ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চার ধাপের নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে বিমানে বোরকাপরা তরুণী!

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ অক্টোবর ২০১৫

চার ধাপের নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে বিমানে বোরকাপরা তরুণী!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বিষণœতায় ভুগছিলেন সামিয়া ইসলাম। সেজন্য লেখাপড়া চুকিয়ে নিজের মতো করেই চলতেন। যখন ভাল লাগত না- ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন। হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে আবার ফিরে আসার ঘটনাও কম নয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সামিয়া ছুটে যান শাহজালাল বিমানবন্দরে। বিনা টিকেটেই চেপে বসেন ইউএস বাংলার একটি প্লেনে। যখন ধরা পড়েন তখনই পড়ে যায় হৈ চৈ। তৎপর হয় গোয়েন্দারা- কি করে এমন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে টিকেট ছাড়াই প্লেনে উঠে বসার সুযোগ পেলেন সামিয়া। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তোলপাড় চলে শাহজালাল বিমানবন্দরে। বুধবারও গোয়েন্দারা বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে সামিয়া সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। পরিবারের ভাষ্য মতে, সামিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বিষণœতায় ভুগছে। তবে তার মানসিক অসুখ রয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। এ সম্পর্কে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল জনকণ্ঠকে জানান, বিনা টিকেটে উড়োজাহাজে কিভাবে চেপে বসলেন সেটাই উদ্বেগের বিষয়। তবে মাঝে মাঝে অপ্রকৃতিস্থ আচরণ করতেন সামিয়া ইসলাম। তাকে যখন শনাক্ত করে অফলোড করা হয়- তখন সবারই টনক নড়ে। আলমগীর বলেন, মেয়েটি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বলে পরিচয় দেন। তার বাবা আইসিডিডিআরবির সায়েন্টিক অফিসার। সামিয়া মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন বলে দাবি তার মায়ের। যে কারণে তাদের জিম্মায় মেয়েটিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। মেয়েটি নাকি ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকেই মাঝে মাঝে এমন আচরণ করছেন। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার ফ্লাইটে চট্টগ্রামগামী ইউএস বাংলার বিএস ১০৯ নাম্বার ফ্লাইটে টিকেট কিংবা বোর্ডিং পাস ছাড়াই উঠে বসেছিল বোরখা পরা তরুণী সামিয়া। এ সময় ফ্লাইটের মধ্যে জঙ্গী আতঙ্ক দেখা দেয়। এদিকে ট্যাগ ছাড়া অতিরিক্ত একটি সুটকেস পাওয়ার পর আতঙ্কটা আরও বাড়ে। প্লেন রানওয়ের দিকে রওনা হতেই একটা ফোন পেয়েই থেমে যায়। হঠাৎ বলা হয় সবার বোর্ডিং হাতে তুলে দেখানোর জন্যে। যথারীতি সবাই তাই করলেও, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল এক তরুণীর কাছে টিকেট নেই। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলল সে টিকেট হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বোর্ডিং হওয়া যাত্রীদের সংখ্যার সঙ্গে প্রকৃত যাত্রীদের সংখ্যা মিলছে না। এদিকে সামিয়ার সঙ্গে কোন লাগেজ বা অভিভাবকও ছিল না। সম্পূর্ণ যাত্রী বোঝাই প্লেনটিতে ঐ একটিমাত্র সিটই খালি ছিল, যেটাতে তিনি বসেছিলেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সব যাত্রীকে প্লেন থেকে নামায়। সামিয়া তখন ভাবলেশহীন ও প্রতিবাদহীনভাবে দ্রুত প্লেন থেকে নেমে গেল, ততক্ষণে জঙ্গী আতঙ্কে অন্য যাত্রীদের আত্মা খাঁচাছাড়া হওয়ার অবস্থা। সম্পূর্ণ প্লেন ও যাত্রীদের চেক করে তবেই প্লেনটি গন্তব্যে উড়াল দেয়, নিরাপদে পৌঁছে। পরে সামিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ভারসাম্যহীন মনে হওয়ায় মায়ের হাতে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে যাত্রীসাধারণের প্রশ্ন- বড় কোন ঘটনা না ঘটলেও, ব্যাপারটা ভয়ানক। যাত্রীরা প্রশ্নও তুলেছেন, টিকেট কিংবা বোর্ডিং পাস ছাড়া বিমানবন্দরের এতগুলো নিরাপত্তার চৌকাঠ মাড়িয়ে তরুণীটি প্লেনে উঠল কী করে? কেন বিষয়টা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেল? দেশে যখন ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিক হত্যার পর আতঙ্ক বিরাজ করছে, তখন কিভাবে তারা টিকেট ছাড়াই একজনকে তাদের সিকিউরিটি গেট পার হয় প্লেনে উঠতে দিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
×