ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

’১৬ সালের মধ্যেই আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ

চট্টগ্রামে চীনের জন্য নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চট্টগ্রামে চীনের জন্য নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে

হামিদ-উদ-জামান মামুন ॥ চীনের জন্য নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এটি তৈরির জন্য ৭৭৪ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি তৈরি হলে চীনা কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি, বহুমাত্রিক পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জমি অধিগ্রহণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত আনোয়ারা-২ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ (চায়নিজ অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে বলা হয়েছে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যেই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে চায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানায়, গত দু’দশকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতাভুক্ত বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিশ্বে বিনিয়োগ সহায়ক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সরকারের সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নে বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। দেশের দারিদ্র্যবিমোচন ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলভিত্তিক শিল্পোন্নয়নের ধারণা অর্থনীতির ভিত্তিকে সুদৃঢ় করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন, বেকারত্ব হ্রাস, মহিলাসহ সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার জন্য শিল্পায়ন প্রয়োজন। লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত ও শিল্পোদ্যোগ বিস্তার লাভে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৬ থেকে ১১ জুন চীন সফরকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী সেদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব করেন। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভূমি সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী সম্মতি প্রদান করেছেন। ২০১৪ সালের ৯ জুন বেজা ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তের ভিত্তিতে ভূমি প্রদান করবে এবং চীন সরকার মনোনীত প্রতিষ্ঠান ওই ভূমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে নির্বাচন করা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের গবর্নিং বোর্ডের দ্বিতীয় সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, জাপানীজ বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প জোনের জমি অধিগ্রহণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) থেকে অর্থায়ন করতে হবে। এজন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ৭৭৪ দশমিক ২৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৭০০ বর্গফুটের সিকিউরিটি শেড নির্মাণ, ছয়টি সেন্ট্রি/গার্ড পোস্ট নির্মাণ এবং ১০০ বাউন্ডারি পিলার নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের মতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৪ জুন পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল স্থাপন করা সম্ভব হবে। চীনের বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে স্থাপিত শিল্পে কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
×