ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে

ইউরোপে বাংলাদেশীরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাবেন না

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ইউরোপে বাংলাদেশীরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাবেন না

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপে লাখ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভিড়ে বাংলাদেশী নাগরিকরা থাকলেও তারা শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে সেখানে যাওয়া বাংলাদেশীদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার বিষয়টি এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে, শুধু প্রকৃত শরণার্থীদেরই তারা আশ্রয় দিতে আগ্রহী। এদিকে সেখানে আশ্রয় প্রার্থী বাংলাদেশীদের বিষয়ে সরকার থেকে সরাসরি কিছু না বললেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাক থেকে প্রতিদিন ইউরোপে যাচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ। এসব দেশের নাগরিকরা তুরস্ক-অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী হয়ে ভিড়ছে জার্মানিতে। ইতোমধ্যেই অস্ট্রিয়া ও জার্মানি তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। জার্মান সরকার থেকে এসব অভিবাসী প্রত্যাশীদের আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর এসব দেশের শরণার্থীদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশীরাও। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী নাগরিকরা রয়েছেন। লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি দেশেও বাংলাদেশী নাগরিকরা কাজ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব দেশ থেকে শরণার্থী হিসেবে সেখানকার নাগরিকরা ইউরোপে গেলেও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকরাও। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরে আসার চাইতে ইউরোপে আশ্রয় নেয়াটাকেই প্রাধ্যান্য দিচ্ছেন বাংলাদেশীরা। সেখানে বাংলাদেশী নাগরিকরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাবেন কি-না সেটা নিয়ে ক’দিন ধরে গুঞ্জন চলছিল। তবে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিনজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক কারণে অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্বাগত জানায় জার্মানি। তবে অবৈধ অভিবাসীদের কোনভাবেই জার্মানিতে রাখা হবে না। তিনি বলেছেন, গত সপ্তাহে মিউনিখে রেল স্টেশনের চিত্র বিশ্ববাসী দেখেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও সিরিয়া থেকে আসা হাজার শরণার্থীর কষ্টকর যাত্রা শেষ হয়েছে। বেভারিয়ান শহরের কয়েক শ’ স্বেচ্ছাসেবক শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্লান্ত শরণার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় খাবার ও পানি। ওই সময় তাদের স্বাগত জানাতে কাছাকাছিই অবস্থান করছিল শত শত জার্মান নাগরিক। থমাস প্রিনজ বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটে ভুগছে ইউরোপ। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে শরণার্থীর ঢল আসছে। জার্মানি আশা করছে এ বছর আট লাখ মানুষ অভিবাসনের জন্য আবেদন করবে। এটি জার্মানদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত এক বছরে জার্মানিতে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনৈতিক অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিশেষ গুরুত্ব দেয় জার্মানি। তবে অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতি জার্মান সরকারের নীতি একই। তাদের (অর্থনৈতিক অভিবাসন প্রত্যাশী) কোনভাবেই অবৈধভাবে জার্মানিতে থাকতে দেয়া হবে না। কেননা সমুদ্র পাড়ি দিলেই সকলেই শরণার্থী হিসেবে অভিহিত হন না বলেও তিনি জানান। এদিকে অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভিড়ে বাংলাদেশীও রয়েছেন। তবে বাংলাদেশীর সংখ্যা কত, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য নেই অস্ট্রিয়ার দূতাবাসের কাছে। অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর জানিয়েছেন, অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে যারা দোভাষী হিসেবে বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করছেন, তারা বাংলাদেশী পাওয়ার খবর আমাদের জানিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, আশ্রয় প্রত্যাশী আমাদের দেশের কারও বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না। তবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এটা নতুন নয়। আট-নয় মাস ধরে আমরা অনানুষ্ঠানিক জানছি, প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ বাংলাদেশী আশ্রয় চাইছেন অস্ট্রিয়ায়। অস্ট্রিয়ান দোভাষীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবু জাফর বলেছেন, বাংলাদেশীরা আসছেন প্রধানত তুরস্ক ও লিবিয়া থেকে। লিবিয়ায় যেসব বাংলাদেশী রয়েছেন, তাদের অনেকে ইউরোপে পাড়ি দিতে চাইছেন। এর মধ্যে গত মাসে ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকা ডুবে মারা যান ২৪ বাংলাদেশী। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, আফগানিস্তন, ইরান, তুরস্ক হয়েও আসছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউরোপে অভিবাসী প্রত্যাশীদের ভিড়ে বাংলাদেশীদের বিষয়ে নজর রাখছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো। এসব দূতাবাসের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের নাগরিকদের শরণার্থী হিসেবে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে কোন দেশের সঙ্গেই আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সিরিয়া ও ইরাকের অভিবাসন প্রত্যাশীদের পছন্দের দেশ ইউরোপের জার্মানি। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে জার্মানিকেই বেছে নিয়েছেন তারা। তবে কত শরণার্থীকে জার্মানির আশ্রয় দেয়া উচিত তা নিয়ে ইতোমধ্যেই জার্মানিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল বলছেন, সংখ্যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন। তবে দেশটির দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকরা আপত্তি করছেন। তারা বলছেন, চ্যান্সেলর ভুল বার্তা দিচ্ছেন। এত বেশিসংখ্যক অভিবাসীদের আশ্রয় দিলে ভবিষ্যতে জার্মানির জন্যই বিপদ হতে পারে বলে মনে করেন দক্ষিণপন্থীরা। তবে কোন কোন দেশের শরণার্থী জার্মানিতে আশ্রয় পাবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করবে জার্মান সরকার। যেসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দেয়া হবে নীতিমালায় সেসব দেশের নাম উল্লেখ থাকবে। সে অনুযায়ী আশ্রয় দেয়া হবে। উল্লেখ্য, শনিবার থেকে অস্ট্রিয়া ও জার্মানি শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। তারপর থেকেই হাঙ্গেরী থেকে বাসে চেপে শরণার্থীরা সীমান্ত পেরিয়ে অস্ট্রিয়া হয়ে জার্মানিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। হাঙ্গেরীর অস্ট্রিয়া সীমান্ত থেকে ভিয়েনায় শত শত শরণার্থীকে নিয়ে যাচ্ছে আরও ট্রেন। অভিবাসী বোঝাই ট্রেন জার্মানি পৌঁছানো মাত্রই স্বাগত জানাচ্ছেন জার্মান নাগরিকরা।
×