ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

না পড়লে পাল্টে দেয়া হয় ফল

কোচিং সেন্টারে জিম্মি কলাপাড়ায় শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ অক্টোবর ২০১৫

কোচিং সেন্টারে জিম্মি কলাপাড়ায় শিক্ষার্থী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৯ অক্টোবর ॥ কলাপাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার বোঝা এখন আর বইতে পারছেন না। সারা বছর প্রাইভেট কিংবা কোচিং নির্ভরতার কারণে এমন বেহাল দশায় পড়েছেন এসব পরিবার। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে এখন তারা পড়েছেন চরম দুরাবস্থায়। কতিপয় শিক্ষকদের অতিমাত্রার শিক্ষাবাণিজ্যের মানসিকতার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় এখন আর স্কুল নির্ভরতা নেই। স্কুলের কতিপয় শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে। তাদের নিয়ন্ত্রিত কিংবা মালিকানাধীন কোচিং সেন্টারে পড়তে হবেÑ নইলে পরীক্ষার ফলাফল পর্যন্ত উল্টে যায়। চিহ্নিত এক শ্রেণীর শিক্ষক এমনভাবে এখন কলাপাড়ার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এমন দশায় পড়েছে। আর অভিভাবকরা আছেন জিম্মি দশায়। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পর্যন্ত ওইসব নির্দেশ না মানলে মানসিকভাবে হয়রানি করার এন্তার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট কিংবা তাদের কোচিং সেন্টারে পড়তে না গেলে পরীক্ষার ফল পাল্টে দেয়া হয়। আর যারা প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে পড়ছে তারা পরীক্ষায় ভাল না করলেও ফলাফল ভাল করে দেয়া হয়। খাতা পর্যন্ত পরীক্ষার পরে পাল্টে দেয়া হয়। ক্লাসে ক্লাসে হুমকি দেয়া হয় নিচের শাখায় নামিয়ে দেয়া হবে প্রাইভেট ও কোচিং না করলে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কলাপাড়ায় মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২৮ হাজার ৬৫ জন। এর শতকরা ৬০ ভাগ প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে আটকে পড়েছে। গড়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিন শ’ থেকে এক/দেড় হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। যার মধ্যে ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ব্যয় হচ্ছে তিন থেকে দশ হাজার টাকা। অবস্থা এমন হয়েছে যে মধ্য ও নি¤œবিত্ত পরিবারের কাছে তার সন্তানদের লেখাপড়া এখন কঠিন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আর প্রাইভেট কিংবা কোচিং নির্ভরতার কারণে ক্লাসের পাঠদান এখন খুব নি¤œগামী। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ক্লাসের উপস্থিতি বাড়াতে কলাপাড়া পৌর শহরের মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর দৈনিক কুড়ি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অসংখ্য অভিভাবক জানান, লেখাপড়া এখন প্রাইভেট কিংবা কোচিং নির্ভর হয়ে গেছে। কলাপাড়া পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন ফ্রি-স্টাইলে চলছে কোচিং ও প্রাইভেট শিক্ষা বাণিজ্য। শহরের প্রত্যেকটি সড়কে দু’একটি কোচিং সেন্টার চোখে পড়বে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের কোচিং সেন্টারগুলো বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জমজমাট উপস্থিতি। শিক্ষকদেরও সেখানে সরব উপস্থিতি রয়েছে। তাদের পাঠদান করানোর আন্তরিকতাও শতভাগ। যেন নিজেকে উজাড় করে পাঠদান করছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদ্বয় জানান, এসব কিছুই অনিয়ম। যা রোধে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানালেন তারা।
×