ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক

সম্প্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট, যা ছিল খুবই কম- এক লাখ টাকায় মাত্র সাত শ’ পঞ্চাশ টাকা, সেটি প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে ঢাকার পুলিশের তৈরি যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীকে রাজপথ বন্ধ করে এমন একটি অসহনীয় অযৌক্তিক পন্থায় প্রতিবাদ করতে দেখা গেল, যার মধ্যে অনেক মন্দ বৈশিষ্ট্য অন্তত আমাকে আহত করেছে। কেননা, ১। আমার দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কোন দাবি বা প্রতিবাদ জানাতে পুরো শহরের অফিসযাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ সব দরিদ্র পেশাজীবী- সব রকমের চালক, ফেরিওয়ালা, বাজার হাটের পণ্য বিক্রেতা, ক্রেতাÑ সবার যাতায়াতের পথ রুদ্ধ করেছে, এমনটি কখনও দেখিনি। তাদের শহীদ মিনার, প্রেসক্লাব অথবা টিএসসি, শাহবাগ মোড়, এমন কয়েক স্থানে প্রতিবাদ জানাতে দেখেছি। ফলে পুরো ঢাকার রাজপথের যাতায়াত এতটা বাধাগ্রস্ত হতে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। ২। এদের মধ্যে একটা অজ্ঞতা এবং রাজনীতি চর্চার অভাব প্রকাশ পেয়েছে। জাতির বিভিন্ন শ্রেণী পেশার স্বার্থ রক্ষা করে যে অধিকার দাবি করতে হয়, তার অভাববোধ দেখেও দুঃখিত হয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোন বিতর্ক নেই যে, শিক্ষা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। তবে সব অধিকারের সঙ্গেই চলে আসে- ওই নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, রাষ্ট্রের প্রতি, জাতির সব পেশার মানুষের প্রতি। তাছাড়াও, ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স দিয়েই সব রাষ্ট্রের সরকারী কোষাগার তৈরি হয়, সে সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞান থাকতে হবে। বুঝতে হবে, সরকার রাস্তাঘাট, রেলপথ, রেলগাড়ি, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, প্রকৌশল, সাধারণ শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র, হাসপাতাল, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স- হাজারও রকমের অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জাতির সব পেশার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করে। এই যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে করছে- এর জন্য যে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, এ বিপুল অর্থ কোথা থেকে আসবে? এ কথা কি কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা ভেবে দেখেন? আমি তো জানি, বহু শিক্ষক আছেন যাঁরা নানারকম গবেষণা, কনসালটেন্সি করে অনেক অর্থ উপার্জন করেও তার ওপর যথার্থ অথবা কোন ট্যাক্স দেন না। তাহলে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া শিক্ষকদের পথ অনুসরণ করে ছাত্রছাত্রীরা যদি বড় হয়ে ভাল উপার্জন করেও কর ফাঁকি দেয়াকে প্রথা মনে করে- তাহলে শিক্ষার্থীদের আগে এসব কর ফাঁকি দেয়া শিক্ষকরা দোষী হিসেবে গণ্য হবে। আশা করি, এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভাল আয় করে সরকারকে যথোপযুক্ত কর প্রদান করবে। বর্তমানে যারা বাণিজ্য শাখায় শিক্ষা লাভ করে, তারা কি তাদের শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যবইতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার তৈরির জন্য যে বাজেট হয়, তাতে যে কর, শুল্ক ও ভ্যাট থাকে সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাঠ করে? এটি অবশ্য আমার জানা নেই। আমার তো মনে হয়, তাতে রাজস্ব বা কর প্রদান কেন প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব, সেটি সব ধারার শিক্ষার্থীদের জানা দরকার। উপরন্তু, এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে