ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মস্থল কলাপাড়ায় রোগী দেখেন চরফ্যাশনে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কর্মস্থল কলাপাড়ায় রোগী দেখেন  চরফ্যাশনে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, চরফ্যাশন ১১ সেপ্টেম্বর ॥ কলাপাড়া হাসপাতালে কর্মরত গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ আবদুল ওয়াদুদ চেম্বার করছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সিটিহার্ট ক্লিনিকে। ২ জুলাই একদিনের ছুটি নিয়ে আজ অবধি তিনি অনুপস্থিত। ফলে কলাপাড়া হাসপাতালে গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা ও সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম ও ডিএসএফএর সুফলভোগী হাজার হাজার গর্ভবতী মাকে এখন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিক কিংবা জেলা-বিভাগীয় শহরে। এমনকি সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মাকসুদা বেগম (২৫) এক গর্ভবতী মায়ের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা ঝুঁকিতে রয়েছে হাজারো গর্ভবতী মা। জানা গেছে, একদিনের ছুটি নিয়ে কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডাঃ মোঃ আবদুল ওয়াদুদের এখন পর্যন্ত কোন খবর নেই। ২৬ জুলাই কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ মোঃ লোকমান হাকিম ও ১৭ আগস্ট পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডাঃ এএম মজিবুল হক পৃথক চিঠিতে আবদুল ওয়াদুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস ও কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আজ অবধি তিনি যোগদান করেননি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ডাঃ মোঃ আবদুল ওয়াদুদ বর্তমানে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সিটিহার্ট ক্লিনিকে নিয়মিত চিকিৎসা বাণিজ্য করছেন। এ কারণে তার বেতন-ভাতা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে কলাপাড়া স্বাস্থ্য প্রশাসন। একাধিক গর্ভবতী মা ও তাদের পরিবার জানান, গাইনী ডাক্তার না থাকায় তারা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। চরম ঝুঁকি নিয়ে যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তারা বিভিন্ন ক্লিনিক কিংবা পটুয়াখালী কিংবা বরিশালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারের মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম ও ডিএসএফের কার্ডধারী রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। কলাপাড়া হাসপাতালে ফ্রি-অপারেশন চালু থাকলেও সিজারিয়ান ডাক্তার ও অবশের (এনেসথেসিস্ট) ডাক্তার না থাকায় বর্তমানে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সাগরপাড়ের প্রত্যন্ত জনপদ কলাপাড়ায় ইওসির আলাদা সুনাম ছিল। বর্তমানে শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়েরা নয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে নবজাতকেরা। খলিলপুর গ্রামের তিন সন্তানের জননী বাড়িতেই স্থানীয় দাইয়ের মাধ্যমে ফুটফুটে এক সন্তানের জন্ম দেন। নিজেসহ শিশু সন্তানটি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হন। এক পর্যায়ে যথাযথ চিকিৎসা সেবার অভাবে ১২দিন পরে নবজাতকের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গাইনির ডাক্তার না থাকায় গত দুই মাসে তিন শতাধিক গর্ভবতী মাকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। ডাঃ মোঃ লোকমান হাকিম জানান, একদিনের ছুটি নিয়ে ডাঃ আবদুল ওয়াদুদ অনুপস্থিত থাকায় রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ডাঃ মোঃ আবদুল ওয়াদুদ জানান, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে চিকিৎসায় ছিলেন। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে অবহিত করা হয়েছে। চরফ্যাশনের সিটিহার্ট ক্লিনিকে প্র্যাকটিসের ব্যাপারে তিনি সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি। শনিবার কলাপাড়ায় যোগদান করবেন। কারণ দর্শানোর চিঠি তিনি পাননি বলে জানান।
×