ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়াকে সতর্ক করলেন এরদোগান ॥ ইরাকেও বিমান হামলা চালাতে প্রস্তুত মস্কো

ফের তুর্কী আকাশসীমা লঙ্ঘন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ অক্টোবর ২০১৫

ফের তুর্কী আকাশসীমা লঙ্ঘন

সিরিয়ায় সাড়ে চার বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ক্রমশ বিস্তৃতি ঘটছে। রুশ বিমানগুলো তুরস্কের আকাশসীমা দ্বিতীয়বারের মতো লঙ্ঘন করেছে বলে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ নিশ্চিত করেছেন। রুশ সৈন্যরা সিরিয়াতে রয়েছে বলেও তিনি সিএনএনকে জানান। কিন্তু মঙ্গলবার রাশিয়া সিরিয়ার রণাঙ্গনে সৈন্য পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছে। মস্কোতে সামরিক কর্মকর্তারা সিরিয়াতে কামান ও রকেট শক্তি গড়ে তোলার খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। রুশ ফেডারেশন কাউন্সিলের স্পীকার ভ্যানেল তিনা মাতভিয়েঙ্কো বলেছেন যে, আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হলে ইরাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও বিমান হামলা চালাতে প্রস্তুত মস্কো। খবর টেলিগ্রাফ, সিএনএন, এএফপি ও রাশিয়ান টিভির। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া গত সপ্তাহে সিরীয় সরকারের সমর্থনে সূচিত বিমান অভিযানকে সমর্থন করতে অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্যদের তৈরি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানান, রাশিয়া কিছুসংখ্যক কামান ও রকেট মোতায়েন করেছে বলে তাদের বিশ্বাস। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এ্যাডমিরাল ভøাদিমির কোমোয়েদভকে উদ্ধৃতি করে বলা হয়, রুশ প্রবীণ সেনারা সিরিয়ান সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে আবির্ভূত হবে। তবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মরিয়া জাখারভা ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ স্থলবাহিনী নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে বারবার জানিয়েছেন। যদি পেন্টাগণের কোন ভিন্নমত থেকে থাকে, তবে তারা সেটি জানান বলে আমি প্রস্তাব করছি। জাখারভা বলেন, রুশ অভিযানের দৃশ্যমান লক্ষ্যস্থল ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) কেবল স্থলসৈন্যদের দিয়েই পরাজিত করা যেতে পারে। কিন্তু তারা হবে রুশ বিমান হামলার সমর্থনপুষ্ট সিরীয় সেনাবাহিনী। রুশ জঙ্গী বিমান এবং সিরিয়ায় আইএসের ওপর হামলা চালাচ্ছে এমন এ মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের বিমানগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে রুশ সৈন্য মোতায়েনের খবর বোরোলো। স্টলটেনবার্গ সিরিয়ার কয়েকটি ফ্রন্টে রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। রুশ জেট বিমান তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘন করার খবর বেরোনোর পর তুরস্ক দু’দিন সোম ও মঙ্গলবার রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। জেনস স্টলটেনবার্গ তুর্কি আকাশসীমায় রুশ বিমানের অনুপ্রবেশের ঘটনাকে ‘গুরুতর এমনকি বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেন। তুরস্ক ১৯৫২ সাল থেকেই ন্যাটোর সদস্য। জোটের নিয়ম অনুযায়ী এর ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রের যে কোনটির ওপর হামলাকেই সবার ওপর হামলা বলে গণ্য করা উচিত। সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা নিয়ে পেন্টাগণও উদ্বিগ্ন। সর্বশেষ মার্কিন মূল্যায়নে আভাস দেয়া যায় যে, রাশিয়া স্থলযুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য উত্তর সিরিয়ার এমন সব এলাকায় সরিয়েছে, সেখানে সরকারবিরোধী বাহিনীর অবস্থান রয়েছে। দু’আমেরিকান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এ কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র ওই পদক্ষেপকে আইএস যোদ্ধাদের নয় বরং ওই সব বাহিনীকে আক্রমণ করার লক্ষ্যে সিরিয়ায় রাশিয়ার স্থল তৎপরতা বৃদ্ধি হিসেবে দেখছে। ওই কর্মকর্তাদের একজন এ কথা জানান। কিন্তু রুশ কর্মকর্তারা সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির কথা অস্বীকার করছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে কারণ রাশিয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন করছে। ভ্যালেনতিনা বলেন, ইরাক আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানালে দেশটিতে বিমান অভিযান চালানোর রাজনৈতিক ও সামরিক দিকটি ভেবে দেখা হবে। ইরাক এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন আহ্বান জানায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইরাকের অভ্যন্তরে আইএসের অবস্থানে রাশিয়ার বিমান হামলাকে স্বাগত জানানোর জন্য তাকে মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিয়েছে বলে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-এবাদি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন। এর তিন দিনের মাথায় এ কথা জানালেন ভ্যালেনতিনা মাতভিয়েঙ্কো। এদিকে জর্দান সিনেটের সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের সময়ে ভ্যালেনতিনা মাতভিয়েঙ্কো বলেন, আইএসকে পরাজিত করা ছাড়া সিরিয়ায় রুশ বিমান অভিযানের আর কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য মস্কোর নেই। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলা চলাকালে তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠার পর মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান ‘অনাকাক্সিক্ষত পদক্ষেপ’ গ্রহণের বিরুদ্ধে মস্কোকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তুরস্কের সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের যুদ্ধবিমান রবিবার ও সোমবার সিরিয়া সীমান্তের কাছে অনির্দিষ্ট একটি দেশের মিগ-২৯ বিমানকে ধাওয়া করে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর ভাষায় এ আকাশসীমা লঙ্ঘনের সমালোচনা করে বলেছেন, এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পদক্ষেপ তুরস্ক মেনে নিতে পারে না। রাষ্ট্রীয় সফরে বেলজিয়ামে অবস্থানকালে তিনি আরও বলেন, অবশ্যই এক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা অসম্ভব।
×