হারে বেতন নেন, তা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতনের চেয়ে কত গুণ বেশি? এবং ওই অতিরিক্ত বেতন থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরকারকে কিছু শতাংশ হারে কর বা ভ্যাট দেন নিশ্চয়, তবে তা কত পার্সেন্ট? বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কি শিক্ষা সেবা প্রদান করছে? নাকি বিপুল বেতনের মাধ্যমে শিক্ষা-বাণিজ্য করছে? যে কোন বাণিজ্যে কর বা ভ্যাট তো থাকবেই, এটি পূর্ণ বয়স্ক শিক্ষার্থীরা নিশ্চয় বোঝে। ধরা যাক, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খেলে বা এক জোড়া জুতো কিনলে কিংবা একটি শাড়ি-পোশাক কিনলে, শিক্ষার্থীরা বিক্রেতাকে ভ্যাট দিতে বাধ্য। ওখানে, কোন আন্দোলন চলবে না, এত জানা কথা। তবে হ্যাঁ, কিছু দোকান আছে যারা বলবে, আপনি যদি রসিদ না চান, তাইলে ভ্যাট যোগ করব না। রসিদ ছাড়া পণ্য কিনতে অল্পবয়সীদের প্রায় সময়ই দেখে থাকি! রসিদ নেয়া, না নেয়ার পার্থক্যটি ওরা শিক্ষিত হলেও জানে না। ওদের এ বিষয়ে সচেতন করা দরকার বলে মনে করি। সরকার জনজীবন স্থিতিশীল করতে এবং শিক্ষা একটি অধিকার- এ কথাকে সম্মান দেখিয়ে দ্রুত শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যা সবাইকে আশ্বস্ত করেছে। তবে, শিক্ষার্থীরা প্রকৃত পক্ষে তাদের প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সরকারকে দেয় ভ্যাট প্রত্যাহার করায় এখন প্রাইভেট স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠানের দেয় ভ্যাট, যেটি পণ্যের ক্রেতা শিক্ষার্থীরা প্রদান করে, সেটি প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে অথচ, দীর্ঘদিন যাবত ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলগুলো এই ভ্যাট পরিশোধ করে আসছিল, যা এখন হবে বৈষম্যমূলক! এখন প্রশ্ন হচ্ছে- সরকারের বাজেটের অর্থাৎ বার্ষিক ব্যয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহের অনেক উৎস হ্রাস পাচ্ছে, তা কিভাবে পূরণ হবে? সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি চিন্তিত, আরও চিন্তিত, শিক্ষা-বাণিজ্য পরিচালকদের স্বার্থই রক্ষা করল শিক্ষার্থীরা। সেটি সংশোধন করার উপায় কিভাবে করা সম্ভব, তা দেশের কল্যাণকামী অর্থনীতিবিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকবৃন্দ সরকারের সঙ্গে বসে একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যার কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেড ও বেতন নিয়ে চলছে শিক্ষক আন্দোলন। এটা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে জামায়াত-বিএনপিপন্থী শিক্ষক নিয়োগ হবে না। যদিও বিএনপি আমলে মুক্তিযুদ্ধপন্থী শিক্ষক বা আমলা নিয়োগ প্রায় অকল্পনীয়! তাছাড়া, অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সমালোচিত ও প্রচলিত দ্রুত পদোন্নতি লাভ, পদের আপগ্রেডেশন, হাউস টিউটর হওয়া, গবেষণা পত্রিকায় মামুলি পেপার ছাপা হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পয়েন্ট সংগ্রহ করে যোগ্য-অযোগ্য সব শিক্ষক প্রভাষক থেকে দ্রুত প্রফেসর হয়ে যাচ্ছেÑ এর সমালোচনা করেছেন। প্রফেসরদের বেতন, ভাতা বর্তমান সরকার শেষ যে বার বৃদ্ধি করেছিল, তার ফলে তাদের কারও কারও মতে তারা এত বেশি বেতন পাচ্ছে যে, এ টাকা রাখি কোথায়, এমন অবস্থা হয়েছে বলে তাদের মুখেই শুনেছি! যাই হোক, সব পেশাজীবীর মধ্যে যেমন যোগ্য-অযোগ্য, দক্ষ-অদক্ষ আছে, প্রশাসকদের মধ্যে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় নোট লেখার মতো কর্মকর্তারও যে অভাব প্রকট, তা তো সত্য! তেমনি, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী সবার মধ্যেই অযোগ্য ব্যক্তি আছে। এর কারণ, মানুষ গড়ার কারিগর অর্থাৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে