ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

ষড়যন্ত্রের শুরু জিয়াউর রহমান থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১০ অক্টোবর ২০১৫

ষড়যন্ত্রের শুরু জিয়াউর রহমান থেকে

প্রথমেই বলে নিচ্ছি, গেল ক’দিনে আন্তর্জাতিক সংবাদ হওয়ার মতো ৪টি ঘটনা ঘটেছে। মূলত আন্তর্জাতিক সংবাদ বানানোর জন্যই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। এর ওপর লেখার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু পত্রিকার পাতা উল্টাতে থাকলাম। তাতে যে লেখাটি আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা ৫ অক্টোবর ২০১৫ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত জাফর ওয়াজেদ-এর ‘জ্বলে ওঠে আগুন বজ্র হেন ভারি’ শিরোনামের কলামটি। জাফর ওয়াজেদ তার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ থেকে একটি লাইন নিয়ে শিরোনামটি দিয়েছেন। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের তৎপরতার ওপর কলামে বিস্তারিত আলোচনা ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ রয়েছে। জাফর যখন বলেন, “বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিকাশে বা গোষ্ঠীর উত্থানের আশঙ্কার পেছনে ধর্মীয় উগ্রতার চেয়ে জোটের (বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জোট) ক্ষমতা দখলই মূল কারণ। ক্ষমতা দখল মানেই যুদ্ধাপরাধীদের কারামুক্ত করা, খালেদার মামলাগুলোর রেহাই প্রাপ্তি এবং জঙ্গীদের কাঁধে ভর করে মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু নস্যাত, ব্যাপকহারে আওয়ামী লীগার নিধন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোসহ অরাজকতার এক নরক গুলজারের ব্যবস্থা করতে চায়। এখন বেগম জিয়া লন্ডনে অবস্থান করে মাতা-পুত্র মিলে নয়া ফন্দিফিকির নিশ্চয় বের করছেন।” কথাগুলো আমরা অনেকেই বহুবার লিখেছি। এগুলো বাংলাদেশের নাগরিকদের মনের কথা। এর ওপর লিখেছেন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, স্বদেশ রায়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, শাহরিয়ার কবির, আবেদ খান, মমতাজ লতিফ, হারুন হাবিবসহ অনেকে। আমি নিজেও বহু কলাম লিখেছি। তারপরও নিয়মিত লেখা দরকার বলে আমি মনে করি। কারণ জঙ্গী লালনকারী জোট (হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি) দেশে ও বিদেশে প্রতিনিয়ত চক্রান্ত করে চলেছে। সঙ্গে রয়েছে তাদের ছদ্মবেশী সহযোগীÑ কেউ রাজনৈতিক মুখোশ পরা নেতা-কর্মী, কেউ ভদ্রবেশী নষ্ট কলামিস্ট, কেউ সুশীল নামধারী মতলববাজ, কেউ বিশিষ্ট নাগরিকের ছদ্মাবরণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের ধারার বিপরীতে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী পচনশীল ধারায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রকারী। তারা অর্থে-বিত্তে-জনে-প্রশাসনে সক্রিয়। আমাদেরও তাই অর্থাৎ যারা রাষ্ট্র ভাষা বাংলার আন্দোলন থেকে শুরু করে আটান্নর আইয়ুবের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা+১১ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলন, ’৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ও দেখেছেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বচক্ষে দেখেছেন বা দূর থেকে এবং সর্বোপরি দুনিয়া কাঁপানো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং শহীদ পরিবার, সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সত্যি ঘটনা তুলে ধরার তাগিদ এসেছে আজ। যারা লেখেন না বা লিখতে পারেন না তাদেরও শহর-বন্দর, গ্রাম-বাংলার আড্ডায়-রেস্তরাঁয় বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতীদের মিথ্যা প্রচারণার জবাব দেয়ার এবং বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক কর্মীদের মাল বানানোর ধান্দা (যারা জড়িত) পরিহার করে যার যার অবস্থান থেকে শির উঁচু করে দাঁড়াবার তাগিদ এখন দেশ ও নাগরিকদের, ধরিত্রীর। যারা নিরপেক্ষতার নামে পথের পাশ দিয়ে হাঁটেন তারা মূলত জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। নিরপেক্ষ মানে নিকৃষ্ট পক্ষ। তারা পরাজিত পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় এজেন্ট রাজাকার, আলবদর এবং মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী-আলী আহসান