ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এখানে আগের মতোই নিরাপদ বোধ করছি- প্রেসক্লাবে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট

প্রধানমন্ত্রী এমন এক ব্যক্তি সন্ত্রাস ঠেকাতে যার নীতি ‘জিরো টলারেন্স’

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৬ অক্টোবর ২০১৫

প্রধানমন্ত্রী এমন এক ব্যক্তি সন্ত্রাস ঠেকাতে যার নীতি ‘জিরো টলারেন্স’

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পরেও বাংলাদেশকে আগের মতোই নিরাপদ বোধ করছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। এ ছাড়া তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আইএসের উত্থান ঠেকাতে ঢাকা-ওয়াশিংটন একযোগে কাজ করবে। এখানে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে পোশাক খাতের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বার্নিকাট। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম ও সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ বক্তব্য রাখেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন বার্নিকাট। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশে আইএসের উত্থান ঠেকাতে যা দরকার তা আমাদের রয়েছে। এমন একজন প্রধানমন্ত্রী এখন বাংলাদেশে রয়েছেন, যিনি সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস মৌলবাদ ঠেকাতে যে সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও ঐকান্তিকতা প্রয়োজন, বহু বছরের অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে আমরা তা অর্জন করেছি। সন্ত্রাসবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে বার্নিকাট বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এ বিষয়টি সামাল দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। আর আমাদের দুই দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় আগের মতোই নিরাপদ বোধ করছি। তবে সন্ত্রাসীদের কোন সীমানা নেই। তাদের যে কোন তৎপরতাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে ঢাকা-ওয়াশিংটন একযোগে কাজ করছে। এখানে আইএসের উত্থান ঠেকাতেও দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে বলেও তিনি জানান। সাংবাদিকদদের এক প্রশ্নের উত্তরে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে কি-না সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খতিয়ে দেখছে। যদি এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়, তবে সেটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকেও অভিহিত করা হবে। গত চার দশকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, কোন সন্ত্রাসী তৎপরতাই উন্নয়নকে ম্লান করতে পারবে না। এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, বিদেশীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েই বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ওই তথ্য বাংলাদেশ সরকারকেও জানানো হয়েছিল। সতর্কতার প্রেক্ষিতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন ভ্রমণ সতর্কতার অর্থ এই নয় যে, কাউকে বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করা হয়েছে বা কাউকে এখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে। আমরা শুধু চেয়েছি এখানকার মার্কিন নাগরিকরা যেন সতর্ক থাকে। আর একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতার দায়িত্বও আমার ওপর পড়ে। বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের ওপর হামলা হতে পারে এমন তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন সূত্র থেকে পেয়েছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্শা বার্নিকাট বলেন, তথ্য জানার জন্য আমাদের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে এই খবর পেয়েছিলাম। সে জন্যই ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে আমাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দেয়া হয়। দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যার পর সরকার থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সন্তুষ্ট কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমরা নিরাপদ বোধ করছি। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আতিথেয়তার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন বিদেশী নাগরিক হিসেবে পর্যবেক্ষণ করেছি, এদেশের সাধারণ মানুষ বিদেশীদের সম্মান করে। আমি এখানকার সাধারণ মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশে বর্তমান গণতন্ত্র নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের ডিএনএ রয়েছে। তবে গণতন্ত্র খুব ভালভাবে চর্চা করতে চাইলে অবাধ রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন ও মতো প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া সুশাসনের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করায় রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এমডিজির মতো এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে। যাতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূল বাজার সুবিধা বা জিএসপি বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশকে এ খাতে আরও কাজ করতে হবে। জিএসপি পুনরুদ্ধার করতে এ খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। ওই সফরে প্রতিনিধি দল জিএসপি বিষয়ে তাদের যে সব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে, বাংলাদেশ সেগুলো আমলে নিলে এবং যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে পোশাক খাতে কোন অগ্রগতি হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানের পোশাক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে কাজের পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে, নিরাপত্তা পরিদর্শক বাড়ানো হয়েছে। তবে আরও অগ্রগতির এখনও সুযোগ রয়েছে বলেও জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানি কাজ করছে। তেলগ্যাস খাতে শেভরন কাজ করছে। এখানে কোকাকোলা কোম্পানি ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সফটওয়্যার খাতে ইন্টেল কোম্পানি কাজ করছে। এছাড়া এটা ভুলে গেলে চলবে না যে চলতি অর্থ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যের চার শতাংশ রফতানি বেড়েছে। অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম বলেন, বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দেয় ডিক্যাব। সে কারণে ডিক্যাব থেকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস, জেমস এফ মরিয়ার্টি ও ড্যান মজেনার ডিক্যাব টকের আয়োজন করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মার্শা ব্লুম বার্নিকাটের ডিক্যাব টক আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
×