ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা-রণজিৎ কুমারের রবীন্দ্রালেখ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ অক্টোবর ২০১৫

বন্যা-রণজিৎ কুমারের রবীন্দ্রালেখ্য

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘মনের ভেতর ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা ও আনন্দ আর আনন্দ মিশ্রিত ভয়। সকল বিপদ, হতাশা পরাভয়ে তাকে পাই। আমাদের বটতল-পত্রপুট সেই মানুষটি আমাদের রবীন্দ্রনাথ’ শুরুতেই এ বাক্যগুলো বিনীত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন অবসরপ্রাপ্ত সংস্কৃতি সচিব ড.রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। রবীন্দ্র পিয়াসী ভক্তদের সরব উপস্থিতিতে গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না শনিবার সন্ধ্যায়। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার রবীন্দ্রসুর আর রণজিৎ কুমারের কথার জাদুতে বিমোহিত হলেন সবাই। গীতিআলেখ্যটি রচনা করেছিলেন রণজিৎ কুমার নিজে। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গেয়ে উঠলেন মনের দম্ভকে তরলী করে দেয়া গান ‘আমার মাথানত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে’। গানের শেষে নীরবতার ছোঁয়ায় যেন মনে হলো মিলনায়তন ভর্তি সবার মাথানত হলো পরম আরাধ্যের পায়ের নীচে। রণজিৎ কুমার বললেন, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হলো রবীন্দ্রনাথ। নিখরচায় যেখানে পড়ালেখা করে নিজেকে শুদ্ধ করা যায়। শিল্পী রেজওয়ানার দ্বিতীয় গানটি ছিল ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’। অনেক শ্রোতা মিলনায়তনে ঠাঁই না পেয়ে বাইরের বারান্দা ও অন্য কক্ষে বসে নিবিড় চিত্তে গান শুনছিলেন। অসাধারণ সুরের মূর্ছনায় ভেতর বাহিরে ভিন্ন এক আবহ সৃষ্টি হয়েছিল। যেখানে শিল্পীকে দেখা যেন মুখ্য নয়, শিল্পীর গানই মুখ্য। এরপর গাইলেন ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’। ইমন ও ভূপালী রাগ মিশ্রিত দাদরা তালের এ গানটির সঙ্গে সবাই গলা মেলালেন জোরে-সোরে। গানটির সঙ্গে পরিচিত নয় এমন বাঙালি পাওয়া ভার। সম্ভবত এ কারণেই শিল্পী তার সঙ্গে গানটি গাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের এ গানটিতে তার রাষ্ট্র দর্শন প্রকাশ পেয়েছে। এ বিস্ময়কর বিপুল জনপ্রিয় গানটিতে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রের শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত। এরপর পরই শিল্পী গাইলেন ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী’। পরের গানটি ছিল ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে’। রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ পর্যায়ের ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে তা’ বলে ভাবনা করা চলবে না’ গানটি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে দেশাত্ববোধের জানান দিলেন শিল্পী। তিনি এরপর পরিবেশন করলেন মানবিক প্রেমের গান ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি তোমায়’। একই ধারাবাহিকতায় একে একে গেয়ে শোনান ‘ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’, ‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারই গান গেয়ে’, ‘যে ছিল আমার স্বপন চারিনী’ ও ‘ভালবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনের মন্দিরে’। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিবেশিত সর্বশেষ গান ছিল ‘পুরানো জানিয়া চেয়োনা আমারে আধেক আঁখির কোণে’। রবীন্দ্রগানে নিবেদিত শিল্পীর লালিত্যমাখা সুর আর রণজিৎ কুমারের উচ্চারণ এ দুয়ে মিলে এক মধুময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যেখানে উঠে আসে স্বদেশ চেতনা, মানবিক প্রেম আর জাগতিক প্রেমের আশীর্বাণী। দুই শিল্পীর যুগলবন্দীতে মুগ্ধ হোন উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা
×