কি করে ফেরাবে?
(শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের যোদ্ধাকে)
শেখর বরণ
ইতিহাসের আঁস্তাকুড় থেকে আসা একজন, সে আমি নই
আমি আসিনি উচ্ছিষ্টভোগী কোনও ঔরস থেকে
ত্রিশ লক্ষ বিক্ষত লাশ আর বীরাঙ্গনা মাতার
হাত ধরে এসে দাঁড়িয়েছি রুখে দাঁড়াব বলে,
প্রজন্মের আলোয় উদ্ভাসিত জাগরণের শিখা আমি
আমাকে ফেরাবে কি করে?
আমি এসেছি আমার পিতার একান্ত ইচ্ছা পূরণে
যিনি মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন ‘ওদের ক্ষমা নেই’,
এই যে আমি বুক উঁচিয়ে দাঁড়ালাম, ফেরাও আমাকে।
আমার চোখে গ্রীষ্মের দাবাদহের মতো গুমোট সর্বনাশ
বুকের ভিতর তীব্র দহন একূল ওকূল দু’কূল নাসী
আমার হৃদয়জুড়ে ছড়িয়ে আছে বাংলার মাটি জল
পদ্মা মেঘনা যমুনা বিছানো স্নেহময়ী আঁচল
আমাকে ফেরাবে কি করে?
এই যে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ালাম, ফেরাও আমাকে।
এখানে শহীদ ক্ষণজন্মা ইতিহাসখ্যাত বীর
খোনে মৃত্যু নাগিনীর মতো ছোবলে ঢালে বিষ
আকাশে বাতাসে মায়ের কান্না বোনের চোখে জল
ক্ষণে ক্ষণে জন্মে মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিকামীর দল
এখানে জাগে আউল বাউল সুফি সাধকের প্রাণ
ঘুম ভেঙ্গে গেলে মন্দির মসজিদ গীর্জার আহ্বান
আমাকে ফেরাবে কি করে?
এই যে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ালাম, ফেরাও আমাকে।
তৃপ্তির বন্দর
রেহমান সিদ্দিক
অতৃপ্তি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি
তোমার প্রতিটি রাত
তুমি মৃত নদী বিশাল চাদর
প্রেমের ফসিল
তোমার সঙ্গে প্রতারণার
এ অধিকার আমাকে কে দিয়েছে?
লোকে ঠিকই বলে
আমি একজন প্রতারক ছাড়া আর কিছুই না
আমার শিরায় বিশ্বাসঘাতকের রক্তই প্রবাহিত
ঠকবাজির কায়দা-কানুন ছাড়া আর কিছুই রপ্ত করিনি
তোমার শরীর যন্ত্রণায় নীল হয় শাদা হয়
আমি তোমাকে একটুও শান্ত করতে পারি না
বারবার আবির্ভূত হই
বারবার বিষাদে নিক্ষেপ করি
কী অধিকার আছে আমার?
তুমি আমাকে অভিশাপ দিচ্ছো না কেন?
অন্তহীন কাল ধরে শুধু নীল হয়ে যাচ্ছো
ঠোঁটে তীব্র কামড় দিয়ে উগড়ে দিচ্ছো অসংখ্য পাথর
এ সংসার তবে কি পাথর তৈরির কারখানা?
নাকি একদিন ঠিকই আমাকে জাগিয়ে তুলবে
আর আমি তোমাকে পৌঁছে দেব তৃপ্তির বন্দরে
দাঙ্গা
সোহেল মাজহার
যুদ্ধের মাঠ থেকে ফিরে যাচ্ছে ক্লান্ত ঘোড়া
সহিস বার বার ঘোড়ার জিনের পরিবর্তে
ক্ষিপ্র তরবারি উঁচিয়ে ধরছে,
এখানে শত্রুপক্ষের কোনো সৈন্য শিবির নেই,
তবে কি গুপ্তচরবৃত্তির মনোবাসনা নিয়ে
একজন পথ ক্লান্ত মানুষ বহু ক্রোশ পাড়ি দিয়ে
আজও সীমান্তের কাঁটাতারে আড়াল খুঁজে ফিরে।
একদা তার পূর্বপুরুষ বসতভিটার অবসাদে
সানবাঁধা পুকুরঘাটে বিকালে বড়শি ফেলে
ঘরে ঘরে সত্যাগ্রহ তাঁতের চাকা লবণের ঋণে
নিজেদের মতো তর্কে মেতে কেঁপে উঠেছিল
প্রতিবেশীর জামবনে চলে যাওয়া মৃদু ছায়া দেখে,
কিংবা জলের গহীনে মীন চলাচলের শিহরণে
প্রহর যে কিভাবে কেটে যায় মাছের ঠোকর গুনে...
ক্লান্ত ঘোড়ার ক্ষুরের সাথে উড়ে যাচ্ছে স্মৃতি,
বিস্মরণের ধুলোর পর বের হয়ে আসে একজন গুপ্তচর
তার ক্লান্ত ঘোড়া ক্ষেত ও নালার আড়ালে ছুটে যাচ্ছে
চিঁহি চিঁহি হ্রেষারবে খুঁজে ফেরে তার শৈশবের টিকেট
দাঙ্গার বছর, যা সীমান্তের ওপারে ফেলে এসেছিল পিতামহ।
উপেক্ষার প্রতিমা
আবদুশ শুকুর খান
উপেক্ষা ঘন হতে হতে পাথর হলে
নিজেকে ধূপের মতো পুড়িয়ে পুড়িয়ে
স্তব্ধ বসে থাকি পাথরের কাছে
উৎসর্গে উপশম আছে জেনে, শেষে
পাথরে নিঃশব্দে খোদাই করি নির্মম অন্ধকার।
বহু জাগরণ শেষে, অন্ধকার ছিন্নভিন্ন করে
আলোর ঝরনা ভিজিয়ে দেয় আমার
উপেক্ষার অনন্য প্রতিমা...
শীর্ষ সংবাদ: