ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুমকির মুখে পড়েছে দেশটিতে জনশক্তি রফতানি

সিনারফ্লাক্স জটিলতায় আটকে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার বাজার

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৫ অক্টোবর ২০১৫

সিনারফ্লাক্স জটিলতায় আটকে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার বাজার

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চলছে নানা টালবাহানা। প্রথমে জিটুজি এরপর বিটুবি এখন আবার নতুন প্রস্তাব সিনারফ্লাক্স। সিনারফ্লাক্স মালয়েশিয়ার একটি জনশক্তি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান এককভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে। এখানে সরকারী সংস্থা বোয়েসেল আর বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কোন ভূমিকা থাকবে না। এমন এক প্রস্তাব নিয়ে জনশক্তি রফতানির বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। নানা দোলাচলে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির বাজারটি দুলছে। কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সব আলোচনাই ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রতিবারই মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি পিছিয়ে নিচ্ছে। যদিও চুক্তি অনুযায়ী এ বছরই দেশটিতে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগের কথা ছিল। কর্মী নিয়োগের আলোচনা শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রস্তাব এখনও তারা অফিসিয়ালি পাননি। তবে তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এ মাসেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া যাবে। সেখানে কর্মী নিয়োগের বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। গতমাসে মালয়েশিয়ার ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে কর্মী নিয়োগ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে গেছে। তাতে কোন সিদ্ধান্তে হয়নি। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দেশের সাড়ে ১৪ লাখ তরুণ নিবন্ধন করে বসে থাকলেও বাজারটি কবে খুলবে তা এখনও অনিশ্চিত। নিবন্ধনকারীদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে বলা যাচ্ছে না বাজারটি আবার চালু হবে কিনা। সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ শুরু করলেও ওই পদ্ধতিতে গত তিন বছরে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কর্মী নিয়োগ হয়েছে। পরে দেশটির কর্তৃপক্ষ বেসরকারী পদ্ধতিতে (বিটুবি) কর্মী নিয়োগ করতে আগ্রহ দেখায়। এই মর্মে একটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষর হয় এ বছরের মে মাসে। তখন থেকেই দেশের শতাধিক জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় রীতিমতো অফিস খুলে বসেন। আবার ওই দেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা নানা তৎপরতা শুরু করে। দেশটিতে নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই দেশটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে নতুন প্রস্তাবের কথা জানায়। এই প্রস্তাবের পর সবকিছু অন্য রকম হয়ে গেছে। যদিও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ এ মাসেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। গত মাসে আসা মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, কোন কর্মী যেন এমন অনিশ্চিত অবস্থায় জনশক্তি রফতানিকারকদের কাছে টাকা না দেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোন্ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে আর কোন আলোচনা হয়নি। সূত্র জানিযেছে, যারা সরকারীভাবে নিবন্ধন করেছে, তাদের মধ্য থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি ঠিক রেখেই নতুন নিয়মে কর্মী নিয়োগ হবে। নতুন করে যারা নিবন্ধন করবেন, তারাও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন। গত মাসের শেষ দিকে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়মে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করেছে। বাংলাদেশী কর্মীদের বায়োমেডিক্যল চেক-আপ থেকে শুরু করে, ভিসা প্রসেসিং, পাসপোর্ট তৈরি এবং নবায়নের বিষয়গুলো পর্যন্ত সিনারফ্লাক্স নামের প্রতিষ্ঠানটিই করবে। নিবন্ধিত কর্মীদের ডাটা এন্ট্রিও তাদের হাতে থাকবে। ফলে কর্মী নিয়োগের কোন বিষয়ই বাংলাদেশের হাতে থাকবে না। প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়ার সাবেক এক মন্ত্রীর বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়ার নতুন প্রস্তাবে কর্মী পাঠানো হবে না। এ মাসেই দেশটিতে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাবে। সেখানে জিটুজি ও বিটুবি বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। এমন একপর্যায়ে মালয়েশিয়ায় ৫ লাখ কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয় যখন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে কয়েক শ’ মানুষের গণকবরের সন্ধান মেলে। এমনকি সাগরে হাজার হাজার মানুষ নৌকায় ভাসছিল। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা করে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। এ বছর তারা ৫ লাখ কর্মী নিয়োগের কথা জানায়। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। কিন্তু সর্বশেষ পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে কবে নাগাদ এই বাজার খুলবে তার কোন হিসাব নেই। এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে আমাদের প্রতিনিধিদলের এ মাসেই যাওয়ার কথা রয়েছে। তখন দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমাধানে আসা সম্ভব হবে। কারণ এই মুহূর্তে মালযেশিয়ায় বিপুলসংখ্যক কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তখন এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হতে পারে। তখন আমরা লোক পাঠাতে পারব। এর আগে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল কোন্ প্রক্রিয়ায় তারা শ্রমিক নেবে, কবে থেকে নেবে, কতজন নেবে, কোন কোন সেক্টরে নেবেÑ সে বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে গবর্নমেন্ট টু গবর্নমেন্ট (জিটুজি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। চুক্তি অনুযায়ী শুধু সরকারীভাবে মালয়েশিয়ার ‘প্লান্টেশন’ খাতে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। তখন দেশটি ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে মাত্র সাড়ে তিন হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন।
×