ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থী ও জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১০ অক্টোবর ২০১৫

শরণার্থী ও জাতিসংঘ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম বিশ্বে শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বোমা-বারুদের গন্ধ যত তীব্র হচ্ছে, শরণার্থী মানুষের সংখ্যাও তত বাড়ছে। উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও এ অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। মানুষের ইতিহাসে অভিবাসী হওয়ার বিষয়টি প্রাচীনকালের। যাযাবর জীবন অভিবাসনের সন্ধানে ঘুরে বেড়াত দেশ হতে দেশান্তরে। মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দলে দলে মানুষ শত শত বছর ধরে ভারতবর্ষে এসেছে এবং বসবাস করেছে। খাদ্য ও নিরাপদ আবাসভূমির জন্য সেকালের মানুষরা দেশান্তর হলেও একালের চিত্রটা ভিন্ন। এখন মানুষ বাধ্য হয়ে ভিটেমাটি ও দেশত্যাগ করছে। আর এই প্রক্রিয়ায় তারা মুখোমুখি হচ্ছে মানবেতর জীবন এবং অবর্ণনীয় বিপর্যয়ের। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়ের জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছিন্নমূল ভিক্ষুকের মতো আশ্রয় প্রার্থী হচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, শরণার্থী হচ্ছে সেইজন, যে ধর্ম, গোষ্ঠী বা শ্রেণীগত বৈষম্য কিংবা কোন মতপার্থক্যের কারণে ভীত হয়ে নিজের ঘর বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়Ñ তাহলে সে হচ্ছে শরণার্থী। অবশ্য প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষও জাতিসংঘের দৃষ্টিতে শরণার্থী। জাতিসংঘের নীতি হচ্ছে শরণার্থী পুনর্বাসন করা এবং তাদের স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফিরতে উৎসাহিত করা। তবে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আত্মীকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার বিষয়েও বিবেচনা করা। সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অগণিত সংখ্যক মানুষ শরণার্থী হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে একমাত্র ইউরোপেই ৪০ মিলিয়নের অধিক মানুষ শরণার্থী ছিল। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সে সময় ৭ মিলিয়ন লোক নিজ দেশে ফিরে গেলেও ১ মিলিয়ন লোক মাতৃভূমিতে ফিরে যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য দেশগুলোতে আজ অস্ত্রের ঝঙ্কার আর বারুদের গন্ধ শুধু। এদের যুদ্ধ যুদ্ধ নামক শত্রু শত্রু খেলায় মাতিয়ে রেখেছে বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো। তাদের হিংস্রতার মাত্রায় অনেক দেশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। সম্পদশালী দেশগুলোতে সাধারণের বসবাস কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই তারা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আশ্রয় দিতে চায় না কেউ। বিমুখ আশ্রয়দাতা দেশ হতে বিতাড়িত হচ্ছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রবেশ করতে গিয়ে, সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে, তারা মারা যাচ্ছেÑ যে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো বাহিনী। শক্তিধর দেশগুলোর সম্মতি ছিল বলেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ল-ভ- কা- ঘটে আসছে বহু বছর ধরে। দেশে দেশে তাই অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে পরাশক্তি ও সহযোগীরা। তাদের কারণেই শরণার্থীতে পরিণত হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয়ের সন্ধানে অনেকে জীবনবাজি রেখে ছুটে চলছে। জাতিসংঘ তাদের জন্য কিছুই করছে না। কবির ভাষায় বলা যায়Ñ ‘মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না।’ সত্যি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের যে সংস্থাটি রয়েছে সেই ইউএনসিএইচআর বাকশিল্প প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই যেন করছে না। নামমাত্র শরণার্থীকে ইউরোপ আশ্রয় দিতে চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে কোটা নির্ধারণ করছে। সে অনুযায়ী শরণার্থী বণ্টনে সব দেশ রাজি নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রও প্রায় নির্বিকার অথচ তাদের কারণেই শরণার্থীর সৃষ্টি। শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘকে এগিয়ে আসতে হবে।
×