ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সারে আক্রান্ত গুণী বেহালাবাদক

আলমাস আলী বাঁচতে চান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আলমাস আলী বাঁচতে চান

সাজু আহমেদ ॥ আমাদের দেশের বিভিন্ন অঙ্গণের শিল্পীদের প্রায় সবাই কম-বেশি চেনেন। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পী এবং সঙ্গীতশিল্পীরা জনপ্রিয়তার সুবাদে নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। গীতিকার ও সুরকারদের এক-আধটু খোঁজ থাকলেও একেবারে অন্তরালে থেকে যান আমাদের দেশের গানের জগতের অন্যতম নেপথ্য কারিগর যন্ত্রীশিল্পীরা। সারা জীবন অন্যের আনন্দদানের জন্য কাজ করে গেলেও শেষ জীবনে তারা বেশিরভাগই অবহেলিত হোন। বিশেষ করে কোন শিল্পী যদি অসুস্থ হোন তাহলে কোন কথাই নেই। ধুকে ধুকে নি:শেষ হতে হয় তাকে। বিশেষ ব্যবস্থায় স্বহৃদয় সরকারের কর্তাদের নজরে না পরলে নীরবে নিভৃতে, শত যন্ত্রণা সয়ে সয়ে তাকে এক সময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। তবে শিল্পীদের শেষ জীবনে করুণ পরিণতির জন্য সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ নাথাকাকে দায়ি করেছেন অনেকেই। জনপ্রিয় শিল্পীরা হয়তোবা কোন কোন সময় সরকারি বা ব্যাক্তিগত সাহায্যে সুচিকিৎসায় বেচে যান। কিন্ত নেপথ্য শিল্পীদের অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। এই যখন বাস্তবতা তখন দেশের গুণী নেপথ্য শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম বেহালাবাদক আলমাস আলী অনেকটা অন্তরালেই হারিয়ে যেতে বসেছেন। আলমাস আলীর পরিবার সুত্রে জানা গেছে বছরখানেক আগে বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বর্ষপূর্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি বেহালা বাজাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি ব্রেন স্ট্রোক করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, তার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী রেডিওথেরাপি ও কোমোথেরাপি দেয়ার পর অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু পরিবারের পক্ষে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। পরিবারের সদস্যরা আশা করেন সমাজের প্রভাবশালীরা যদি তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন। হয়ত আবার তার বেহালার মধুর সুরে মুখরিত হবে বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন। সুস্থ হয়ে আলমাস আলী আবারও তার বেহালায় নতুন করে সুর তুলবেন এই প্রত্যাশা পরিবারের সদস্যসহ সঙ্গীতাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। প্রসঙ্গত, সারাজীবন বিভিন্ন শিল্পীর গানের জন্য বেহালা বাজিয়েছেন আলমাস আলী। তার বেহালার সুর রয়েছে বাংলাদেশের হাজার হাজার গানে। বাংলাদেশের রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতে নিপুণভাবে বেহালা বাজাতেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব বেহালাবাদক এবং সঙ্গীত প্রযোজক। একাধারে তিনি একজন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। বাবা রজব আলী দেওয়ানও দেশের একজন প্রখ্যাত বাউল ছিলেন। বাবার কাছে ছিল তার সঙ্গীতের শুরু। চাকরিজীবনের প্রায় শুরু থেকেই তিনি বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রায় সব জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে প্রোগাম করেছেন। বাংলাদেশের প্রায় সব সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান কিংবা এ্যালবামের গানে তিনি বেহালা বাজিয়েছেন।
×