ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চরম নিন্দনীয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ অক্টোবর ২০১৫

চরম নিন্দনীয়

জায়গাটির নাম সুন্দরগঞ্জ, কিন্তু সেখানে ঘটানো হয়েছে অত্যন্ত অসুন্দর ঘটনা! একজন সংসদ সদস্যের গর্হিত কাজের পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হতে হয়। জনসাধারণের জন্য আইন প্রণয়ন যার ব্রত, সেই তিনি আইন ভঙ্গের মতো অপরাধে লিপ্ত হলে তা দুর্ভাগ্যজনক! গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোড়া গুলিতে শুক্রবার ভোরে নয় বছরের শিশু সৌরভ গুরুতর আহত হয়েছে। শিশুর চাচাকে লক্ষ্য করে পাজেরো থেকে গুলি ছুড়েছিলেন এমপি। বহু আগে থেকেই ওই এমপি তার বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য বহুল আলোচিত। এর আগেও একবার এক কর্মচারীর বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন। এ দফায় তিনি পূর্বেকার সকল কৃতিত্বকেই ছাড়িয়ে যেতে সফল হয়েছেন। জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত সদস্যের কথাবার্তা, আচরণ ও কর্মকা- দেখে ষাটের দশকের বাংলা সিনেমার মদ্যপ, উচ্ছৃঙ্খল, টিপিক্যাল খলনায়কের চরিত্র মনে পড়ে যাওয়া দুঃখজনক। রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব ও ক্ষমতার দম্ভ অনেক সময়ই সাধারণ নাগরিকের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনে। একজন মানুষ হিসেবে অপর মানুষের প্রতি মানবিকতাবোধ থাকাটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হলো ধরাকে সরা জ্ঞান করে মানুষের সঙ্গে গর্হিত আচরণ করা হয়। এর আগে মদ্যপ অবস্থায় সরকার দলীয় এক এমপি-পুত্রের গুলি ছোড়ার নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছিল। কয়েক মাসের ব্যবধানে শুক্রবার এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল। সঙ্গত কারণেই এই ঘটনায় এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, মানববন্ধন হয়েছে এমপির শাস্তি দাবি করে। গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিয়ে যাওয়ার পথে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয় ওই এমপির লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এ্যাম্বুলেন্সটি ছাড়িয়ে নেয়। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, এখানে ছাড় দেয়া কিংবা বিরাগবশত চরম পদক্ষেপ নেয়াÑ দুটোরই কোন সুযোগ নেই। যে যতখানি অন্যায় করবে তার সাজা আইনসম্মতভাবে ততটুকুই নির্ধারিত। একজন মদ্যপ উচ্ছৃঙ্খল নাগরিকের পরিচয় যাই হোক না কেন, সেটি বিবেচ্য হতে পারে না। নিন্দিত এমপিই শুধু নয়, ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থাকা কারোরই অপরাধ করে আইনের আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অপরাধীকে তার প্রাপ্য সাজা পেতে হবে। সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে থাকা অনেকেই আইন লঙ্ঘনের মানসিকতা লালন করে থাকেন। সুন্দরগঞ্জের গুলিবর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়া গেলে জনমনে এমন ধারণা দৃঢ় হবে যে, দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এখানে মন্ত্রী-এমপি কিংবা তাদের নিকটাত্মীয়ের অপরাধ করে পার পাওয়ার কোন উপায় নেই। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ অর্বাচীনদের শিক্ষা হওয়াই উচিত। বলাবাহুল্য এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলই হবে।
×