ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরে পরাজয়ের গ্লানির প্রতিশোধ

পাকি টিভি অনুষ্ঠানে সালমাদের অপমান ঔদ্ধত্যের পরাকাষ্ঠা-

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৯ অক্টোবর ২০১৫

পাকি টিভি অনুষ্ঠানে সালমাদের অপমান ঔদ্ধত্যের পরাকাষ্ঠা-

বিভাষ বাড়ৈ ॥ একাত্তরে গণহত্যা চালিয়েও পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি পাকিস্তান। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে পড়ায় পাকিদের সেই নোংরা চেহারাটা এখনও প্রকাশ পাচ্ছে বার বার। ক্রিকেট খেলায় যাওবা একটু সামনে ছিল তাও আজ ইতিহাস হয়ে গেছে। তাই ঘুরেফিরে পাকিদের কর্মকা-ে বাংলাদেশকে অপমান করে ছোট করে দেখার মানসিকতা থেকেই যাচ্ছে। পাকিদের প্রতিটি কর্মকা- বিশেষত ক্রিকেট খেলা নিয়ে ওরা প্রকাশ করছে বাংলাদেশ বিদ্বেষী মনোভাব। এবার এ অপকর্মে যুক্ত হয়েছে বালাদেশের নারী ক্রিকেট দলকে হারানোর পর টেলিভিশনে উপহাস করার ঘটনা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলকে রীতিমত অপমান করা হয়েছে। এদিকে টেলিভিশনে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলকে নিয়ে ফ্যান ভিডিও প্রকাশ করে উপহাস করার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দাবি উঠেছে আসন্ন বিপিএলে পাকিস্তানীদের বাদ দেয়ার। মাত্র কিছুদিন আগে পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলকে বাংলাওয়াশ করলেও এ নিয়ে বাংলাদেশের বিজয় উল্লাসে কোন ধরনের নীচু মানসিকতার পরিচয় দেয়া হয়নি। কোথাও কোনভাবে পাকিস্তানী দলকে উপহাস করা হয়নি। অথচ সম্প্রতি পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দলের কাছে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের হারের বিষয়টি নিয়ে হাস্যকৌতুকের কমতি নেই পাকিস্তানের মিডিয়ায়। গত বুধবার রাত এগারোটায় এ ধরনের একটি ফান ভিডিও সম্প্রচার করে পাকিস্তানের জিও টিভি। সেখানকার একটা মেজাজহীন অুনষ্ঠানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জার্সি পরিয়ে দুই নারীকে উপস্থিত করা হয় বাংলাদেশ নিয়ে ব্যঙ্গ করার জন্যই। উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিতকে সালমা খাতুন (বাংলাদেশের অধিনায়ক) হিসেবে মঞ্চে ডাকেন। দেখা যায়, ওই সালমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চে আসেন। উপস্থাপক তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, খেলায় তো হার-জিৎ থাকেই। এতে কান্নার কি আছে? ওই নারীশিল্পী উত্তর দেন, শুধু হেরে যাওয়ার জন্য কাঁদছি না। তোমরা আমাদের ডেকে এনে কেন হারালে সেজন্য কাঁদছি। উপস্থাপক এবার উপহাস করে বলেন, আমরা ভিআইপি নিরাপত্তা দিয়ে তোমাদের নিয়ে এসেছি। অথচ তোমাকে দেখলে মনে হয় তোমার সোশ্যাল সিকিউরিটিও নেই। উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত আরেক শিল্পীর সানগ্লাস দেখিয়ে বলেন, তোমার সানগ্লাস দেখলে মনে হয় তুমি বাংলাদেশ থেকে হাওয়াই জাহাজে (বিমান) করে আসোনি। বাইক চালিয়ে এসেছ। এর পর আবার জিজ্ঞ্যেস করেন, তুমি এত ভাল উর্দু বল কেমনে? উত্তরে সালমা খাতুনের অভিনয়কারী শিল্পী বলেন, ফেসবুকে আমার অনেক পাকিস্তানী বন্ধু আছে তো, তাই। এ সময় পাশের পাকিস্তানী ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় অভিনয়কারী শিল্পী দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘উনি ফেসবুকে তার ছবি দেননি’ এ সময় হাততালি দিয়ে হেসে ওঠেন দর্শক। এই ঠাট্টার অর্থ ফেসবুকে ছবি থাকলে পাকিস্তানী ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হতো না। এভাবেই নানান রকম অপমানজনক কথায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানের সেই সেশনটি। কিছুৃদিন আগেও ভারতকে বাংলাদেশ হারানোর পর ওই ম্যাচটি নিয়ে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজেছিল পাকি টিভি চ্যানেল দুনিয়া নিউজ। চ্যানেলটির ক্রিকেট পর্যালোচনামূলক ‘ইয়ে হ্যায় ক্রিকেট দিওয়াঙ্গি’ অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত প্রশ্নে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার সরফরাজ নেওয়াজ আলী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারত ইচ্ছা করে হেরেছে । পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে না দেয়ার জন্যই এমনটি করেছে ভারত। অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা আলিনা ফারুক টেলিফোনে সরফরাজ নেওয়াজ আলীকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ কি সাবধান হয়ে গেছে, নাকি ভারত চাল দিয়েছে (কৌশল করছে)? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে না তো? জবাবে সরফরাজ বলেন, ষড়যন্ত্র অবশ্যই হচ্ছে। কারণ, ভারত চায় না পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোয়ালিফাই করুক (খেলুক)। এ কারণে একটি বিশেষ মিটিং হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে বৈঠক হয়েছে। যেভাবে মোদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলেছেন, তখনই আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় ওঠে পাকিস্তানের আরেক সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজার একটি পোস্ট। যাকে বাংলাদেশের মানুষ এখন চেনে ‘রমিজ্জা’ হিসেবেই। এক পোস্টে রমিজ্জা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। রমিজ্জা তার টুইটার এ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, আইসিসি দয়া করে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে তদন্ত করুন। কারণ আমার বিশ্বাস বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলানোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশকে সব সময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা রমিজের একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বহুদিন থেকেই। এর আগেও একাধিকবার নানা মন্তব্যে বাংলাদেশকে অপমান করেছে রমিজ্জা। বাংলাদেশের ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়ের নাম নিয়ে উপহাস করেছিল রমিজ্জা। খেলা চলাকালীন রমিজ্জা বলেছিল, বিজয়? এটা আবার কেমন নাম? এ সময় তার পাশে বসা ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী রমিজ্জার আচরণের কৌশলে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, কেন? বিজয় মানে হচ্ছে ‘ভিক্টরি’। বিশ্বকাপের বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে বাংলাদেশকে হেয় করে রমিজ রাজার ধারাভাষ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের টাইগার সমর্থক। দাবি উঠেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কমেন্টেটর প্যানেল থেকে রমিজকে বহিষ্কারের। ওই ঘটনার পর থেকেই ফেসবুক আর টুইটারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘ব্যান রমিজ রাজা’ (#ইধহজধসববুজধলধ) হ্যাশ ট্যাগটি। আর আইসিসির কাছে বহিষ্কারের আবেদন জানিয়ে খোলা হয়েছিল কয়েক শ’ নতুন ইভেন্ট। এভাবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে পাকিদের একের পর এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বস্তরের মানুষের মনে। এক টাইগার সমর্থক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমরা বিপিএলে পাকিদের চাই না। ওদের এখানে আসতে দেয়া যাবে না। রমিজ্জাকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। ফেসবুক কিংবা টুইটার যে যেখানে পারেন প্রতিবাদ করুন।’ আকবর লিখেছেন, সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ওই দেশে আমাদের ক্রিকেটারদের কোনভাবেই পাঠানো ঠিক হয়নি। পাকিদের বাঁচানোর জন্য আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের এত আগ্রহ কেন? সোহেলী লিখেছেন, আমরা পাকিস্তানীদের বিপিএলে দেখতে চাই না। আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ একটি পবিত্র দেশ। এখানে হায়েনারা না এলেই ভাল। আমাদের সবুজ বাংলার সবুজ ঘাস পুড়ে লাল হয়ে যেতে পারে। একটা গল্প বলি- এক মায়ের এক সন্তানের জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানে। খুব কালো। মা তার নাম রাখে ‘লাল খান’। কেন জানেন, বড় হয়ে ছেলে যেন কালোর কারণে লজ্জা না পায়। পাকিস্তানের নামকরণও ঠিক এমন করে করা। নাপাকের লজ্জা ঢাকার জন্য পাক স্থান নামকরণ।
×