ্ছিল না। তবে একটু পরেই হঠাৎ দেখি কেএফসির প্রধান নির্বাহী আক্কু চৌধুরী সোজা দোতলায় উঠে ওই কর্নারে চলে গেলেন। তিনি চারপাশটা ভাল করে দেখলেন। বেশ কয়েকবার দূর থেকে ওই মেয়েটিকে দেখলেন। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, আক্কু চৌধুরীকে কেউ বিষয়টি জানিয়েছে, নয়ত তিনি সিসি ক্যামেরায় দেখে ওপরে চলে এসেছেন। আক্কু ভাই যখন নেমে যাচ্ছিলেন তখন আমি চেয়ার ছেড়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যবসা কেমন যাচ্ছে? তিনি মাথা নেড়ে বললেন, ভাল না। সিলেট এবং বগুড়ায় কেএফসি খুলেছিলেন। তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ এখনও প্রশ্ন তোলে, কেএফসির ফেঞ্চচাইজ আছে কি-না! আমি তার সঙ্গে আরও টুকটাক কিছু বিষয়ে কথা বললাম। খেয়াল করলাম, তিনিও ওই মেয়েটির দিকে বার বার তাকাচ্ছেন। একটু পর অপর প্রান্ত থেকে একজন পুরুষ এসে বসলেন মেয়েটির সামনে। ভদ্রমহিলার জায়গায় এবার তিনি বসলেন। খেয়াল করলাম তিনিও মেয়েটিকে কী যেন বোঝানোর চেষ্টা করছেন। একটা সময়ে মেয়েটি নিজের চেয়ার থেকে উঠে সামনে বসা লোকটির পা ধরে মাফ চাইতে শুরু করল। আমি প্রথমে ভাবলাম, পা ছুঁয়ে সালাম করছে। পরে দেখি, না। সে পা ধরে বসেই আছে। লোকটি মেয়েটিকে ধরে চেয়ারে পর্যন্ত বসিয়ে দিচ্ছে না। লোকটি যে মেয়েটির বাবা নয় তা আমি নিশ্চিত। হয়ত খালু, নয়ত অন্য কেউ হবেন। কিছুক্ষণ পর তিনি উঠে সেই পরিবারের দিকে চলে যান। মেয়েটি উঠে আবার নিজের চেয়ারে বসে; তার চোখ সেই মাটির দিকে আটকানো। চোখ দিয়ে পানি তো পড়ছেই। আমি বাচ্চাদের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। বাচ্চা এই মেয়েটির কষ্ট দেখে আমার ভেতরে কান্না পেয়ে গেল। একবার মনে হলো উঠে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি কী অন্যায় করেছে মেয়েটি, যে কারণে এমন একটি পাবলিক প্লেসে তাকে এভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে? ভেতরে ভেতরে রাগ বাড়তে থাকে। অনেক কষ্টে সেই রাগ পোষণ করে নিচে নেমে আসি, যেন মেয়েটির কান্না আমাকে আর দেখতে না হয়। (সঙ্গে নিজের কান্নাটুকুও লুকাতে পারি!) দুই. এই অদ্ভুত ঘটনাটি দেখার পর আমার মাথা থেকে বিষয়টি কিছুতেই নামছে না। হাজার রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, যার উত্তর আমার জানা নেই। আচ্ছা, একটি কিশোরী কি এমন অপরাধ করতে পারে? আমি আশঙ্কা করছি, মেয়েটি হয়ত কোন ছেলেকে পছন্দ করে ফেলেছে এবং তার সঙ্গে প্রেমঘটিত সম্পর্ক হয়েছে, যা পরিবারটি হয়ত মেনে নিতে পারছে না। তখন হয়ত তার পরিবার তাদের অন্য আত্মীয়স্বজনকে মেয়েটিকে বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছে। মেয়েটি যদি অন্য কোন অপরাধ করে থাকে (যেমন চুরি করা, মিথ্যা বলা, কাউকে মারা ইত্যাদি) তাহলে তার মা-বাবাই হয়ত সেটাকে সামলাতে পারতেন। এমনও কি হতে পারেÑ মেয়েটির মা-বাবাই নেই; অন্যের কাছে বড় হচ্ছে! সেক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যরা