ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশবিরোধীরা তৎপর

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২ অক্টোবর ২০১৫

দেশবিরোধীরা তৎপর

কথাবার্তা শুনে মনে হতেই পারে বাংলাদেশ নিয়ে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। যে বিষয়টির বিরুদ্ধে সব সময়ই জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছে দেশটি, সন্ত্রাসবাদকে দূরীভূত করেছে ব্যাপকার্থে, সেই বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটা পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়াই সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের অবস্থান রয়েছে বলে পরোক্ষভাবে জানিয়ে দেয়া হলো। যারা জঙ্গীবাদের স্রষ্টা; অর্থ-অস্ত্র দিয়ে পুষেছে তাদের, এমনকি একটি দেশ তো জঙ্গীবাদী ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বছরের প্রথম চার মাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। সর্বত্র স্বস্তি ও শান্তি প্রবহমান। হানাহানি, দ্বন্দ্ব নেই অথচ গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ধ্বংসাত্মক পথ ও পন্থা বেছে নিয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে, যানবাহন পুড়িয়েছে, পেট্রোলবোমা ছুড়ে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত করেছিল দেশবাসীকে প্রায় চারটি মাস হরতাল-অবরোধের নামে। তখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াÑ তিন মহাদেশের তিনটি দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে সতর্ক চলাচলের কথা যেমন বলেনি, তেমনি বাংলাদেশে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা রয়েছে, এমন বাক্যও উচ্চারণ করেনি। সরকার সেসব কর্মকা- দমন করেছেন জনগণের সহায়তায়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবশ্য, বাংলাদেশে সে অর্থে কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী নেই। মাঝে মাঝে দু’একটা সন্ত্রাসী কর্মকা- দেখা গেলেও সেসব কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। কাজেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন হুমকি নেই বাংলাদেশে। ব্রিটেন তো বলেছেই, সেপ্টেম্বরের শেষে বাংলাদেশে হামলার ঘটনা ঘটবে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। তাই তারা ঢাকায় তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলে আসছে যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরুর পর। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গী তথা পাকিস্তানী জঙ্গীদের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ সফরকালে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের ওপর হামলা হতে পারে এমন কাল্পনিক আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষকে। কারা জানিয়েছে, কেন জানিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই একে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়ানরা বলেনি কারা কিভাবে এ ধরনের হামলার কাল্পনিক ও উদ্ভট তথ্য অপপ্রচার করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কাছে কী তথ্য রয়েছে, তারা তা প্রকাশ করেনি। যেমনটা করছে না যুক্তরাজ্য। যে দেশে বিভিন্ন দেশের বংশোদ্ভূত, এমনকি বাংলাদেশীরাও জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট হয়ে সিরিয়া যাচ্ছে। সেই ব্রিটেন তাদের ঠেকাতে বা দমন করতে পারছে না। জামায়াত ও জঙ্গীরা ঘাঁটি গেড়েছে লন্ডনের একটি এলাকায়। অথচ ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার। জঙ্গীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ব্রিটেন একথা অনায়াসে বলা যায়। বাংলাদেশের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামিকে ব্রিটিশ সরকার ফেরত পাঠাচ্ছে না অথচ এই দুই যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে সচেষ্ট রয়েছে বলে বহুবার বলা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যারা তালেবান, আল কায়েদা এমনকি আইএসের স্রষ্টা বলে প্রচারিত রয়েছে, সেই তারা হঠাৎ বাংলাদেশে জঙ্গী খুঁজে পেল কিভাবে, তা স্পষ্ট নয়। আসলে শেখ হাসিনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলা বা উৎখাত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে যারা সচেষ্ট এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিষ্ট নিয়োগ করেছে, তাদের তৎপরতাও হতে পারে এটা। বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের কয়েকদিনের মধ্যে এ অপপ্রচার হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখাও জরুরী। সরকারবিরোধী যে ষড়যন্ত্র অব্যাহত, তারও অংশ হতে পারে এই প্রচারণা। তাই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের সফর বাতিল করানো এবং ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক হত্যার পেছনে কী কার্যকারণ রয়েছে তা অচিরেই বেরিয়ে আসবে। বেড়াল থলে থেকে বেরুবেই। এসব অপপ্রচার রোধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
×