ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মর্মন্তুদ!

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মর্মন্তুদ!

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা চলার সময় মিনায় পদদলিত হয়ে বাংলাদেশীসহ ৭৬৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা শোকাবহ ও উদ্বেগজনক। বলা যায় এটা স্মরণকালের ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা মুজদালিফা থেকে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপের জন্য যখন মুসল্লিরা মিনায় যাচ্ছিলেন তখনই এই পদদলনের ঘটনা ঘটে। গত ২৫ বছরের মধ্যে এত বড় প্রাণহানিকর দুর্ঘটনা আর ঘটেনি। বাংলাদেশ হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিনা দুর্ঘটনায় ২২ বাংলাদেশী হাজীও নিহত হয়েছেন। এখনও নিখোঁজ ৯৮ জন। এর আগেও একাধিকবার মিনায় দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। পদদলিত হয়ে হজপ্রত্যাশীর মৃত্যু আজ নতুন নয়। গত ৪০ বছরের মধ্যে মক্কায় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে ১৪২৬ জন, ১৯৯৮ সালে ১৮০ জন, ২০০১ সালে ৩৫ জন, ২০০৬ সালে ৩৬০ জনের বেশি হাজীর মৃত্যু হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর হজ চলাকালে মক্কায় মসজিদুল হারামে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ক্রেন ভেঙ্গে ১১১ জনের মৃত্যু হয়। হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি সরকারের যথেষ্ট সুনাম ও সুখ্যাতি সুবিদিত। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন যাতে সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময়, আরামদায়ক হয় সেজন্য সৌদি সরকারের চেষ্টা ও প্রয়াস বরাবরই দেখা যায়। তারপরও এমন দুর্ঘটনা ঘটল কেন সৌদি সরকারকেই তা খুঁজে বের করতে হবে। সৌদি বাদশাহ সালমান হজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। তার এ নির্দেশ থেকে এটা বলা যায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হয়ত কোথাও ত্রুটি থাকতে পারে। বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। বলা হচ্ছে, হজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অদক্ষতা-অনভিজ্ঞতা-অসহযোগিতা ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, দায়িত্বরত পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, বিভিন্ন দেশের ভাষাজ্ঞানের অভাব, মিনার রাস্তাঘাট ও এলাকাগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট জানাশোনার অভাবের কারণেই এই দুর্ঘটনায় এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি কোন কোন দেশের হাজীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে। আসলে কোন প্রকার দোষারোপে না গিয়ে বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার। হজ ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ জরুরী। এ ব্যাপারে সৌদি সরকার ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ কথা সত্য যে, হজ এমন এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেখানে ধনী-দরিদ্রের কোন ব্যবধান থাকে না। সবাই এখানে সমান ও একাকার। হজ ফরজ হওয়ার পর থেকে হাজীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মিনায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা শোকাবহ ও মর্মন্তুদ। সৌদি সরকার বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এতে কোন ত্রুটি বেরিয়ে আসলে তার যথাযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। নিখোঁজরাও ফিরে আসুন স্বজনদের কাছে এই প্রত্যাশা সবার।
×