ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার বহুতল ভবনের ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার প্রকল্পের সমীক্ষা শুরু এ মাসেই

ঢাকায় দৈনিক অতিরিক্ত ২শ’ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৭ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকায় দৈনিক অতিরিক্ত ২শ’ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ হবে

ফিরোজ মান্না ॥ বহুতল ভবনের ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য হাতে নেয়া প্রকল্পের সমীক্ষা এ মাসেই শুরু হচ্ছে। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভবন মালিকদের ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য জনসচেতনতা তৈরির কাজ চলবে। প্রতিটি ভবনের ছাদে যদি পানি ধরে রেখে ওয়াসার রিজার্ভারে পাঠানো হয় তাহলে বছরে প্রায় ৯০ হাজার মিলিয়ন লিটার পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত আগস্টে আইডব্লিউএম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অনেকাংশে কমে যাবে। এখান থেকে ঢাকা মহা নগরীতে দৈনিক অতিরিক্ত ২শ’ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ দেয়া যাবে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ভূগর্ভস্থ পানি ধরে রাখার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে দিনে দিনে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে ৭৮ ভাগ পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে পানি উত্তোলন করলে ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগীর মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ঢাকা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। মহানগরীতে যে পরিমাণ বহুতল ভবন রয়েছে, এই ভবনগুলোর ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে দৈনন্দিন চাহিদার অনেকটাই মেটানো সম্ভব। এ জন্য ভবন মালিকদের ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। সূত্র জানিযেছে, পরিবেশগত কারণে ঢাকা ওয়াসাকে দূরবর্তী নদী থেকে পানি সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নিতে হয়েছে। নিয়মিত রিচার্জের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সন্তোষজনক অবস্থায় আছে কি না তা মনিটরিং করা এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ঢাকাকে একটি উন্নত বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যথাযথভাবে বজায় রাখা জরুরী। ঢাকা ওয়াসা এবং আইডব্লিউএম যে দুটি ক্ষেত্রে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে তা সফল হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। পরিবেশগত কারণে ঢাকা ওয়াসা ‘বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরণ’ এবং ‘পানির স্তর পর্যবেক্ষণে’র উদ্দেশ্যে আইডব্লিউএমের সঙ্গে আলোচ্য চুক্তি দুটি স্বাক্ষর করছে। ঢাকা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ উৎসের পরিবর্তে ক্রমেই ভূপরিস্থ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ৩টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নগরীর ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পেশাদার গবেষণা এবং সমীক্ষা করেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ঢাকা ওয়াসা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে দৈনিক মোট ১৪০ কোটি লিটার পানি রাজধানীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ২০২১ সালের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে একটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ এশিয়ার ‘শ্রেষ্ঠ পানি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচিত হতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগরীর বাড়ির ছাদগুলোতে পানি ধরে রাখার জন্য ঢাকা ওয়াসা ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)-এর মধ্যে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ওয়াসা গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে পানি উত্তোলন করে। ভূ-ওপরস্থ জলাধারগুলো পর্যবেক্ষন করা হবে। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ও আইডব্লিউএমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম মনোয়ার হোসেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঢাকা ওয়াসা ইতোমধ্যে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা কৃত্রিম উপায়ে ভূগর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরণ বিষয়ে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছে। সেগুনবাগিচা ও লালমাটিয়ায় দুটি পরীক্ষামূলক কাজের আওতায় দেখা যায় যে, ঢাকা শহরের ভবনের ছাদে পতিত বৃষ্টির ৬০ ভাগ পানি সংরক্ষণ করে ভূগর্ভস্থ জলাধারে পাঠানোর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৯০ হাজার মিলিয়ন লিটার পানি ভূগর্ভস্থ জলাধারে পুনর্ভরণ করা যাবে। ফলে নগরীতে দৈনিক অতিরিক্ত ২শ’ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
×