ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কালের গতিধারায় আজ নতুন তো কাল পুরনো

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কালের গতিধারায় আজ নতুন তো কাল পুরনো

সময়ের সঙ্গে মানুষের জীবন বদলে গেছে। এখন যুগ চলছে স্যাটেলাইট চ্যানেল, কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের। নতুন প্রজন্ম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এসবে। তারা জানেও না মাত্র দুই দশক আগেও ছিল রেডিও, অডিও রেকর্ডার, ভিসিপি ও ভিডিও কাসেটের যুগ। হলিউড-বলিউডের হিন্দী, ইংরেজী, আধুনিক বাংলা, রবীন্দ্রসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক, নজরুলগীতি, লালনগীতিসহ বিভিন্ন সঙ্গীতের এসব অডিও ক্যাসেট দিয়ে টেপরের্কডার ছিল দারুণ ‘বস্তু’। মহাকাশ থেকে এক মোক্ষম ধাক্কা খেয়ে ‘বস্তুটি’ আজ হারিয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চ্যানেল, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন দখল করে নিয়েছে সারা পৃথিবী। নতুন প্রজন্ম এগুলোতে সাবলীল ঢুকে পড়েছে। এক সময় অডিও রেকর্ডারের ক্যাসেট বিক্রি হতো ১০০/২০০ টাকার মধ্যে। ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, দেশের বিভিন্ন শপিংমল, বড় বড় বাজারে এমনকি গ্রামীণ হাটে টেপরেকর্ডারের দোকান গড়ে উঠেছিল। বিক্রি হতো লাখ লাখ টাকার টেপরেকর্ডার ও দু’ফিতার ক্যাসেট। মানুষ ক্যসেটের দোকানে ঢুকে দু’একখানা ক্যাসেট বের করে ফিতা পরখ করত। সন্দেহ নিয়ে সংক্ষেপে জিজ্ঞাসা করতÑ ফিতার অবস্থা ভাল তো? বিক্রেতা একবাক্যে সার্টিফিকেট দিতোÑ খারাপ হলে চেঞ্জ করে দেব। তবুও সন্দেহ যেত না অনেকের মন থেকে। নেয়া না নেয়ার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দুলতে দুলতে শেষতক দোকানির হাত থেকে ক্যাসেট নিয়ে বাড়ি যেত কৌতুহলী মানুষ। প্রতিটি বাড়িতে শতাধিক কাসেটের সংগ্রহ ছিল। হোটেল-রেস্তরাঁয়, গাড়িতে টেপরেকর্ডারের ভেতরে ফিতা-ক্যাসেট ঢুকিয়ে বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী গান শুনত মানুষ। দেশের শহর-গ্রামে শীত মৌসুমে ওয়াজ মাহফিলে এসব রেকর্ডার নিয়ে আলেমদের রেকর্ড করা ওয়াজের ক্যাসেট বাজানো হতো। মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনত। এছাড়া নাচের অনুষ্ঠানে টেপরেকর্ডারে গানের ক্যাসেট ঢুকিয়ে নাচ পরিবেশন করত শিল্পীরা। কুড়িগ্রামের আধুনিক গানের শিল্পী রাসেদুজ্জামান বাবু জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে টেপরেকর্ডার এবং ক্যাসেটের দিন। এক সময় আমরা নিজেরাই টেপরেকর্ডারে গান রেকর্ড করে গ্রামে-গঞ্জে মানুষকে সচেতন করার জন্য গান পরিবেশন করেছি। কুড়িগ্রাম শহরের প্রতিটি স্টেশনারি দোকানে এসব টেপরেকর্ডার বিক্রি হতো। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০টি টেপরেকর্ডার এবং শতাধিক ক্যাসেট বিক্রি করত। এসব আজ স্মৃতি। নব্বই দশকের শুরুতে স্যাটেলাইট দখল করে নিয়েছে সবকিছু। খেলা, সিনেমা, কার্টুন, সংবাদ, মিউজিক কী চাইÑ সবকিছু চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। সমগ্র বিশ্ব। প্রযুক্তির অসাধারণ বিকাশ হার মানিয়েছে রূপকথার বিস্ময়কেও। মোবাইল ও কম্পিউটার আজ যেমন ম্লান করে দিয়েছে টেপরেকর্ডার এবং ক্যাসেটের দিন, অনাগত ভবিষ্যত ঠিক একই রকমভাবে বড় সহজ সাধারণ বস্তু করে তুলবে আজকের আধুনিক সামগ্রীকে। কেউ যাবে, কেউ আসবে সেই স্থানেÑ প্রকৃতির ব্যাপারটিও একই রকম। Ñরাজু মোস্তাফিজ কুড়িগ্রাম থেকে
×