শংকর কুমার দে ॥ ইতালি ও জাপানী দুই নাগরিক হত্যাকা-ের ক্লু খুঁজে না পাওয়ায় এবং প্রকৃত ঘাতক চক্রটি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের চাপের মধ্যে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপি-জামায়াতের দুই যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদ-ে দ-িত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার আগে আবারও কোন অঘটন ঘটানো হয় কিনা সেই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন তারা। তদন্তে দুই বিদেশী খুনের ঘটনায় লাভবান হচ্ছেন কারা, তার হিসাব নিকাশ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই বিদেশী খুনের সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক সাক্ষ্য, প্রমাণ, আলামত সংগ্রহের জন্য সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সরকারকে বেকাদায় ফেলতে কোটি টাকায় ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপকে হত্যা মিশনে অংশ নিতে প্রভাবশালী মহল থেকে প্রলোভিত করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য পেয়েছে, তার সত্যতা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানান, দুই বিদেশী খুনের ঘাতকচক্রের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, অবৈধ ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র, মোবাইল ফোন, সোর্স ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে খুনী চিহ্নিত বা শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ঘাতক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা অব্যাহত আছে। ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকা-ের মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে রংপুরে খুন হন জাপানী নাগরিক হোসে কোনিও। প্রকৃত খুনী চক্রকে শনাক্ত করা না গেলেও দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ধরন, লক্ষ্য নির্বাচন, আলামত এক ও অভিন্ন। হঠাৎ করে বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনা যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ব্যবসায়িক, ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধের ঘটনা নয় সে বিষয়ে পৃথক ও যৌথভাবে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে ঐকমত্যের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। কিন্তু ঘাতক চক্রটি কারা? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশী নাগকির হত্যাকা-ের এই ঘাতক চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাই এখন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
সূত্র জানান, সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের ঘাতক চক্র ও মদতদাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়ার পর তার বাস্তবায়ন দেখতে চাপ দেয়া হচ্ছে। রংপুরে জাপানী নাগরিক হত্যাকা-ে দুই জনকে গ্রেফতারপূর্বক রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকায় ইতালির নাগরিক হত্যাকা-ের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কোন ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুই বিদেশী নাগরিক খুন হয়েছেন এবং দুটি ঘটনাই ঘটিয়েছে মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা ব্যবহার করেছে অবৈধ ধরনের ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র। এসব আগ্নেয়াস্ত্রই বা গেল কোথায়? দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনায় দুর্বৃত্তদের ধরতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে সর্বস্তরেরর আলোচনায়।
অপরাধ বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, দেশের কোথায় কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহর, বন্দরে কোন বিদেশী নাগরিক কাজ করছে তা বেছে বেছে নিরাপত্তা দেয়াটা কি সম্ভবপর? আর চোরাগুপ্তা হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও সহসাই উদ্ঘাটনও সহজসাধ্য বিষয় নয়। তারপরেও দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট ও সকল গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেও গত এক সপ্তাহে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের কোন ক্লু খুঁজে না পাওয়া এবং খুনীরা চিহ্নিত না হওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হয়ত বা তারা ব্যর্থ, নয়ত বা শর্ষেতে ভূত আছে ! খোদ রাজধানী ঢাকায় এবং রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুনীরা মোটরসাইকেলে এসে খুন করে আবার নির্বিঘেœ ফিরে গিয়ে ধরা পড়বে না এটা বিশ্বাসযোগ্য করাটা কঠিন। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের খুনীরা তো দেশের ভেতরেরেই এবং একটি প্রভাবশালী মহল থেকে এই চক্রকে মাঠে নামানো হয়েছে এটা প্রায় নিশ্চিত। দুই বিদেশী নাগরিক খুনের ঘটনায় অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা না গেলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এ ধরনের নিশ্চয়তা কি? শুধু বিদেশী নাগরিক খুনের রহস্য উদ্ঘাটন নয়, এই খুনী চক্র যাতে আর কোন ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই জন্যই চিহ্নিতকরনের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হবে। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার অংশ হিসাবেই দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা প্রায় নিশ্চিত।