যেখানে উচ্চ শিক্ষা গড়ে ওঠে, শিশু-কিশোররা মাতৃভাষা বাংলা, ইংরেজী ও গণিত- এই মৌলিক, সব শিক্ষার ভিত, মূল দক্ষতা প্রদানকারী বিষয়গুলোর দক্ষতাগুলো শিখে থাকে। তাদের এই শিক্ষা জিপিএ পাঁচ লাভের সঙ্গে একেবারেই সম্পর্কযুক্ত নয়, বরং তারা নিজ মনের ভাব ওই দুই ভাষায় শুদ্ধভাবে প্রকাশ করতে শিখেছে কিনা, গণিতের দক্ষতাগুলো- যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, ভগ্নাংশ ইত্যাদি সমস্যা হিসাবের নিয়ম শুদ্ধভাবে ব্যবহার করে অঙ্ক করতে পারে কিনা, তার ওপর নির্ভর করে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন, কোন কলেজ শিক্ষকের পক্ষে দুর্বল মৌলিক শিক্ষা নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের ওই সব দক্ষতার দুর্বলতা দূর করে দেয়ার কোন সুযোগ নেইÑ এটা উচ্চ শিক্ষার শিক্ষকরা জানেন। সেজন্য, মেধাবী ও অধিকাংশ বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষকদের অনেকের পক্ষে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নিয়ে অর্থোপার্জন সম্ভব হচ্ছে। অনেকে পাবলিক থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশি বেতনের চাকরিতেও চলে যাচ্ছেন। এছাড়া, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল মানের কয়েকটিতে শিক্ষার্থী আসে ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল থেকে। এদের অধিকাংশ বাংলা মাধ্যমের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয় না। তবে মাদ্রাসা ছাত্ররা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সে যাই হোক, কথা উঠেছে- সচিব বা আমলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সচিব হয়েছে। তাহলে তাদের শিক্ষকদের গ্রেড তাদের আমলা ছাত্রদের অন্তত সমান হবে না কেন? এটি শিক্ষকদের প্রশ্ন, যা যুক্তিযুক্ত। সরকার খুব সহজেই প্রতিবেশী দেশ ভারত বা শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের তুলনা করে দেখতে পারে, সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসতে পারে এবং একটি সম্মানজনক বেতন স্কেল উভয়পক্ষ মিলে প্রণয়ন করতে পারে। তবে, এটা ঠিক, কয়েকটি মানসম্পন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রায় সব ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে যোগ্য করে তোলার শিক্ষাটি দেয়া হয়। সমস্যা হচ্ছে, এসব স্কুল টিচার যেহেতু শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা শিশু-কিশোর মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে কিছু পাঠ গ্রহণ না করে পাঠ দান করে, সেহেতু তাদের কারিকুলাম তুলনায় অনেক ভারি, শিশুদের বয়স-মেধা-গ্রহণ ক্ষমতার অনেক ওপরে, যা অর্জন করতে দেখা গেছে অনেক শিশু শিক্ষার্থীর বেশ কষ্ট হয় এবং বড় কথা, অনেক ক্ষেত্রে ঐসব পাঠ হয় অপ্রয়োজনীয়। তবে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে- এখানে কোন শ্রেণীতে কেউ ফেল করে না এবং অন্তত ক্লাস এইট পর্যন্ত ক্লাসের বাইরে বাড়তি কোচিংয়ের প্রয়োজন হয় না। সাধারণত নাইন, টেন এ ‘ও লেভেলে’র পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অনেকে কোচিং গ্রহণ করে। সাধারণ শিক্ষার বাংলা মাধ্যমের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, বায়োলজি, বিজ্ঞান ইত্যাদির জন্য বিষয়ভিত্তিক কোচিং-এ যেভাবে অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়, তা কিন্তু ইংরেজী মাধ্যমের অন্তত এইট পর্যন্ত শিশুদের করতে হয় না। ওরা কেউ কোন গাইড বইও ব্যবহার করে না। এই কারণে, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারকে কষ্ট করে উচ্চ বেতনে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে শিশুদের পড়তে পাঠাতে দেখা যাচ্ছে। অনেক পরিবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ বেতনে ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছে, যেহেতু সেমিস্টার সিস্টেমে এখানে কোন বছর নষ্ট হয় না। পড়াশোনা তাড়াতাড়ি শেষ হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায়। রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাতেও এখানে ছাত্র বা শিক্ষক পড়াশোনা বন্ধ করতে পারে না। বিরল উদাহরণ হচ্ছেÑ এবারের ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাজপথ বন্ধ করে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অবশ্যই তাদের ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, শিক্ষা যদি সব শিশুর অধিকার হয়, তাহলে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এবং শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতে কি একটি সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন নয়? সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিদ্যা, সামাজিক বিদ্যা, বিজ্ঞান বিভাগ থাকা জরুরী। শুধু কমার্স ও আইসিটি বিভাগগুলো থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় হবে না। নতুবা, শুধু বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেটিকে ‘বাণিজ্য কলেজ’ নামকরণ করতে হবে। ইউ.জি.সি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেসব শর্ত অবশ্য পূরণীয় বলে নির্ধারণ করেছে, সেসব শর্ত পূরণ করেই তাদের অনুমোদন নিতে হবে। এটি কত সময়ে হবে তা ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলে ঠিক করতে পারে। বুয়েট বা পেশা ও জীবিকা- বৃত্তিভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেগুলোতে কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে, তাও ইউজিসিকে নির্ধারণ করতে হবে। সবশেষে বলতেই হবে- মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি না হওয়া পর্যন্ত উচ্চ আয়ের কেন, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবেও পরিচয় দেয়া সম্ভব হবে না এবং এই মানসম্মত শিক্ষা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে অর্জিত হতে হবে, কেননা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ও হিসাবের দক্ষতার উন্নয়নের শিক্ষা কোনমতেই সম্ভব নয়। প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখা যাচ্ছে আরও বেশি গাইড ও মুখস্থ বিদ্যানির্ভর হয়ে পড়ছে। তাই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষাগুলো প্রত্যাহার করে, শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজী ভাষা শেখাতে হবে অবশ্যই প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করে নয়। শুদ্ধভাবে লিখতে-পড়তে পারা এবং গণিতের মৌলিক দক্ষতাগুলো ভালভাবে শিখাতে হবে, কারণ গণিত ছাড়া বিজ্ঞান শেখা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে কম্পিউটার ব্যবহারও শিখতে হবে। এ দিয়েই ওদের উন্নতমানের উচ্চ শিক্ষা, জীবিকার শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা যে কোন বিষয়ে শিক্ষা মানসম্পন্নভাবে অর্জন সম্ভব হবে। বলাবাহুল্য, ইংরেজীতে কথোপকথন শেখানোর দরকার হয় না। বিদেশী ভাষায় কথোপকথন মানুষ তখনই শেখে, যখন সে বিদেশী পরিবেশে বসবাস করে, জীবনযাপন করে, জীবিকার কাজ করে। তখনই সে দ্রুত বিদেশী ভাষায় কথোপকথন করতে শেখে। কেননা বাস্তবের প্রয়োজনে হাতেকলমেই তো তখন সে ভাষাটি শিখছে। একথা আগেও বলেছি। কেউ কর্ণপাত করে না। সুতরাং শিক্ষার্থী মুখস্থ বিদ্যার দিকে ধাবিত হয় ফেল করার হাত থেকে বাঁচতে! কখন বেচারা এই শিক্ষার্থীরা যথার্থ শিক্ষিত হবে, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার হাত থেকে বাঁচবে, সে সুদিনের অপেক্ষায় আছি। লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক
×