ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ আনন্দ

সম্পাদ সমীপে

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সম্পাদ সমীপে

ঈদ মানে হৃদয় উপচানো মন খোলা ফুর্তি। ঘরে ঘরে আড্ডা, বাড়তি আনন্দের ঢেউ। সোনামণিদের চোখে খুশির ঝিলিক। নতুন জামা পরে আনন্দে মেতে ওঠে। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে থাকে আকাশে-বাতাসে। মায়ের হাতে রান্না পিঠা-পায়েশ সে কি মজা। পোলাওয়ের মৌ মৌ গন্ধে মন ভরে যায়। ঈদ মানে নতুন জামার গন্ধ। হাতে চুড়ি, পায়ে আলতা, রঙিন ফিতা চুলে বেঁধে গালে গাল পালিশ মাখতে খুকি ভুল করে না। মনের মাধুরী দিয়ে হাত পায়ে আঁকে মেহেদি আলপনা। মাথায় গোঁজে ফুল, কপালে একে আকাশের তারা বাঙালী ললনারা বধূর সাজে এভাবেই মনের পাখা মেলে। ঈদ বাঙালী সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ। বছর ঘুরে বাংলাদেশের জনজীবনে দুটি ঈদ মহাধুমধামে উদযাপন করা হয়। ইসলাম ধর্মপ্রিয় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জীবনে প্রতিবছর ঈদ আসে দুবার। একটি হলো ঈদ-উল ফিতর বা রোজার ঈদ। অন্যটি ঈদ-উল আযহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ-উল আযহা বা কোরবানির ঈদ বাঙালীর জীবনে আর একটি মহাধুমধামে উদযাপন করার উৎসব। এ ঈদে জামা কাপড় কেনার ব্যস্ততা না থাকলেও কোরবানি দেয়ার প্রতিযোগিতা থাকে ঘরে ঘরে। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি ফরজ দায়িত্বের মধ্যে হজ একটি উল্লেখযোগ্য ফরজ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ছুটে আসে সৌদি আরবে। সেখানে তারা আল্লাহর ঘরে নামাজ আদায় করে বিশ্ব স্রষ্টার প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করে। কোরবানি দিয়ে ও হজব্রত পালনের মাধ্যমে তারা সেখানেই ঈদ-উল আযহা উদযাপন করে। মূলত অবসাদগ্রস্ত জীবন থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যেই এ ঈদ উৎসবের আয়োজন। নিরাসক্ত জীবন নিয়ে কেউ বাঁচতে পারে না। বরং বিভিন্ন ধরনের কুচিন্তা মাথায় এসে ভর করে। জীবনকে চাঙ্গা ও মধুময় করার প্রয়োজনে বিনোদনের দরকার আছে। এ চেতনাকে সামনে রেখে ঈদের আনন্দ উৎসব। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লক্ষ্য করা যায় উপচেপড়া ভিড় ঈদ আনন্দকে ডালিমের মতো কেটে কেটে উপভোগ করাই সবার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। ফুলের মতো কচি শিশু যারা মুক্তাদানার মতো ফোকলা দাঁতে হাসে। ঈদ হলো তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় উৎসব। গোলসান আরা বেগম কিশোরগঞ্জ। তবুও চাই নদী রক্ষা... দিন যতই যাচ্ছে ‘নদীর দেশ বাংলাদেশ’-এর নদীগুলোর বিরাট অংশজুড়ে জেগে উঠেছে চর। বিশাল নদী পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অবস্থাও ওই একই। নদীর কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে চর। কোথাও কোথাও নদীর আয়তন ছোট হয়ে এসেছে আবার কোন কোন নদী মরেও গেছে। বড় বড় নদী থাকায় একদা কিন্তু নদী তীরে গড়ে উঠেছিল কত না হাট-বাজার-বন্দর-গঞ্জ। অসংখ্য নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় কত না জেলার হাট-বাজার-ঘাট অন্যত্র সরে গেছে। আবার বিলুপ্তও হয়েছে অসংখ্য হাট-বাজার-ঘাট। নদীতে চর পড়ায় কত না নদীতে এখন চলে না লঞ্চ-স্টিমার। প্রায় মরে যাওয়া নদী তীরের ঘাটগুলোর কোথাও কোথাও চাষাবাদ হচ্ছে নয়ত গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। উত্তরের জনপদের লোকজন স্টিমারে চলাচলের কথা আজ আর মনেও করে না। চিরতরে হারিয়ে গেল বাহাদুরাবাদ ঘাট-ফুলছড়ি ঘাটে চলাচলকারী সেই স্টিমার। কখনওবা চোখের পাতায় আজও ভেসে ওঠে ৩২ বছর আগেকার ঘটনা। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে বাহাদুরাবাদ ঘাটে নেমে স্টিমারে ওঠা-তারপরও ৪ ঘণ্টার ভ্রমণ। যমুনার ওপারে ফুলছড়ি ঘাটে যাওয়ার মুহূর্তগুলো কী ভোলার। স্টিমারের ডেকে বসে যমুনার রূপ দেখে মনে পড়ত ‘শহর থেকে দূরে’ ছবিতে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গাওয়াÑ ‘ঝাঁপ দিলি তুই মরণ যমুনায়’ গানের কথা। আব্বাস উদ্দিন আহমদের গাওয়া-নদীর একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ে’ আর নদীর কূল নাই কিনারা নাই গান দুটির কথাও মনে পড়ত বেশ করে। গোয়ালন্দ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলত স্টিমার-তাত এখন ধূসর স্মৃতি। এক সময় ঈশ্বরদীর সাঁড়া বন্দরে স্টিমার এসে ভিড়তÑ সে কথাও আজ কেউ মনে করে না। সাঁড়া বন্দরের সেই হাট-ঘাট অনেক আগেই বিলীন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথের লঞ্চ, স্টিমার, গয়না, বড় বড় নৌকা কত কি! কেউ কোনদিন ভাবতে পারেনি, গলাচিপা থেকে সড়কপথে বাসে ঢাকা যে আসা যাবেÑ তাও সম্ভব হয়েছে কয়েক বছর আগে। এ রকম উদাহরণের অভাব নেই। উন্নয়নের ছোঁয়ায় দেশজুড়ে সর্বত্র সড়কপথ স্থাপিত হওয়ায় নদী পথের কথা আজ ভুলতে বসেছে দেশের আপামর জনগণ। সবাই যেন আজ চলাচল করছে সড়কপথে বাসে, রেলপথে ট্রেনে। সময়ও লাগছে কম। যে জন্য লোকসানের কারণে দক্ষিণের অনেক নৌপথে আর চলাচল করে লঞ্চ-স্টিমার। ঢাকা থেকে খুলনা নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চ-স্টিমার বন্ধ হয়ে গেছে বহু বছর হয়Ñ নদী ভরাট, নাব্য হ্রাস পাওয়া, চর পড়ার কারণেই আজ এ দৈন্যদশা অথচ তিন যুগ আগেও বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, যশোরের লোকজন নদীপথে লঞ্চে-স্টিমারে করে আসতেন ঢাকায়। এ প্রজন্মের কাছে নৌপথের লঞ্চ-স্টিমার যেন বাপ-দাদার আমলের রূপকার। তবে যে দিকে তাকায় দেখি নদীতে চর জেগেছে চিকচিক করছে বালু আর বালু। অপরদিকে বিস্তীর্ণ এলাকায় শুনি জেলেদের হাহাকার। ওদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘নদীতে জল নাই, মাছ নাই বাঁচব কিভাবে।’ লিয়াকত হোসেন খোকন রূপনগর, ঢাকা।
×