মুজাহিদের পক্ষ নিচ্ছেন। তরুণ সমাজ (রাজাকার-আলবদরের সন্তান ও শিবির ব্যতীত) দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, এবারের মুক্তিযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ যুদ্ধে যারা অংশ নেবেন না তারা দ্বিতীয়বার রাজাকার-আলবদরের খাতায় নাম লেখাবেন, সন্তানদেরও একই পথের নব্য পথিক বানাবেন। মনে রাখতে হবে জঙ্গীবাদ দেশ, সমাজ, ধর্মীয় জনগোষ্ঠী সব সম্প্রদায়ের কাছেই ধিক্কৃত, ঘৃণিত এবং দেশদ্রোহী। শুরুতেই বলেছি, আন্তর্জাতিক সংবাদ হওয়ার মতো ৪টি ঘটনা ঘটে গেল কয়েকদিনের মধ্যেÑ (১) ঢাকায় এক ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা, (২) রংপুরে একজন জাপানী নাগরিক হত্যা, (৩) নিরাপত্তার অজুহাত তুলে প্রথমে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশে না আসার ঘোষণা এবং এর পরই (৪) দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলা ক্রিকেট টিমের না আসার ঘোষণা একই অজুহাত তুলে। কখন এ ঘটনাগুলো ঘটল: যখন শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ফলাফল মোকাবেলায় অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ২০১৫ ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ বা ‘ধরিত্রীর আদরের কন্যা’ অভিধা গ্রহণ করছিলেন এবং আইসিটিতেও তুলনাহীন সাফল্যের জন্য আইসিটি পুরস্কার ২০১৫ গ্রহণে জাতিসংঘ সদর দফতরে রয়েছেন। খালেদা জিয়াও লন্ডন সফর করছেন এবং দুর্নীতির দায়ে ফেরারি আসামি লন্ডনে আইনের ভাষায় পলাতক পুত্র তারেক রহমানকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির ও পলাতক আলবদর আল শামসদের সমাবেশ করে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনাবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, নিউইয়র্কে শেখ হাসিনার অবস্থানকালীন হোটেলের সামনে বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভের অগ্রভাগে নোবেল লরেট প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূসকেও নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। তার পাশে আরেকজনকে দেখা গেছে। তার পরিচয়ও জানা গেছে, তিনি তারেকের সম্বন্ধী। আমি মনে করি, বিদেশী নাগরিক হত্যা, বিদেশী ক্রিকেট টিমের না আসা, খালেদা জিয়ার লন্ডনে অবস্থান বা প্রফেসর ইউনূসের বিএনপির বিক্ষোভে অংশগ্রহণ, এসব ঘটনার সঙ্গে আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানিসহ কিছু দেশের দূতাবাসে রেড এ্যালার্ট জারি (অবশ্য পরে আবার উইথড্র করেছে) একই সূত্রে গাঁথা। এমন সময় ঘটনাগুলো ঘটল যখন একদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতার পর্যায়ে উঠে এলেন, আরেকদিকে দুই প্রধান যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি কারাগারে প্রেরণ করা হলো। এ দেশের নাশকতা ও নাকশকতার গডফাদার জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, যারা ঘটনাগুলো ঘটাল তারা কখনও বাংলাদেশ এগিয়ে যাক চায় না, তারা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত, তাই বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পেছনে ফেলে রাখতে পাকিস্তানী দালালি হালাল করতে চায় এবং বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক এটা তাদের গা জ্বালা। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ এগিয়ে যায় বিএনপি পেছনে পড়ে থাকে, এটা তারা সহ্য করে কি করে? এসব ঘটনা তথ্য প্রায় সবারই জানা। তবু লিখছি এ জন্য যে, মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া। কথায় আছে বাঙালীর ভুলো মন, সহজেই ভুলে যায়। তাই জানা ঘটনাগুলো আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা যদি ভুলে না গিয়ে থাকি তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে মিলিটারি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে মিলিটারি এরশাদ ও জিয়াপতœী খালেদা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। মিলিটারি ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জিয়া যা-যা করলেন : ১. প্রথমেই সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রটি পাল্টে দিলেন। আবার পাকিস্তানের আদলে সাম্প্রদায়িক ধারা ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত শুরু করলেন। ২. নির্দেশ দিলেন