এভাবে একটি সমাধানের চেষ্টা করছেন? আমি এটাকে এক্সট্রিম কেস ধরে নিচ্ছি। ধরে নিচ্ছি মেয়েটি একটি বখাটে ছেলের প্রেমে পড়েছে। এখান থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছে পরিবার এবং তাকে বাসায় হয়ত বোঝানো যাচ্ছে না; কেএফসিতে এনে ব্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে। আমি অবাক হব না, যদি তারা মেয়েটির গায়ে হাতও তুলে থাকেন। কিন্তু মাথায় যে প্রশ্নটি বার বার এসে ধাক্কা খাচ্ছে তা হলোÑ এটা যদি মেয়ে না হয়ে ঠিক ছেলে হতো তাহলে কি তাকে এভাবে পাবলিক প্লেসে এনে এভাবে শাসন করা যেত? কিংবা তারা পারতেন এভাবে অপমান করতে? আমি নিশ্চিত, একটি ছেলের বেলায় যদি একই ট্রিটমেন্ট দেয়া হতো তাহলে চিত্র ভিন্ন হতো। ছেলেটি হয়ত এতক্ষণ এখানে থাকতই না। কিংবা আরও শক্ত ধরনের ছেলে হলে চড়-ঘুষি লাগিয়ে পালিয়ে যেত, নয়ত বন্ধু-বান্ধব এনে মারপিট লাগিয়ে বসত। আজকালকার ছেলেরা এরকমটাই করত। কিন্তু মেয়েটিকে আমরা সবার সামনে লজ্জায় ফেলতে একটুও কার্পণ্য করছি না। এর কারণ কি এই যে, মেয়েটি শারীরিকভাবে দুর্বল? একমাত্র এই একটি কারণেই কি মেয়েটি প্রতিবাদ করে উঠতে পারছে না? কেন সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠতে পারছে না, তোমরা যা করছ তা ঠিক নয়! কেন সে চিৎকার করে বলতে পারছে না, তোমরা আমাকে এভাবে অপমান করতে পার না! কেন সে টেবিল চাপড়ে বলতে পারছে না, শাট-আপ! এনাফ ইজ এনাফ! কেন সে টেবিলে রাখা প্লেটটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলতে পারছে না, তোমরা আর কখনও আমার সামনে আসবে না! কেন সে নিজের মেরুদ- শক্ত করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বলতে পারছে না, বাসায় চলো, যা কথা ওখানেই হবে। কেন সে পারছে না এটা? কেন? কারণ কি এই যে, তার গায়ে শক্তি ছেলেদের চেয়ে কম! শুধু কি এটাই কারণ? নাকি আরও কিছু আছে? একটি মেয়ে কেন নিজের মতো প্রতিবাদী হতে পারে না এটা আমি জানি না! আমি সত্যিই এটা জানি না! তিন. আমরা আমাদের মেয়েদের হাজার রকমের প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়ে বড় করি। ছোটবেলা থেকেই কোটি কোটি ‘না’-এর মধ্য দিয়ে তাকে বড় হতে হয়। আমাদের সমাজব্যবস্থা এমন যে, আমরা চাইলেও মেয়েদের ছেলেদের মতো একই সুবিধা দিতে পারি না। এর মূল কারণ হয়ত নিরাপত্তা। অভিভাবকরা তাদের ছেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে যতটা না ভাবেন তার থেকে অনেক বেশি উৎকণ্ঠায় থাকেন তাদের মেয়ে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে। তাদের ওপর নেমে আসে হাজার রকমের বাধা। ফলে তাদের ব্রেন হয়ে যায় ভিন্ন রকমের, যা একটি ছেলের ক্ষেত্রে অন্যরকম। মেয়েরা মেধার দিক থেকে একই রকম হলেও এই বেড়ে ওঠার কারণে তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। সে আর কখনই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। ভয় পায়। আর যারা পারে তাদের