ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনাবিল আনন্দ, দিনভর হুল্লোড় - মনোরম পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অনাবিল আনন্দ, দিনভর হুল্লোড় - মনোরম পরিবেশ

মোঃ খলিলুর রহমান ॥ সোয়ান এ্যাডভেঞ্চার ও প্যারাট্রুপার রাইড্সে চড়ে আনন্দে উদ্বেলিত সাত বছরের শিশু স্মৃতি। শুধু স্মৃতিই নয়, তার মতো শ’য়ে শ’য়ে শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী লোকজন বিনোদনের জন্য ছুটে আসছে ‘এ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড এমিউজমেন্ট’ পার্কে। চড়ছে তাদের পছন্দের রাইড্সে। ঘুরছে পুরো পার্ক এলাকা। মেতে থাকছে সারাদিন হইহুল্লোড়সহ বিভিন্ন মাতোয়ারায়। হাতের কাছেই বিনোদনের পার্ক পেয়ে মহাখুশি আশপাশের বিনোদন প্রিয়াসী লোকজনও। পোশাক কারখানার কর্মচারী রুবেল মিয়া তার মেয়ে স্মৃতি ও স্ত্রী ইতিকে নিয়ে বিনোদনের জন্য ছুটে আসেন এ পার্কটিতে। সারা বিকেল কাটিয়ে বিনোদন শেষে ফিরে যান নিজ গন্তব্যে। ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের পাশেই নির্মিত হয়েছে পার্কটি। গত সাত সেপ্টেম্বর এ পার্কের বিনোদনের দ্বার উন্মোচন করা হয়েছে। প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটীতে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে নির্মিত হয়েছে পার্কটি। পার্কটি শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের বিনোদন প্রিয়াসী মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। পার্কটি নানা রঙে, ডিজাইনে, ফুলে, আলোকসজ্জায়, গাছ লাগিয়ে, লেক তৈরি করে ও বিভিন্ন রাইডস বসিয়ে করা হয়েছে বেশ আকর্ষণীয়। ইতোমধ্যে চালু হয়েছে আটটি রাইডস। পার্কটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। উদ্বোধনের দিন থেকেই বিনোদন পিয়াসী শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী লোকজন ছুটে আসছে পার্কটিতে। বিকেল হলেই পার্কটিতে বেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী লোকজনের আনাগোনা। পার্ক নির্মাণের ফলে এখানাকার পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে এখানকার মানুষের আয়ের পথও। অনেকেই পার্কটিকে ঘিরে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিকল্পনাও করছেন। কেউ কেউ আবার শুরু করেছেন নানা ধরনের ব্যবসাও। সব মিলেই পার্ককে ঘিরে পঞ্চবটী এলাকাটি হয়ে উঠছে আকর্ষণীয়। ঢাকা-পোস্তখোলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের ফতুল্লার পঞ্চবটী থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক। এ সড়কের পাশেই পঞ্চবটীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে ‘এ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড এমিউজমেন্ট’ পার্কটি। পঞ্চবটীতে সিটি কর্পোরেশনের জমিতে এ পার্ক তৈরি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সূত্র থেকে জানা গেছে, পিপিপির আওতায় সিটি কর্পোরেশনের পঞ্চবটীতে ছয় দশমিক বিশ একর জায়গায় এ পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে পার্কের কাজ শুরু হয়। পার্কটি নির্মাণ করেছেন জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান। জমি সিটি কর্পোরেশনের আর অর্থায়ন জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনালের-এ চুক্তিতে এ পার্ক নির্মাণ করা হয়। পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেন, শিশুদের পছন্দের আকর্ষণীয় নানা রাইড ছাড়াও বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এই পার্কে। তাই এ পার্কে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের আনন্দের কমতি হবে না। পার্কের কর্মচারী রায়হান বলেন, পার্কটিতে প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে দেড়শ’ টাকা (সঙ্গে একটি রাইড ফ্রি), তিন থেকে চার ফুট লম্বা শিশুদের জন্য একশ’ টাকা, তিন ফুটের নিচের শিশুদের প্রবেশ ফি দিতে হবে না। রাইডসের প্রতিটি টিকেটের মূল্য ওয়ান্ডার হুইল, মেরি গো রাউন্ড, পেরাট্রোপার, সোয়ান এ্যাডভেঞ্চার, হানি সুইং, সান্তা মারিয়া, কিডস জোন (দু’টি খেলনা) ৫০ টাকা করে। কিডস জোনে ২০টি খেলনা রয়েছে। টুইসটারের টিকেটের মূল্য ৬০ টাকা। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে আসা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সফিউদ্দিন বলেন, জনপ্রতি প্রবেশ ফি’র নির্ধারিত টাকা বেশি হয়ে গেছে। রাইড এর টিকেটের মূল্যও বেশি। মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের নিয়ে এতো উচ্চ মূল্যের টিকেট কিনে রাইডসে চড়তে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইল থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আফিজ উদ্দিন জানান, নারায়ণগঞ্জে পার্কটি নির্মিত হওয়ায় এ জেলার বাসিন্দাদের বিনোদনের একটি জায়গা হয়েছে। বিনোদনের জন্য যানজট পেরিয়ে শিশুদের নিয়ে অন্যত্র যাওয়া আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়াত। পার্কে সরেজমিন গেলে কর্মচারীরা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শিশু ও বিনোদন পিপাসুদের জন্য বাম্পারকার, টুইস্টার, মেরী-গো-রাউন্ড, ওয়ান্ডার হুইল, হানি সুইং, সান্তা মারিয়া, সোহান এ্যাডভেঞ্চার, প্যারাট্রুপারসহ জনপ্রিয় ৮টি রাইড ও আকর্ষণীয় কিডস রাইড সংবলিত কিডস জোন নিয়ে পার্কটি উদ্বোধন করা হয়েছে। ফ্যামিলি ট্রেন নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া রোলার কোস্টার, অক্টোপাস, পানি এ্যাডভেঞ্চার ও আন্তর্জাতিকমানের ওয়াটার পার্ক বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লেক, ফোয়ারা, ফুলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য জুসবার, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও রেস্টহাউস তৈরি করা হচ্ছে। মূল ফটকের সামনে গাড়ি পার্কিংয়েরও বিশাল জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পার্ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত ১৫০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবেশ ফির সঙ্গে একটি রাইড ফ্রি। তিনি বলেন, আসছে ঈদ-উল-আযহা ও শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে এখন পরীক্ষামূলকভাবে পার্কটি উন্মুক্ত করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও অত্যাধুনিক জনপ্রিয় রাইডগুলো বসানো হলে আগামী ২০১৬ সালের শেষ দিকে পার্কটির কাজ সম্পূর্ণ সমাপ্ত হবে। প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাসহ এই জেলাকে বিনোদনের দিক থেকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্ন পূরণ হবে। শুধু নারায়ণগঞ্জই নয়, ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার মানুষও এখানে এসে ভাল বিনোদন পাবে বলে তিনি মনে করছেন।
×