ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিওতে নিষিদ্ধ সংগঠনের এ্যাকাউন্ট থাকলে শাস্তি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এনজিওতে নিষিদ্ধ সংগঠনের এ্যাকাউন্ট থাকলে শাস্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এখন থেকে ব্যাংকের মতো এনজিও ও এনপিওগুলোকেও জাতিসংঘ বা বাংলাদেশ সরকারের নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ও ব্যক্তির হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। তালিকা অনুযায়ী এ ধরনের সংগঠন ও ব্যক্তির কোন আমানত বা ঋণ হিসাব পরিচালনা করা যাবে না। কোন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের হিসাব পরিচালিত হলে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বিএফআইইউ। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও অলাভজনক সংস্থার (এনপিও) প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ও রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন বা ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অর্থ বিস্তারে বা অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে তালিকাভুক্ত কোন ব্যক্তি বা সত্তা থেকে কোন ঋণ বা অনুদান নেয়া যাবে না। নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন রেজুলুশনের আওতায় সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন বা ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে তালিকাভুক্ত কোন ব্যক্তি বা সত্তা এবং বাংলাদেশ সরকারের তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের কোন ব্যক্তি বা সত্তার কোন আমানত বা ঋণ হিসাব পরিচালনা করা বা কোন তহবিল গ্রহণ বা তাদের দেয়া যাবে না। সন্ত্রাসে অর্থায়ন ছাড়াও দুর্নীতি, ঘুষ, প্রতারণা, জালিয়াতি বা অন্য কোন অপরাধের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ এসব প্রতিষ্ঠানে বৈধ করার চেষ্টা করেছে বলে সন্দেহ হলে বিএফআইইউতে রিপোর্ট করতে হবে। কোন গ্রাহকের লেনদেন বা কার্যক্রম সন্দেহজনক হিসেবে বিবেচিত হলে তাও জানাতে হবে। প্রজ্ঞাপনে এনজিও বা এনপিওর পরিচালনা পর্ষদ, বোর্ড অব ট্রাস্টি বা সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি থেকে অনুমোদিত মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক নীতিমালা করতে বলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে একজন উর্ধতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রধান কার্যালয়ে একটি ‘কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট’ প্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এনজিওতে এক লাখ টাকা বা এর বেশি পরিমাণের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে। কোন কারণে ব্যতিক্রম হলে এনজিওর নিজস্ব কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর সুবিধাভোগী, টার্গেট গ্রুপ, ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা এক বছরে ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ অর্থ, পণ্য বা সেবা নিয়েছে তাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি (কেওয়াইসি) সংরক্ষণ করতে হবে। যে সব গ্রাহকের ঋণ বা আমানত স্থিতি এক লাখ টাকা বা এর বেশি রয়েছে তাদেরও কেওয়াইসি সংগ্রহ ও তথ্যের সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে। আর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং কার্যক্রম, আয়ের উৎস, সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগের আগে প্রার্থীর পরিচিতির তথ্য, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যাচাই করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান পরীক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩য় পর্বের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে তথ্য যাচাইয়ের জন্য এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের একটি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসবে। বিষয়টি সফল করতে এনজিও রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণে সম্প্রতি বিএফআইইউ ‘এনজিও সেক্টর এ্যাসেসমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া অন্যান্য খাতের মতো এনজিও বা এনপিওর মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ অন-সাইট ও অফ-সাইট মনিটরিং পরিচালনা করে থাকে।
×