ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কাজে আরও এগিয়ে যেতে প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কাজে আরও এগিয়ে যেতে প্রস্তুত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ মাঠ ও নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে আরও ভালভাবে সাড়া দিতে একটি জাতীয় শান্তিরক্ষা কৌশল গ্রহণ করছে। জাতিসংঘ সদর দফতরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর সোমবার অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় শান্তিরক্ষা কৌশলপত্র প্রণয়ন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে শান্তি মিশনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কো-চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে আরও ৪০ হাজার সেনা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৫০টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্র। খবর বিডিনিউজ ও বাসস’র। শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কাজে বাংলাদেশের অঙ্গীকার দৃঢ় ও অবিচল। মালি, কঙ্গো এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ ব্লু হেলমেটের অধীনে সেনা মোতায়েন করেছে। বিগত বছরের সম্মেলনে বাংলাদেশের দেয়া কিছু প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ পদাতিক বাহিনী ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ইউনিট, ইউটিলিটি হেলিকপ্টার, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যারিটাইম ইউনিট ও অন্যান্য সম্পদ সরবরাহ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তি দিয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে। তিনি বলেন, এগুলো ব্যবহারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা নীতি অনুসরণ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট পিস সাপোর্ট অপারেশন্স এ্যান্ড ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীদের বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষায় অবদানকারী অন্যান্য দেশের সেনা ও পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেসামরিক লোকদের রক্ষা করা এবং নারীদের ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি শান্তিরক্ষীদের দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের সুপারিশমালার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে সারাবিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এবং ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, রুয়ান্ডা ও উরুগুয়েসহ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী এবং গ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। শান্তিরক্ষা মিশনে আরও ৪০ হাজার সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি ॥ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে আরও ৪০ হাজার সেনা (শান্তিরক্ষী) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটির ৫০টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্র। সোমবার এক ঘোষণায় এ তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নতুন কোন অভিযানের প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আকার ও সামর্থ্য বৃদ্ধির বিষয়টি বৈঠকে আলোচিত হয়। এ বিষয়ে ওবামা বলেন, ‘প্রতিটি নতুন অভিযানকে আগেরটির চেয়ে আরও সুসংগঠিত ও কার্যকরী করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ সেনা পাঠানোর পাশাপাশি রাস্তার মধ্যে পেতে রাখা বোমা নিষ্ক্রিয় করা ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ, হেলিকপ্টার এবং মেডিক্যাল ইউনিট পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশগুলো। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার জানিয়েছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ নতুন আরও ৪০ হাজার সেনা ও পুলিশের পাশাপাশি ৪০টি হেলিকপ্টার, ১৫টি সামরিক প্রকৌশলী কোম্পানি ও ১০টি ফিল্ড হাসপাতাল পাঠানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘স্থায়ী শান্তিরক্ষাকারী পুলিশ স্কোয়াড এবং শান্তিরক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আট হাজার সেনার অতিরিক্ত একটি বাহিনী প্রস্তুত রাখার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ১৬টি দেশে চলমান শান্তিরক্ষা মিশনের পাশপাশি অতিরিক্ত শান্তিরক্ষীদের নিয়ে জাতিসংঘ আরও বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তিরক্ষার নতুন মিশন শুরু করতে পারবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ শান্তিরক্ষীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ৮২ জন। এদের মধ্যে ৩৪ জন সেনা, ৪২ জন পুলিশ ও ছয়জন সামরিক উপদেষ্টা। কিন্তু ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাজেটের শান্তিরক্ষা মিশনের ২৮ শতাংশ খরচ বহন করে দেশটি। মিশনে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপদেষ্টাদের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা বাহিনীকে আকাশ ও সাগর পথে উদ্ধার ও প্রশিক্ষণ দেয়াসহ লজিস্টিক সমর্থন বাড়াবে। যখন জরুরীভাবে প্রয়োজন হবে আমরা এককভাবেই সহায়তা করতে এগিয়ে যাব। এছাড়া নতুন মিশনগুলোর জন্য বিমানক্ষেত্র ও ঘাঁটি তৈরি করার মতো প্রকৌশলগত কাজগুলোর দায়িত্ব আমরা পালন করব, বলেন তিনি। সোমবারের এ বৈঠকে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের সেনা সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোমালিয়ায় মোতায়েন জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ৭০ জন সেনা ও বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষিণ সুদানের জাতিসংঘ মিশনে ৩০০ সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যে পাঁচটি দেশ সবচেয়ে বেশি সেনা ও পুলিশ পাঠিয়ে ভূমিকা রাখছে সেগুলো হল- বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং রুয়ান্ডা। বৈঠকে এ দেশগুলোও শান্তিরক্ষা মিশনে আরও বেশি সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
×