ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কোথায় কিভাবে হচ্ছে জানে না কেউ

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কোথায় কিভাবে হচ্ছে জানে না কেউ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত সোমবার থেকে রাজধানীতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হলেও অনেক নিঃশব্দ নীরবেই চলছে। হালনাগাদে কমিশনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়নি কোন প্রচার প্রচারের উদ্যোগ। ফলে সাধারণ লোকজনও জানতে পারছে না কোথায় কিভাবে চলছে হালনাগাদের কাজ। যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে বারবারই উল্লেখ করা হচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছেন এখন পর্যন্ত কোন তথ্যসংগ্রহকারী তাদের বাসায় আসেনি। এ বিষয়ে কোথায় কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে সে বিষয়েও কেউ কিছু জানে না। ভোটার তালিকা হালনাগাদের তৃতীয় পর্যায়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৪৮ উপজেলায় চলছে কাজ। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ হালনাগাদের কাজ। রাজধানীতেও ১৫ থানার অধীনে চলছে একযোগে হালনাগাদের কাজ। এসব থানাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা দুই সিটির লালবাগ, সবুজবাগ, উত্তরা, কোতোয়ালি, মতিঝিল, রমনা, গুলশান, ধানম-ি, ডেমরা, মোহম্মদপুর, সূত্রাপুর, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও থানা। প্রত্যেক থানা এলাকায় একজন করে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ সমন্বয় করছেন। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছে এখন পর্যন্ত কোন তথ্যসংগ্রহকারী ভোটার করতে বাসায় যায়নি। রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকার আব্দুর রশিদ জানান, ছোটবোনের ভোটার করার জন্য প্রত্যেকদিন অপেক্ষায় থাকি তথ্যসংগ্রহকারী বাসায় আসবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও দেখা মেলেনি। আবার তথ্যসংগ্রহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোন মাধ্যম পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান বাসার পাশে এক স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেখানেই কেবল ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মিরপুরের সোহেল জানান, এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করতে তার বাসায় কেউ যায়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলা হলেও কোরবানির ঈদের কারণে অনেকেই এখন থেকেই বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ২২ সেপ্টেম্বর অনেকেই রাজধানী ছেড়ে চলে যাবে। এ কারণে অনেকেই ভোটার হতে পারবে না। কমিশনের এ বিষয়ে আর সচেতন হওয়া উচিত ছিল। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২২ তারিখ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। কোন তথ্যসংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে তথ্যসংগ্রহকারীরাও অভিযোগ করেছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউকে ভোটার করার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের বেশিরভাগ সময়ে ভোটার হওয়ার যোগ্য অনেকেই বাড়িতে পাওয়া যায় না। এ কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়েও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে রাজধানীতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করা হলেও এখন পর্যন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে কোন প্রচার নেই। নেই কোন লিফলেট পোস্টার। ভোটার হওয়ার জন্য পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করার কথা থাকলেও সরেজমিনে কমিশনের পক্ষ থেকেই মাইকিং করার কোন উদ্যোগও চোখে পড়েনি। এ কারণে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, হালনাগাদের ক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণার এমন দৈন্য দশা থাকলে রাজধানীতে ভোটার হতে পারবেন না অনেকে। এছাড়াও ইতোমধ্যে ঈদের আবহ শুরু হয়েছে। অনেকে কোরবানির চিন্তায় ব্যস্ত রয়েছেন। অনেকে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ কারণে ইসির পক্ষ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে হালনাগাদের কাজ চালানো হলেও এ সময়ের মধ্যে ভোটার করতে অনেককেই পাওয়া যাবে না। এজন্য রজধানীতে এবার নতুন ভোটার সংগ্রহে ইসির টার্গেট পূরণ নাও হতে পারে। কমিশন জানিয়েছে, গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলবে আগামী বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্ধারিত এ সময় শেষেও যদি কেউ বাদ পড়েন অথবা তথ্যসংগ্রহকারীরা যদি কারও বাসায় না যান, সেক্ষেত্রে তাদের নিজ উদ্যোগে থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ১৮ এর কম বয়সী নাগরিকদের এবারেই প্রথম নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। পরবর্তীতে এসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে পর্যায়ক্রমে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে দেশে মোট ভোটার রয়েছে ৯ কোটি ৬২ লাখ ২৬ হাজার ৫৪২। কমিশন জানিয়েছে নতুন ভোটারসহ ক্রমান্বয়ে সব ভোটারকে স্মার্টকার্ডের আওতায় আনা হবে।
×