ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাওয়া যাবে ৩ মে.ও. বিদ্যুত;###;প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে

ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জে সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জে সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যপূরণে সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জে এ বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৪ কোটি ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জে ৩ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকদের বিদ্যুত প্রাপ্তির আস্থা বাড়বে, স্থানীয়ভাবে বিদ্যুত উৎপাদন করে ভোল্টেজ সমস্যা হ্রাস, পরিবেশবান্ধব গ্রিন এনার্জির মাধ্যমে পরিবেশের স্থায়িত্ব রক্ষা, বিদ্যুত উৎপাদন বহুমুখীকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি-২০০৮ এর লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, দেশের জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের উদ্যোগ করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তিন মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব। এসব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় প্রকল্পটির শিরোনাম ছিল ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জ এবং আরিচায় সাড়ে ৪ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন। ওই সভার পর বিদ্যুত বিভাগ পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রকল্পের শিরোনাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জে ৩ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আরিচা অংশের জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি না পাওয়ায় ওই অংশ বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দুটি স্থানে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। আরিচা অংশ বাদ দেয়ায় বিদ্যুত উৎপাদন ও প্রকল্প ব্যয় দুই দিক থেকেই কমেছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। স্থিতিশীল এবং নিরাপদ বিদ্যুত সরবরাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থিতিশীল বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০ গ্রহণ করেছে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করছে এবং সেই সঙ্গে বিদ্যুত নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য সুলভ ও আস্থাশীল বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় উন্নয়নের মাধ্যমে সকলের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক, স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৯ হাজার ৭০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত ও ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করে নতুন শিল্প এবং ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা এবং জাতীয় লক্ষ্য সবার জন্য বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে জ্বালানি বহুমুখীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০০৮ অনুসরণ করে সরকারী ও বেসরকারী খাতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যুত উৎপাদনের ৫ শতাংশ ২০১৫ সালে এবং ১০ শতাংশ ২০২০ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা উৎপাদন করার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে ২ শতাংশ বিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের সকল উৎসের মধ্যে সৌরবিদ্যুত হলো সর্বোত্তম সম্ভাব্য বিকল্প উৎস। সরকার ইতোমধ্যেই ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সরকারের এ ঘোষণা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) মনে করছে, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে যোগানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে যেহেতু ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে, ফলে এটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, চার হাজার বর্গফুটের দুটি দুই তলা নিয়ন্ত্রণ ভবন নির্মাণ, আট হাজার ঘনফুট ভূমি উন্নয়ন, যানবাহন সংগ্রহ এবং ১০ হাজার ৬৩২ বর্গফুটের আবাসিক ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে।
×