নিজেদের ভেতরের শক্তি এতই প্রবল যে, ছোটবেলার সেই বাধাকে সে ধুয়েমুছে সামনে চলে যায়। তারা কেবলই ব্যতিক্রম, সাধারণ নয়। মেয়েদের গায়ে শক্তি কম বলে পুরুষরা তাদের ওপর যেভাবে চড়াও হয় তাতে মেয়েরা তাদের আত্মসম্মানটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। ছেলেদের শরীরে বাড়তি শক্তি আছে বলে তারা সবকিছুকেই সেই শক্তি দিয়েই প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু এমনটা যদি হতো- প্রতিটি মেয়েকে একটা করে পিস্তল দিয়ে দেয়া হলো। তখন কি পরিস্থিতি পাল্টে যেত? আমি সিরিয়াসলি ভাবছি, আমার মেয়েকে আমি অস্ত্রের লাইসেন্স এবং পিস্তল কিনে দিব। তাকে অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং দিব। তখন কি তার একই রকম ভয়টি থাকবে? তখন কি সে কাউকে ভয় পেয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবে? তখন কেউ তাকে অপমান করতে এলে তাকে সে ছেড়ে দেবে? তখন কি তার ফুপু কিংবা খালু এসে কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে এভাবে অপমান করার সাহস পাবে? কোন ছেলে তার ওড়না ধরে টান দেয়ার ক্ষমতা দেখাবে? কোন কাপুরুষ ওর গায়ে হাত তোলার দুঃসাহস দেখাবে? আমি নিশ্চিত, দেখাবে না। পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তাতে মেয়েরা মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার পাবে। সে আত্মসম্মান নিয়ে এই গ্রহে জীবনযাপন করবে। চার. আমি বলছি না যে, মেয়েদের শাসন করা যাবে না, তাদের সঠিক শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না; কিংবা কোন পন্থার আশ্রয় নেয়া যাবে না। আমি শুধু বলতে চাইছি, তাদের সঙ্গে এমন অপমানসুলভ ব্যবহার করা যাবে না, যাতে তার আত্মসম্মানটুকু নষ্ট হয়ে যায়। সে যে একজন মানুষ, তার নিজের যে একটু সম্মানবোধ রয়েছে, এটুকু যেন সে হারিয়ে না ফেলে। আমরা পরিবারে মেয়েশিশুদের সঙ্গে কি সম্মানসূচক আচরণ করি? কখনও কি একটিবারের জন্যও ভাবি যে, মেয়েটিরও আত্মসম্মান রয়েছে? আমি রাস্তাঘাটে প্রচুর দেখেছি, বাচ্চাগুলোকে মা-বাবারা চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে দোকান থেকে দোকানে নিয়ে যাচ্ছেন। জনসমক্ষেই তাদের ইচ্ছেমতো অপমান করা হচ্ছে। এই ছেলেমেয়েগুলো কি ভবিষ্যতে অন্যকে সম্মান করতে শেখে কিংবা কেউ তাকে সম্মান দেখালে তার মর্ম কি সে বুঝতে পারে? ছোটবেলা থেকেই যদি আমরা তাদের বুঝতে না দেই তাদের একটি সম্মানবোধ রয়েছে, তাহলে বড় হয়ে সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। আর যখন সেটা বুঝতে পারে ততদিনে তার জীবন লতায়-পাতায় জড়িয়ে প্রায় শেষ। মেয়েদের জীবন সারাজীবনের জন্য একটি পার্শ্বচরিত্রই হয়ে যায়, সেটা আর কখনই নিজের জীবন হয়ে ওঠে না। এই পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন রকমের ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিছু কিছু ক্ষমতা এবং দক্ষতা সে পরবর্তীতে অর্জন করে নেয়। সেটা মেয়েদের