রেডিও- টেলিভিশনে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলা যাবে না, ‘জাতির পিতা’ বলা যাবে না, ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দেয়া যাবে না। ৩. দালাল আইন বাতিল করে দ-প্রাপ্ত এবং চার্জশীটভুক্ত বিচারাধীন ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দিলেন। ৪. নাগরিকত্ব বাতিল প্রধান যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনলেন। ৫. বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ জামায়াত-মুসলিম লীগসহ ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবার রাজনীতি করার অনুমতি দিলেন। ৬. নিষিদ্ধ মদ, জুয়া, হাউজির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাদের আবার শুঁড়িখানা চালানোর লাইসেন্স দিলেন। ৭. শাহ আজিজুর রহমানের মতো রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানালেন। ৮. আবদুল আলিমের মতো রাজাকারকে মন্ত্রিসভার সদস্য বানালেন। ৯. প্রথমে জোট ও পরে দল করার নামে ডিজিএফআইকে ব্যবহার করলেন। ১০. বললেন, রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি সঙ্কটাপন্ন করে তুলবেন। করলেনও তাই। বাংলাদেশে এই প্রথম রাজনৈতিক নেতাকর্মী কেনাবেচার সংস্কৃতি চালু হলো মানি ইজ নো প্রোব্লেম বলে। ১১. বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করা যাবে না বলে দায়মুক্তি আইন করে হত্যাকা-কে উৎসাহিত করলেন। দেশের চলমান আইনের শাসনের গতিকে বাধাগ্রস্ত করলেন। ১২. বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করলেন। ১৩. মিলিটারি জিয়া ক্যু’দেতার বিচারের নামে গোপন ট্রায়ালের মাধ্যমে শত শত জোয়ান ও কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলালেন। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানী এয়ার লাইন্সের প্লেন হাইজ্যাক করে তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণের পর ইত্তেফাকের রিপোর্টার হিসেবে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে সেই বীভৎসতা দেখেছি। এর পর দেখেছি নানা সময়ে কিভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা হয়েছিল। ১৪. মুক্তিযুদ্ধকালীন পরীক্ষিত বন্ধুদের বৈরী করে সে সময়ের পাকিস্তানের সহযোগী পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বন্ধু বানানোর পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করলেন। আমাদের বন্ধুহীন বানালেন। এরপর এলেন মিলিটারি এরশাদ। তিনি সবচেয়ে গর্হিত কাজটি করেন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাজনৈতিক দল করতে এবং পার্লামেন্টে বসতে দিয়ে। তার সময়ও রাজাকার মন্ত্রী হয়েছে। মিলিটারি জিয়ার মতো মিলিটারি এরশাদও সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক নীতির ওপর কাঁচি চালান। জিয়াপতœী খালেদা জিয়ার আমলেও যুদ্ধাপরাধী বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী দুই আলবদর মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দেন। খালেদা জিয়া সাকা চৌধুরীর মতো পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এজেন্টকে তার উপদেষ্টা, স্থায়ী কমিটির সদস্য বানান। যখন সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় ঘনিয়ে এলো ঠিক তখনই ঘটনাগুলো ঘটানো হলো। বস্তুত খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে চরম হতাশায় ভুগছেন। তার ক্ষমতা চাই-ই, নইলে যে লন্ডনে পলাতক তারেক ও তার পরিবার এবং মালয়েশিয়া প্রবাসী প্রয়াত কোকোর পরিবারকে দেশে আনতে পারছেন না এবং যে সব দুর্নীতির মামলা চলছে তার একটিও শেষ হবে না। বরং সাজাও হয়ে যেতে পারে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আজ যে উচ্চতায় উঠে এসেছেন তাতে নির্বাচন করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না তা বুঝতে পেরে খালেদা নাশকতা সৃষ্টিকারী জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে জোট করেছেন। তার ধারণা জামায়াত-শিবিরের অস্ত্র আছে, অস্ত্র-গোলাবারুদ কেনার অর্থ আছে, নাশকতা চালানোর মতো দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণও আছে। অতএব, আর কাউকে দরকার নেই। জামায়াত-শিবির হলেই চলবে। তারেক তো প্রথম থেকেই ভাই ভাই। এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ছাত্রদল-শিবির একই মায়ের পেটের দুই সহোদর।’ শিবিরের মধ্যে আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং পাকিস্তানে জঙ্গী ট্রেনিংপ্রাপ্তও রয়েছে। বাংলাদেশে আইএস বা বোকো হারাম বা তালেবানদের কোন ঘাঁটি নেই এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য হলো হিযবুল মুজাহিদিন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হামজা ব্রিগেড জাতীয় সশস্ত্র জঙ্গী গ্রুপ রয়েছে, যারা যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের নাশকতা করার ক্ষমতা রাখে। আমরা জেনেছি কিভাবে প্রকাশ্য রাজপথে পুলিশ পিটিয়েছে, কিভাবে একটানা ৯২দিন (২০১৫) পেট্রোলবোমার ত্রাস চালিয়েছে খোদ রাজধানী ঢাকায়, কিভাবে হেফাজতীরা শাপলা চত্বরে সমাবেশের নামে মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম-বিজয় নগর প্রভৃতি এলাকা জ্বালিয়ে দিয়েছিল, তাদের পেট্রোলবোমার বিস্ফোরণে পবিত্র কোরান এবং হাদিসে রসুল (সা) পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়েছিল। বস্তুত জামায়াত-হেফাজতীরা ঐক্যবদ্ধ। খালেদা তাদের গডমাদার। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে গডমাদার চলবে না। হতে হবে ধরিত্রীর আদরের কন্যা বা চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ। আজ বাংলাদেশে একটা স্ট্রং মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছে। তবে এই মধ্যবিত্তের মধ্যে শিক্ষিত অংশের আধিপত্য বেশি বা বাম বিভ্রান্তি প্রকট। ওদের কোন জনপ্রিয়তা নেই। এতিম। এদের নেতৃত্ব দিতে হলে শেখ হাসিনাকে দরকার; যার লেখাপড়া আছে, ঐতিহ্য আছে, সাহস আছে, দূরদর্শিতা আছে। খালেদা জিয়ার দুর্ভাগ্য যে, তিনি লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। নিজেকে গড়ে তোলার মতো পরিবেশও ছিল না। তার স্থলাভিষিক্ত যে হবে সেও তারই মতো; না আছে লেখাপড়া, না পেয়েছে পরিবেশ, বরং অল্প বয়সেই দুর্নীতির লেবেল গায়ে লাগিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের এই জায়গাটাতেই সুবিধা, খালেদার দুর্বলতাকে পুঁজি করে একটা পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারলেই হলো। তারপর তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। খালেদা তবুও জিয়াপতœী হিসেবে একটা সময়ে এসে টিকে গেছেন। তারেকের তা নেই। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বসভায় বারাক ওবামার সঙ্গে কো-চেয়ার করেন। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে তার জনপ্রিয়তা শতকরা ৬৭ ভাগ। বাকিটা খালেদাকে দিলে তার ৩৩ ভাগ হয়। আজকের এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকাকে বলব তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাংলাদেশে খেলতে আসবে। আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ায়ও এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয়, আমেরিকায় তো হরহামেশা হচ্ছে। আমাদের দেশে কিলিং হয়েছে। অবশ্যই এর বিচার হবে। সৌদি নাগরিকের কিলিংয়ের বিচার হয়েছে। তাই মতলব না থাকলে খেলার সঙ্গে এ ধরনের ইস্যু তোলার কথা নয়। আজ অস্ট্রেলিয়া বলুন, সাউথ আফ্রিকা বলুন, ইংল্যান্ড বলুন, ভারত, পাকিস্তান বলুন, শ্রীলঙ্কা বলুন, যে যত বড় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নই হোন, আমাদের ছেলে বা মেয়েদের সঙ্গে খেলে যে আনন্দ পাবে এমন আর কোথাও পাবে না। আর যদি অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকা বা অন্য কোন দেশ আমাদের সঙ্গে ক্রিকেট কূটনীতি করতে চায় করতে পারে, কোন লাভ হবে না। বীরের জাতির সঙ্গে পারবে না। বাংলাদেশের জন্ম যেমন দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তেমনি জন্ম থেকে জ্বলে জ্বলে আমরা খাটি হয়েছি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ভেবেছিল বাংলাদেশ আর দাঁড়াতে পারবে না। দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং দিকনির্দেশনায়। ’৭১ এবং ’৭৫-এর খুনীদের বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়েও অনেক খেলা খেলেছে, কোন লাভ হয়নি, এখন জিএসপি নিয়ে খেলছে এবং ক্রিকেট নিয়ে খেলতে চায়। এসব খেলায়ও আমরাই জিতব, কেননা আমরাই চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ। ঢাকা ॥ ৯ অক্টোবর ২০১৫ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×