ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশীদের হত্যা দেশী ষড়যন্ত্রের নতুন কায়দা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৫ অক্টোবর ২০১৫

বিদেশীদের হত্যা দেশী ষড়যন্ত্রের নতুন কায়দা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সব জেলার পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিদেশী নাগরিককে হত্যাকা- দেশীয় ষড়যন্ত্রের নতুন কায়দা মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিদেশী নাগরিক হত্যা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের পর মোটরসাইকেল চালকদের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আরোহী দুজন হলেই তল্লাশি করা হবে। কোন মোটরসাইকেলে তিন জন চলাচল করা যাবে না। এ ছাড়া আসন্ন দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে মাঠে নামানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুজো উপলক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সব জেলায় যেখানে যেখানে ইউরোপীয় নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা কাজ করছেন সেসব স্থানে বাড়তি নজর রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। বিদেশী নাগরিক হত্যাকা- দেশীয় ষড়যন্ত্রের নতুন কায়দা বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিদেশী নাগরিক হত্যা করে এ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে গ্রেফতার করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে হবে। দেশের কোথাও চাঞ্চল্যকর কোন অপরাধ ঘটলে সংশ্লিষ্ট পুশিল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দায়িত্বে কোন রকম অবহেলা বরদাশত করা হবে না। সন্ত্রাসী তৎপতার রোধে গোয়েন্দা পুলিশকেও সহযোগিতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বলা হয় পুলিশ আন্তরিক হলে অপরাধ প্রায় নির্মূল করা সম্ভব। গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানের কূটনীতিকপাড়ায় ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলাকে গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেল আরোহী হয়ে আসা দুর্বৃত্তরা। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা আসিসিও কো-অপারেশনের একটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন তাভেলা। এর পাঁচ দিনের মাথায় গত শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি মহিষওয়ালা মোড়ে হোসে কোনিও (৪৮) নামে এক জাপানী নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিদেশী হত্যাকা-ের এ দুই ঘটনায় জঙ্গী সংগঠন আইএস জড়িত কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। বাংলাদেশে আইএস নেই। তারা কেন বিদেশী নাগরিককে হত্যা করবে? তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে এসব হত্যাকা- চালানো হচ্ছে। দেশে সন্ত্রাসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের যত রকম সন্দেহ রয়েছে সব দিকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিদেশী হত্যাকা- প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সব জেলায় বিদেশীরা যেখানে কাজ করেন সেখানে বিশেষ নজরদারির কথা বলে দিয়েছি। বিদেশী নাগরিক হত্যার দুটি ঘটনায় তিন ব্যক্তি ছিলেন। একইভাবে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যাকা- চালিয়ে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন পরে আরও খোলাসা করে বলতে পারব। তবে প্রাথমিকভাবে যেটুকু বুঝতে পারছি; তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং বিদেশীদের কাছে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বলে তুলে ধরার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশীদের তারা আশ্বস্ত করতে চান যে অচিরেই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা হবে। কূটনৈতিক এলাকাসহ শহরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সেখানে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে। যেখানেই বিদেশীরা আছেন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। কোন বিদেশী নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে আমাদের জানালে আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। মোটরসাইকেলে আরোহী চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একজনের বেশি থাকলে প্রত্যেককেই চেক করা হবে। দুই আরোহীসহ তিনজন যেতে দেয়া হবে না। স্ত্রী-সন্তানসহ মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়ে শিথিল অবস্থার ইঙ্গিত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্ন রেখে বলেন, স্ত্রী-সন্তানহ চারজনও যায়, সেখানে কী বলব বলেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিমা বিসর্জনের নিরাপত্তা ও যানজটমুক্ত রাখার জন্য পুলিশ-আনসার কাজ করে যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রবিবার বিকেলে সার্বজনীন পুজো উদ্যাপন কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গত বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘেœ উদযাপিত হয়েছে। গত বছরের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে পুজোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার, ফায়ার সার্ভিস তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাবে।’
×