বেলায় যেমন সত্য, ছেলেদের বেলাতেও তেমনই সত্য। তবে প্রকৃতি ছেলে এবং মেয়েদের বিশেষ কিছু ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে। যেমন মেয়েরা যেভাবে গর্ভধারণ করে এবং একটি শিশুকে লালন-পালন করে, একজন ছেলে সেটা পারবে না। (একটা সময়ে গিয়ে হয়ত পারতে পারে; কিন্তু গত কয়েক মিলিয়ন বছরে সেটা দেখা যায়নি।) আবার একজন পুরুষ যেভাবে তার শক্তি দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে, সেটা হয়ত নারীদের জন্য সহজ হবে না। একজন আরেকজনের সম্পূরক। কিন্তু আমি খাবার আনি বলে, আমার গায়ে শক্তি বেশি আছে বলে আমি সকল সম্মানের ভাগিদার, আর একজন নারী তার কোন সম্মানবোধ থাকবে না- সেটা হতে পারে না। এই গ্রহে সেই জাতি তত বেশি সভ্য, যেই সমাজে নারীরা যত বেশি সম্মানিত। একটা সময় ছিল এই গ্রহেই নিজের সদ্যজাত মেয়েকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে মেরে ফেলত পুরুষ। আমরা এখন এটা শুনলে ছি ছি করি। কিন্তু আমাদের পথচলা এখনও শেষ হয়নি। আমাদের সমাজে নারীরা নিরাপদ নয়, সম্মানিত নয়। আমরা বেশিরভাগ পুরুষ মনে করি, নারীকে আমরা কিনে নিয়েছি। মুখে সেটা সরাসরি বলতে না পারলেও কাজকর্মে আমরা সেটাই প্রমাণ করি নিত্যদিন। কিন্তু যতদিন না আমরা সেই সম্মানের জায়গাটুকু তৈরি করে দিচ্ছি, ততদিন আমরা একটা হীনমন্য জাতিতেই থেকে যাব। পরিশেষে সকল বাবার জন্য বলছি- আপনার মেয়েকে ভালবাসার পাশাপাশি তার আত্মসম্মানবোধ তৈরি করতে সহায়তা করুন। তার সঙ্গে সম্মানপূর্বক আচরণ করুন, তাহলেই সে বুঝতে পারবে কোন্্টি সম্মানজনক আর কোন্টি অসম্মানজনক। তাকে প্রতিবাদ করতে শেখান। তাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষ হয়ে বাঁচার মতো পরিবেশ দিন। মনে রাখবেন, এটা আর কেউ করে দেবে না। ছোট ছোট শিশুদের বাবারা যেদিন এই স্পেসটুকু তৈরি করে দিতে পারবে, সেই পরিবেশের ভেতর দিয়ে যে মেয়েশিশুগুলো বেড়ে উঠবে, সেই জেনারেশনটা ভিন্ন হবে। আমরা যদি ওদের সম্মান করি, তখন ছেলেরাও তাদের সম্মান দেখাবে। তার জন্য আমাদের আরও কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে। তবে কাজটা শুরু হোক এখন থেকেই। আমাদের সবার বাচ্চাগুলো বড় হোক খুব সুন্দর একটা পরিবেশে- মায়া, মমতায়, ভালবাসায় এবং সম্মানের সঙ্গে। পশুদের আত্মসম্মান থাকে কিনা জানি না, তবে মানুষের থাকে। এই পৃথিবীতে যার আত্মসম্মান নেই তার আসলে আর কিছুই নেই! পুনশ্চ : আমার এতটা জীবনে অনেক নারীর প্রতি যথার্থ সম্মান আমি নিজেও দেখাইনি। আমার বেড়ে ওঠার পথে আমাকে কেউ সেটা শিখিয়ে দেয়নি। আমার অজ্ঞানতার জন্য আমি যাদের অসম্মান করেছি তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে এখন আমি চেষ্টা করি মানুষকে যথেষ্ট সম্মান করার, সেটা নারী কিংবা পুরুষ যেই হোক। তার জন্য বাড়তি কিছু ঝামেলায় যে পড়তে হয় না। তা নয়। ইটস ওকে! ৯ অক্টোবর ২০১৫ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সম্পাদক, প্রিয়.কম ys@pri“o.com
×