ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই বিদেশী হত্যায় জামায়াত বিএনপির মদদ আছে ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

আইএস নয়

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৫ অক্টোবর ২০১৫

আইএস নয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেস্টের (আইএস) কোন তৎপরতা নেই উল্লেখ করে বলেছেন, এখনও পর্যন্ত বলতে পারি আমাদের এখানে আইএস বা তেমন কোন সংগঠনের তৎপরতা গড়ে উঠতে পারেনি। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান বাংলাদেশে হোক, তা আমরা চাই না, তা হতেও দেব না। দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য আছে, তাদের হাত ও মদদ আছে। পঁচাত্তরের পর ২১ বছর যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় থেকে রাজত্ব করেছে। আজকে যখন সেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি, তার কিছু রি-এ্যাকশন তো হবেই। তবে এসব হত্যাকারীকে অবশ্যই ধরা হবে, বিচারও করা হবে। আর দুটি হত্যাকা-ের কারণে সরকারের সব অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবেÑ এমন মনে করার কোন কারণ নেই। রবিবার গণভবনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট ও নির্বাচন নিয়ে কি কোন প্রশ্ন আছে? একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, কেউ তো বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক সঙ্কট কী, এটা নিয়ে কোন আলোচনাই করেননি। নির্বাচন নিয়েও কোনকিছু বলেননি বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন বা অগ্রযাত্রাকেই তাঁরা সব থেকে বেশি সাধুবাদ দিয়েছে। বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিয়েই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের পর বাংলাদেশটাই ওখানে একটা অন্যরকম ফোকাল পয়েন্ট ছিল যে, বাংলাদেশ কিভাবে এত উন্নতি করল। এটাই ছিল বিশ্বনেতাদের আলোচনার সব থেকে বেশি উৎস। সবাই একটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশ কিভাবে এত উন্নতি করে যাচ্ছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন এলডিসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ। এতই যদি রাজনৈতিক সঙ্কট থাকত, তাহলে বাংলাদেশ এলডিসির নেতৃত্ব কিভাবে পেল? আসলে সঙ্কট দেশের বাইরে না, দেশের ভেতরের কিছু মানুষের মনের সঙ্কট চলছে। বাইরে কোন সঙ্কটের কথা কেউ বলেনি, দেখিওনি। সঙ্কট এখানে কিছু লোকের মনের সঙ্কট। বনের বাঘ খায় না, মনের বাঘ খায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সঙ্কট বা সরকারের বৈধতা না থাকলে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা (বিশ্বনেতারা) যদি মনে করতেন যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক খুব সঙ্কট আছে বা সরকারের বৈধতা নেই, তাহলে এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুষ্ঠানগুলো করেন; তিনি নিজে আমাকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ও কো-চেয়ার হওয়ার জন্য। অন্য সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের অনুষ্ঠানেও নিজেকে আমন্ত্রণ জানানোর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এই প্রশ্নগুলো যদি তাদের মধ্যে থাকত, তাহলে তো তারা আমাকে দাওয়াত দিত না। বিদেশী বিনিয়োগ করার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রশ্নই যদি তাদের মধ্যে থাকত, তাহলে এই কথাগুলো আসত না। সাংবাদিকসহ দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে মাথায় রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে যে, অবশ্যই একটা গ্রুপ আছে যে, তারা একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে চেষ্টা তারা করতেই থাকবে। আজকে বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের ধারা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এটাই তো অনেকের পছন্দ নয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধের নামে নির্বিচারে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করাকে বিশ্বনেতারা ভালভাবে নেননি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) লবিস্ট আছে, টাকা-পয়সা আছে। হয়ত লবিস্ট নিয়োগ করে কিছু কথা বলাতে পারে, লেখাতে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা আমরা রাখতে পেরেছি। সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনা এটা ওটা তো ঘটতেই থাকবে এবং তারা চুপ করে তো বসে থাকবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, আর তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা আপনারা আশা করেন কী করে? তারা তো প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতেই থাকবে। একাত্তরে ঘটিয়েছে, পঁচাত্তরের ঘটনা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে এ সফরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দেশের অর্জনগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতেই এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে বসে ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিদেশী নাগরিক হত্যা পরিকল্পিত ॥ দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকা- নিয়ে একজন সম্পাদকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যা সুপরিকল্পিত। হত্যাকা-ের আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য এবং ঘটনার পর তাদের যে বক্তব্য সেটা মিলিয়ে দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। সরকারের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, আর এর পেছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে। এ ব্যাপারে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দুটি হত্যাকা-ের জন্য সরকারের সব অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবেÑ এমন মনে করার কোন কারণ নেই। আর আমরা এখানে একটা ঘটনা ঘটলে খুব সেনসিটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলো যেন সব শ্যাডো হয়ে গেল, অর্জনগুলো যেন সব হারিয়ে গেলÑ এত মানসিক দৈন্যতায় কেন ভুগি? তিনি বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে, এখানে অবশ্যই পরিকল্পিত কিছু তো আছেই। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এই দুই বিদেশী নাগরিক হত্যায়, এই যদি আপনাদের চিন্তাভাবনা হয়, তাহলে তো আমার মনে হয় যে বিএনপি-জামায়াত-রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য সেটাই সফল। তারা এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, এর পেছনে নিশ্চয় তাদের মদদ আছে। এটা করাই হচ্ছে আমাদের অর্জনটা যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটা দেশবাসীকেও বুঝতে হবে। দেশের মানুষকে জানতে হবে। তারা এই যে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে এটার পেছনে একটা উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে তাদের একটা হাত আছে, এতে কোন সন্দেহই নেই। তবে এই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে অবশ্যই বিচার করা হবে। এ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দুজন বিদেশী নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যার স্টাইলটা একই রকম। ইতালি নাগরিককে চারটি গুলি মারা হয়েছে। একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি। চারটা গুলিই তাদের লাগল। তার মানে কি এটা সুপরিকল্পিত। আমি তার আগে একটু স্মরণ করাতে চাই, এর আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য। এর পরে তার রি-এ্যাকশন। সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল না আসা প্রসঙ্গে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল যে এলো না, অস্ট্রেলিয়ায় কী ঘটল? সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে গুলি করে মারল। আমি জানি না, আমাদের মিডিয়াগুলো সেই খবরটি হাইলাইটস করেছে কিনা। এ ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়া কী জবাব দেবে? যেসব দেশ বাংলাদেশে একজন হত্যার পর রি-এ্যাকশন দেখাল, তারা অস্ট্রেলিয়ার এই হত্যাকা- এবং আমেরিকার স্কুলে গুলি করে হত্যা করার পর কী করল? তারা কী সেখানে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এখানে রেড এ্যালার্ট হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় দুজনকে মারা হলো, তারা সেখানে কী করেছে? তিনি বলেন, আমেরিকার জনসংখ্যার অর্ধেকের মতো মানুষ বাংলাদেশে বাস করে। আমেরিকায় ১০ জনকে হত্যা করা হলো। আমেরিকা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুলকে কিন্তু আমেরিকায় হত্যা করা হয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়তই বাঙালী হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছে। তারা তো আমার দেশের নাগরিক। আমাদের মিডিয়া কিন্তু সেগুলো হাইলাইট করে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানেই থাকি, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, যখন যে ঘটনা ঘটছে খবর পাচ্ছি। ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সৌদি আরবের নাগরিক খালাফ হত্যার বিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালাফ হত্যার বিচার করছি। তাদের (সৌদি আরব) বিচারিক ব্যবস্থা এবং আমাদের বিচারিক ব্যবস্থা তো আলাদা। তারা তো পেলেই গলা কেটে দেয়। আমরা তো তা করতে পারি না। তখন তো আপনারাই চিল্লাবেন। গেল গেল সব গেল। মানবাধিকার লঙ্ঘন হলো। খুনীদের মানবাধিকার নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, এটাই হলো আমাদের দেশের চরিত্র। হত্যাকা- ও আইএস প্রসঙ্গ ॥ বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠন আইএসের তৎপরতা প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা হত্যার দায় আইএস স্বীকার করে শিকাগো থেকে একটা সোস্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস এলো। এটা তদন্ত করতে হবে। কে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল আর আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে কেন? মিডিয়া এত প্রশ্ন না করে এই তথ্যগুলো খুঁজে বের করতে পারে। গুলশানে ঘটনা ঘটল সঙ্গে সঙ্গে শিকাগো থেকে স্ট্যাটাস এলো কারণটা কী? এখানে যোগসূত্রটা কী? এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই, প্রকৃত ঘটনা আপনারা খুঁজে বের করুন। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলা ভাইÑ এগুলো আমাদের দেশে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, জড়িতদের গ্রেফতার করছি। আর আমাদের দেশে কিছু কিছু লোক তো খুব উৎসাহিত হয়ে ওদিকে যাওয়ার জন্য আগ্রহী, এটাই তো সমস্যা। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান বাংলাদেশে হোক, তা আমরা চাই না। আর তা হতেও দেব না এটাই হলো বাস্তব কথা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেই না। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্সে’। কারণ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের হাতে আমিও ক্ষতিগ্রস্ত। আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট তিন মাস ধরে দেড় থেকে দুই শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করল, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করল। এসবও তো সন্ত্রাসী কর্মকা-। এরাই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কর্মকা-ে লিপ্ত। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই, সীমানাও নেই। জঙ্গীবাদই তাদের ধর্ম। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আরও সজাগ ও সতর্ক থেকে এদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার উদাত্ত আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের যাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খেলতে যাব না কেন? মেয়েরা খেলতে গিয়েছে পাকিস্তানে। সেখানে আমাদের মেয়েরা খেলতে গিয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। এতে পাকিস্তানের মেয়েরাও সাহসী হবে। আমরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারি। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। এখানে খেলাধুলায় আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে যাব। আন্দোলনরত শিক্ষকদের এক হাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তুলে ধরে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কোন হস্তক্ষেপ করবেন কি না এক সাংবাদিক তা জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষকদের সমালোচনা করে বলেন, আমরা ৯১ ভাগ বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। অতীতে কেউ কোনদিন এত বিপুল পরিমাণ বেতন বৃদ্ধি করেনি। আমার মনে হয় একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি। একটু কমিয়ে দেয়াই ভাল ছিল। আর যতদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন শেষ না হচ্ছে, ততদিন তাদের (শিক্ষক) বর্ধিত বেতনও নেয়া উচিত হবে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ওনাদের (শিক্ষক) কোন কথা নেই, বার্তা নেই, আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে কেন? শিক্ষকরা আন্দোলন করতে যাবে কিসের জন্য? আর যদি করতে হয়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করার কোন অধিকার তো তাদের নেই। তিনি বলেন, সচিবসহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স যেখানে ৫৯ বছর, সেখানে শিক্ষকরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করতে পারেন। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার সুযোগ পেলেও সচিবরা তেমন সুযোগ পান না। যদি সমান করতে হয়, তাহলে তো সব কিছুই সমান সমান হতে হবে। চাকরির বয়স তো কমাতে হবে। আর যতদিন আন্দোলন শেষ না হবে ততদিন বর্ধিত বেতন কেউ নেবেন না, সেই সিদ্ধান্তও দিক। এ বিষয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন করার দরকার ছিল না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। আন্দোলন যেহেতু করছেন, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী আছেন তারা দেখবেন। কমিটি করা হয়েছে তারাও দেখবে। আমরা ওনাদের (শিক্ষক) অনুরোধ করব, ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যত যেন নষ্ট না করেন। অপকর্ম করলে কাউকেই ছাড় নয় ॥ সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে এক স্কুলছাত্র আহত হওয়া প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বিশাল সংগঠন, সে সংগঠনে কিছু ঘটতেই পারে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না সেটাই বড় কথা। আমরা কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দেই না, প্রশ্রয়ও দেই না। কালকে (শনিবার) আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা নিয়ে আলাপ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপনারা সেটি বিবেচনা করেন। তিনি বলেন, তবে এটা তদন্ত করতে হবে। যা ব্যবস্থা নেয়ার নিয়েছি। তার পিস্তলের লাইসেন্স ক্যানসেল করেছি। মামলা দেয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। সুন্দরগঞ্জ জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে জামায়াতের উৎপাত, হত্যা-সন্ত্রাসের ঘটনা সবাই জানেন। এই খুন-খারাবির মধ্যে দলের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। ড. ইউনূস প্রসঙ্গ ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের একটি ডেমোনেস্ট্রেশনে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণের ছবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, যার যার আপন জায়গা সে খুঁজে পেয়েছে। এটা দেশবাসী বিচার করুক। বিএনপি-জামায়াত মিলে সেখানে আন্দোলন করছিল। বাংলাদেশের এত অর্জন সেখানে আমাকে হেয় করার জন্য আন্দোলন করছিল। বাংলাদেশের মানুষই বিচার করবে। আমি এখানে আর কিছু বলতে চাই না। সময়মতো সবই বলা হবে। ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। ট্যাক্স দেবে না, কোর্টে মামলা করে সে ট্যাক্স প্রদান স্থগিত রেখেছেন। তার সম্পর্কে আর কী বলব? তিনি বলেন, একজন তো এমনভাবেই বললেন, আর্মি নাকি আমার পুরো নিয়ন্ত্রণে। এমনভাবে বললেন, যেন উনি আর্মি নিয়ে নাড়ানাড়ি করেছেন। তবে গাছ থেকে ফল পড়ে নাই। বিএনপি নেত্রীর লন্ডন সফর ॥ আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে মিশে দেশ পরিচালনা করবে। ‘কারণ আওয়ামী লীগে অনেক দেশপ্রেমিক নেতা আছে।’ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না, উনি (খালেদা জিয়া) কি করে আওয়ামী লীগে প্রেমিক খুঁজে পেলেন? তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী যদি আওয়ামী লীগে প্রেমিক খুঁজে পান খুব ভাল কথা। উনি তো লন্ডনে বসে ডিম মারায় ব্যস্ত। আর কি কাজ করছেন আমি জানি না। উনি নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-পুতি দেখতে গেছেন খুব ভাল কথা। চিকিৎসায় গেছেন খুব ভাল কথা। আওয়ামী লীগের কার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক আপনারা সাংবাদিকরা আছেন খুঁজে বের করেন। উনি আওয়ামী লীগের কাকে পেলেন এত উপযুক্ত? এ ব্যাপারে আমার কোন কমেন্ট করার নেই। বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা ॥ বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা চালু করা নিয়ে একজন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসবে সবাই যোগ দেয়। সর্বজনীনভাবে এই উৎসব পালন হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়ে পয়লা বৈশাখে আমরা উৎসব বোনাস দিয়েছি। এ সময় তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনারা সংবাদপত্রের মালিকরা ঠিকমতো দেবেন তো বোনাসটা? ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সংবাদপত্রের মালিকরা বোনাসটা দিয়ে দিলে আমি খুশি হব। আশা করি, এটা দেবেন সবাই। এ সময় বিএনপি সরকারের আমলে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে কবি সুফিয়া কামাল নিয়ে তার একটি সংগ্রামের কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দলই হচ্ছে আমার শিকড় ॥ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরিপে প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তুলে ধরে দল এবং সরকারের দূরত্ব ঘোচানো নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা গাছ যখন বেড়ে ওঠে, সে গাছের শিকড় থাকে। আপনি গাছটা দেখেন, ফুলটা দেখেন, ফলটা দেখেন, কিন্তু শেকড়টা দেখেন না। শিকড়ের দিকে কিন্তু কেউ তাকিয়ে দেখেন না। আজকে বলেন আমার রেটিং। আমার রেটিং যাই হোক না কেন, আমার শিকড় হচ্ছে আমার দল। এটা কিন্তু ভুললে চলবে না। আজকে আমি যা কিছু করছি, নিশ্চয় আমার দলের জন্যই করতে পারছি। দলই আমাকে সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দলের সহযোগিতা আছে, সমর্থন আছে বলেই আমি এত দূর উঠতে পেরেছি। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন নতুন উচ্চতায় ॥ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৈশ্বিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল, দৃশ্যমান ও সুসংহত করেছে। এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বরাবরই প্রথম সারতে উচ্চারিত হয়েছে। এসডিজি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের মতো ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশকে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমাদের সরকারের বলিষ্ঠ অঙ্গীকারকে সকল উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশকে আমরা যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছি, সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাব বলে আমি বিশ্বাস করি। সরকারের এই অগ্রযাত্রায় দেশের গণমাধ্যম সব সময় তাদের পাশে থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
×