ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেটের কিংবদন্তি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ক্রিকেটের কিংবদন্তি

বলা যায়, ‘এসেছিলেন বলেই দেখা হলো, কথা হলো, প্রেম হলো। যদি না আসতেন, তবে? ‘হ্যাঁ’, তবে বাংলাদেশবাসী পেত না তার অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। ছিলেন তিনি বাঙালী অন্তঃপ্রাণও। তাঁর সমর্থন ও সহযোগিতায় বাংলাদেশের ক্রিকেট যেমন পেয়েছে প্রাণ, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্মানও। তারই সহায়তায় বাংলাদেশ পায় টেস্ট স্ট্যাটাস। শুধু তাই নয়, আরও নানাভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন তিনি। আইসিসি চেয়ারম্যান নারায়ণ স্বামী শ্রীনিবাসন আইসিসি সভাপতি বাংলাদেশের আ হ ম মুস্তাফা কামালের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তারপর যখন বাংলাদেশ ভারত ক্রিকেট সম্পর্ক নিয়ে অনেকে টানাপোড়েন আশঙ্কা করেছিলেন, তখনও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নিয়ে এক বৈঠকেই সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। চট্টগ্রামের পাথরঘাটা থেকে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় চলে যাওয়া ঘোষ পরিবারের জামাতা ডালমিয়া চমৎকার বাংলা বলতেন। কলকাতার মাড়োয়ারি পরিবারের সন্তানটি কলেজ টিমে এবং ক্লাব পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। তারপর পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিয়ে ক্রীড়াঙ্গন থেকে সরে যান। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ফিরে আসেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে যোগ দিয়ে। তারই প্রচেষ্টায় ১৯৮৭ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপ উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে আইসিসি সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেও ২০০০ সালে টিভি রাইটস বিবাদে আইসিসি ছেড়ে দিলেও পরের বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের জেরে শ্রীনিবাসন সরে দাঁড়ালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ডালমিয়া। ২০১৫ সালের মার্চে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচিত হন। এক সময় প্রচার ছিল ডালমিয়া ক্রিকেটারদের শত্রু। কিন্তু তিনি প্রমাণের চেষ্টা করতেন যে, তিনি ছিলেন ক্রিকেটারদের কর্মকর্তা, কর্মকর্তাদের কর্মকর্তা নন। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটে এই রকম বিস্তৃত প্রভাব জীবিত বা মৃত কোন কর্মকর্তারও নেই। ক্রিকেটারদের মধ্যে সুনীল গাভাস্কার ও প্রশাসকদের মধ্যে ডালমিয়া মিলে তিন দশক ছিল রাজযোটকের রাজত্ব। বাঙালী ক্রিকেটামোদীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সৌরভ গাঙ্গুলীকে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা। ডালমিয়া না থাকলে ভারতীয় ক্রিকেট পশ্চিমবঙ্গের বেহালার সন্তান সর্বকালের সেরা অধিনায়ক সৌরভকে পেত না। একই সঙ্গে রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তিন রকম ক্রিকেট মানচিত্রে এমন দাপুটে ক্রিকেট জগত কখনও দেখেনি। ভারতীয় ক্রিকেটের ম্যাকিয়াভ্যালি হিসেবে পরিচিত ডালমিয়া ক্রিকেটে বর্ণবাদ প্রথাকে উচ্ছেদ করেছেন। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ মনোভাবকেও দূরীভূত করেছেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে ক্রিকেট জগতের সঙ্গে যুক্ত ডালমিয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ছিলেন সত্যিকারের শুভাকাক্সক্ষী। ২০০০ সালের জুন মাসে আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ক্ষেত্রটি সহজতর ছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মোড়ল দেশগুলো বরাবরই ছিল বাংলাদেশের মতো দলের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার বিপক্ষে। কিন্তু সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন ডালমিয়া। তিনিই সর্বাগ্রে বাংলাদেশকে প্রথম এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই সহায়তা না পেলে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেত না। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডালমিয়ার যে অবদান তা ভুলে যাওয়ার কোন অবকাশ ক্রিকেটপ্রেমীদের হবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার পথটি তারই তৈরি। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশসহ ক্রিকেট বিশ্বই হারাল এক শ্রেষ্ঠ সংগঠককে। সফল জীবন ছিল তার। ক্রিকেট দুনিয়াকে চিরবিদায় দিয়েছেন আধুনিক ক্রিকেটের সফল এই সংগঠক। নিজের দুটি চোখও দান করে গেছেন। তার অবদান বাংলাদেশসহ বিশ্ব ক্রিকেটামোদীরা স্মরণ করবে। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা থাকুক অটুট।
×