ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ লক্ষ্যে আজ অস্ট্রেলিয়া থেকে আসছে ৮ সদস্যের জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল

জঙ্গী অর্থায়ন নিয়ে ঢাকায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু রবিবার

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ অক্টোবর ২০১৫

জঙ্গী অর্থায়ন নিয়ে ঢাকায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু রবিবার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে জাতিসংঘের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অস্ট্রেলিয়া থেকে আজ ঢাকায় আসছেন। আগামী ১১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও প্রতিনিধি দলের তরফ থেকে এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক নানা বিষয় তুলে ধরা হবে। পরে বাংলাদেশ ও প্রতিনিধি দলের তরফ থেকে একটি টেকনিক্যাল রিপোর্ট বিনিময় করা হবে। সেখানে নানা দিকনির্দেশনা থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি বিশেষ করে মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে জাতিসংঘ। যেটিকে সংক্ষেপে এফএটিএফ (ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স) বলা হয়। মহাদেশভিত্তিক জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের এর অফিস রয়েছে। এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়টি দেখভাল করতে জাতিসংঘের এপিজি (এশিয়ান প্যাসিফিক গ্রুপ) নামের একটি পৃথক ইউনিট রয়েছে। এপিজির মূল সদর দফতর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। কমপক্ষে ৫ বছর পর এপিজি এশিয়ার জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে থাকে। তারই অংশ হিসেবে এপিজির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি আজ ঢাকায় আসছেন। ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে এপিজি একই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে এপিজি। আগামী রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটির আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান ও পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক ছাড়াও মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ে যেসব তদন্তকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে তাদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকছেন। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), দুর্নীতি দমন কমিশন (এসিসি), সিকিউরিটি এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন, এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, র‌্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকছেন। আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ে বিস্তর খোলামেলা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত এপিজি আন্তর্জাতিক নিয়ম ও মান অনুযায়ী বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং আইন মেনে চলে কিনা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়নে দেশটির অবস্থান সম্পর্কে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে থাকে। আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হয় কিনা সে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তর খোলামেলা আলোচনা হয়। পাচারকৃত টাকা বিদেশে সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদ বা অন্য কোন অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হয় কিনা বা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও এপিজির নিজস্ব অনুসন্ধান বা পর্যবেক্ষণ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়ে থাকে। একইসঙ্গে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা অবৈধ অর্থ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে ব্যবহৃত হয় কিনা বা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মানিলন্ডারিং বা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় সন্ত্রাস বা জঙ্গী অর্থায়নে ব্যয় হয় কিনা বা হয়ে থাকলে তা কিভাবে বন্ধ করা যায়, সে সম্পর্কে বাংলাদেশের নিজস্ব পদ্ধতি ও এপিজির কোন পরামর্শ বা সুপারিশ আছে কিনা সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কমপক্ষে প্রতি ৫ বছর পর বা কোন কোন সময় তারও অধিক সময় পর এপিজি এসব বিষয় নিয়ে জাতিসংঘভুক্ত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈঠক করে থাকে। যেসব দেশের সঙ্গে এপিজি বৈঠক করে থাকে, সেসব দেশ সম্পর্কে এপিজির নিজস্ব একটি মূল্যায়ন থাকে। এপিজির অনুসন্ধানে কোন দেশ যদি আন্তর্জাতিক মানিলন্ডারিং আইন এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ে পজেটিভ মনে করে, সেক্ষেত্রে অনেক সময়ই তারা দেরিতে বৈঠক করে থাকে। যদিও বিষয়টি এপিজির নিজস্ব ব্যাপার। এবারের বৈঠকের আলোচনায় মানিলন্ডারিংয়ের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন স্বাভাবিক কারণেই বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল, সম্প্রতি দুইজন বিদেশী নাগরিক হত্যাকে ধরা হচ্ছে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও এপিজির তরফ থেকে একটি করে মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ে টেকনিক্যাল রিপোর্ট বিনিময় হবে। তবে সেই রিপোর্ট এপিজি ও কোন দেশই কৌশলগত কারণে প্রকাশ করে না। এটি প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রীয় পলিসির অংশ। এপিজিও এমন পলিসির সঙ্গে একমত পোষণ করে থাকে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম দেব প্রসাদ দেবনাথ জনকণ্ঠকে বলেন, এপিজি প্রতিনিধি দলটি শুক্রবার ঢাকায় আসছে। এটি একটি রুটিন বৈঠক। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটির ঢাকায় অবস্থান করার কথা রয়েছে। অবস্থানকালে কয়েকটি বৈঠক হবে। বৈঠকে আন্তর্জাতিক মান ও নিয়মানুয়ায়ী মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এপিজির দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, ধারণা করা হচ্ছে এবারের বৈঠকে মানিলন্ডারিংয়ের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হতে পারে। এর অন্যতম কারণ গত ২৮ সেপ্টেম্বর নাশকতার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর বাতিল, এরপরই গুলশানে ইতালীয় নাগরিক ও রংপুরে জাপানী নাগরিক হত্যা।
×