ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যৌথ মালিকানা থাকবে ॥ ঢাকা ও চট্টগ্রামে দৈনিক;###;৩শ’ মে.ওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব

এবার বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে পৃথক কোম্পানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এবার বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে পৃথক কোম্পানি হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ এবার বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে পৃথক কোম্পানি গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। বিদ্যুত বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কোম্পানিটির মালিকানা পাবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে কোম্পানি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে এককভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিদ্যুত উৎপাদন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সঙ্গত কারণে সম্ভাবনা থাকলেও বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদন প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারী-বেসরকারী সূত্রগুলো বলছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বর্জ্য দিয়ে দৈনিক অন্তত ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও বিপুল পরিমাণ বর্জ্যরে কোন সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দিনের পর দিন বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলো। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক আগে থেকেই বিদ্যুত মন্ত্রণালয় বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা করে আসছিল। কিন্তু স্থানীয় সরকারের অসহযোগিতায় তা সম্ভব হয়নি। এককভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেই বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে চেয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদনের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ বর্জ্য বিদ্যুতের প্রকল্প হাতে নিতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ বর্জ্যরে সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এমন অসহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে দেশে বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদন অসম্ভব থেকে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা বলেছে এককভাবে বিদ্যুত বিভাগ এ ধরনের প্রকল্প হাতে নিলে বর্জ্যরে সরবরাহ ঠিকভাবে দেবে না। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠক সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের প্রকল্পের অংশীদার করে নিলে বর্জ্যরে সরবরাহ দেয়ার বিষয়ে তাদের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। একই সঙ্গে তারা মুনাফাও পাবে। ফলে তাদের আগ্রহ আরও বাড়বে। জানা গেছে কোম্পানি গঠন হবে সরকারের তিনটি সংস্থা মিলে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন পৃথক কোম্পানি গঠন চুক্তি করবে। সিটি কর্পোরেশনে বিদ্যুত বিতরণ করে এমন কোন কোম্পানি এখান থেকে বিদ্যুত কিনবে। এখানে সিটি কর্পোরেশন, পিডিবি এবং বিতরণ কোম্পানি তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিত্ব রাখতে চায় সরকার। জানা গেছে বর্জ্য থেকে ফার্মেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। বর্জ্যরে সেলুলোজ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে ইথানল তৈরি হয়। তবে বর্জ্যরে মধ্যে চিনি বা চিনি জাতীয় পদার্থ থাকলে তা থেকে তৈরি হয় কার্বন-ডাই- অক্সাইড এবং এ্যালকোহল। একই প্রক্রিয়ায় তৈরি হতে পারে বায়ো-ডিজেলও। পরে পাইরালাইসিস বা তাপীয় বিয়োজনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় মিথেন বা ইথেন গ্যাস। এই গ্যাসকেই বিদ্যুত উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। সাধারণ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের মতোই বর্জ্য থেকে বিদ্যুত হতে পারে। এতে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি একেবারে নেই। অর্থাৎ বর্জ্য পরিবেশে যে দূষণ ছড়ায় বিদ্যুত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তা ব্যবহার করা হলে চারপাশের পরিবেশ আরও নির্মল এবং বাসযোগ্য করে তুলতে পারে। শুধু বিদ্যুতই নয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসিসির মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে স্তূপাকার বর্জ্য থেকে পাইপ বসিয়ে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। সব শেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখা যায় ইতালিয়ান কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স এসআরএলের সঙ্গে বিগত ২০১৩ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চুক্তি হয় । ঢাকার বর্জ্য দিয়ে দৈনিক ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করার কথা ছিল কোম্পানিটির। পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি করে ১০০ মেগাওয়াট করার পরিকল্পনাও ছিল। ঢাকার বর্জ্যে আলোচিত সেই বিদ্যুত প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতালিয়ান কোম্পানিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। আমাদের কোন সমস্যা না থাকলেও কোম্পানিটির ব্যর্থতার কারণে ভেস্তে যায় প্রকল্পটি। অন্যদিকে রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনের আগ্রহ দেখায়। সে সময় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু স্থানীয় সরকারে ফাইলবন্দী রয়েছে প্রকল্পটি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নতুন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকার দুই নগর অফিসের হিসাব বলছে দেড় কোটির বেশি মানুষের এই ঢাকাতেই প্রতিদিন অন্তত আট হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হয়। এর সঙ্গে রাজধানীর হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে আরও এক হাজার ৫০০ টন বর্জ্য যোগ হয়। উৎপাদিত বর্জ্যরে মধ্যে আছে প্লাস্টিক, কাগজ, কাঁচ, ধাতু এবং জৈব বর্জ্য। অন্যদিকে ঢাকার পরেই একই এলাকায় বেশিসংখ্যক মানুষের বাস চট্টগ্রামে। বন্দরনগরীতে একসঙ্গে বসবাস করছেন ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ। এখানে প্রতিদিন উৎপাদিত হয় দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টন বর্জ্য। কেবল এই দুই মহানগরীতে প্রায় ১২ হাজার টন বর্জ্যরে মধ্যে বেশিরভাই রান্নার উচ্ছিষ্ট পচনশীল; যা মিথেন উৎপাদন করতে সক্ষম। হিসাব বলছে, এই বর্জ্যরে পরিমাণ মোট বর্জ্যরে ৬০ শতাংশ। প্রতি এক মেগাওয়াট বিদ্যুত প্ল্যান্ট চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় ৪০ টন বর্জ্য। এই হিসেবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বর্জ্য দিয়ে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। এর বাইরে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরের বর্জ্য দিয়ে স্থানীয়ভাবে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হতে পারে। বর্জ্য ফেলার জন্য যেসব ল্যান্ডিং স্টেশন রয়েছে সেখানেই বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। ফলে নতুন করে জমিরও দরকার নেই। এখানেই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা সম্ভব। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য পৃথক কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ইতোমধ্যে বিদ্যুত বিভাগের পাওয়ার সেল কোম্পানির গঠন প্রণালী তৈরি করে দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর এই কোম্পানির অর্থায়ন কিভাবে হবে সে বিষয়ে আবারও পাওয়ার সেলের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা কোম্পানির গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। খুব শীঘ্র মন্ত্রিসভায় বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। নতুন করে আমাদের কাছে যে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা তা শীঘ্র জানিয়ে দিতে পারব।
×