ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মানি পৌঁছেছে দশ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জার্মানি পৌঁছেছে দশ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে ইউরোপ অভিমুখী সিংহভাগ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া। শনিবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে অন্তত ১০ হাজার শরণার্থী জার্মানি এসে পৌঁছেছে। চলমান শরণার্থী সঙ্কট ঠেকাতে জার্মানির আবেদনে সাড়া দিয়ে ইতালি, ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশ কিছুসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রবিবার সকালে অস্ট্রিয়া সীমান্ত থেকে শরণার্থী বোঝাই একাধিক ট্রেন মিউনিখ স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এখান থেকে এসব শরণার্থীকে জার্মানির অন্যান্য জায়গায় পাঠানো হবে। শরণার্থী সঙ্কট সমাধানে রবিবার অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ওয়ারনার ফেম্যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা হাঙ্গেরি থেকে যেভাবে শরণার্থী পরিবহন করছে তা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। শরণার্থী সমস্যা নিয়ে এবার সরাসরি মুখ খুলেছেন পোপ ফ্রান্সিস। প্রত্যেক ক্যাথলিক খ্রীস্টান পরিবারকে একটি করে শরণার্থী পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসি, এএফপি, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আলজাজিরা অনলাইনের। রবিবার সাপ্তাহিক প্রার্থনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। খ্রীস্টান ধর্মের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, যেসব মানুষ মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে তাদের আশ্রয় দেয়া আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, প্রত্যেক ক্যাথোলিক খ্রীস্টানসহ প্রত্যেক ধর্ম, সম্প্রদায় এবং ইউরোপের প্রতিটি গির্জা, কনভেন্ট, আশ্রম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে একটি করে শরণার্থী পরিবারকে আশ্রয় দেয়া উচিত। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ওয়ারনার ফেম্যান বলেন, আমরা যেভাবে চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি তা এটির সুষ্ঠু সমাধান নয়। আমরা চাই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য একটি আইন করে এসব শরণার্থীকে সমানভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া। সমুদ্রের তীরে মুখথুবড়ে পড়ে থাকা আইলান কুর্দির মৃত্যুর রেশ না কাটতেই গ্রীসের আগাথনিসি দ্বীপে শনিবার ২ মাস বয়সী এক শরণার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে শিশুটির প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি। আবার গ্রীসের লেসবস দ্বীপে একদল শরণার্থীর সঙ্গে স্থানীয় দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। ওদিকে শিশু আইলান কুর্দির স্মরণে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবারের ওই স্মরণসভায় আইলানের ফুফু তিমা কুর্দিসহ দেশটিতে বসবাসরত শতাধিক কুর্দি অংশ নেয়। ওই স্মরণসভায় তিমা কুর্দি বলেন, আইলান, গালিব ও তার মা রেহানাকে দাফনের পর আমার ভাই আব্দুল্লাহ তার প্রিয় সন্তানদের কবর ছেড়ে যাননি। গত তিনদিন তিনি কবরগুলোর পাশেই ঘুমাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমি আমার ভাইকে নিয়ে এখন চিন্তায় রয়েছি। অস্থির মধ্যপ্রাচ্য আর যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া ও সিরিয়া থেকে গত এক বছর ধরেই হাজার হাজার মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। ভয়ঙ্কর এই যাত্রায় তাদের সঙ্গী হচ্ছেন এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসন-প্রত্যাশীরাও। এই শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের একটি দল গত সপ্তাহে হাঙ্গেরিতে পৌঁছে জার্মানি যেতে চাইলে শুরু হয় অচলাবস্থা। হাঙ্গেরির সরকার জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার ট্রেন বন্ধ করে দিলে বুদাপেস্ট রেলস্টেশনে অবস্থান নিয়ে থাকে হাজার হাজার শরণার্থী। শেষ পর্যন্ত তারা প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার হেঁটে অস্ট্রিয়া যাওয়ার জন্য রওনা হলে নরম হয় হাঙ্গেরি। অস্ট্রিয়া সীমান্ত পর্যন্ত তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডাবলিন রুলস অনুযায়ী, বাইরে থেকে কেউ এসে ইউরোপে অভিবাসী হতে চাইলে প্রথমে ইইউভুক্ত যে দেশে তিনি নামবেন, সেখানেই নিবন্ধন করে তাকে আবেদন করতে হবে। ওই নিয়মের তোয়াক্কা না করে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া শনিবার শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দেয়। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ভারনার ফেইমান নিজের ফেসবুকে লিখেন আজ হাঙ্গেরি সীমান্তের জরুরী অবস্থা বিবেচনায়, অস্ট্রিয়া ও জার্মানি অভিবাসীদের প্রবেশ করতে দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। শরণার্থীদের ভিড়ে বাংলাদেশীও ॥ বিডিনিউজ জানায় ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশায় যুদ্ধপীড়িত সিরীয়দের যে ঢল রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছেন বলে খবর পেয়েছে অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। ইউরোপের দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর রবিবার এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশীর সংখ্যা কত তা স্পষ্ট করেননি তিনি। যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার নাগরিকসহ মধ্যপ্রাচ্যের হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে ইউরোপে পাড়ি দিতে চাইছেন। প্রথমে আটকে রাখলেও সাগরে ডুবে আইলান দ নামে তিন বছরের একটি শিশুর মৃত্যু নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় উঠলে সীমান্ত খুলে দেয় ইউরোপ। হাঙ্গেরিতে আটকেপড়া কয়েক হাজার শরণার্থী শনিবার হাঙ্গেরি সীমান্ত দিয়ে অস্ট্রিয়ায় ঢুকেছে যাদের গন্তব্য জার্মানি। এই দেশটি ইতোমধ্যে আট লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যেই হাঙ্গেরি থেকে আসা কয়েক হাজারের মধ্যে বাংলাদেশী পাওয়ার খবর ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানান অস্ট্রিয়ার কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রদূত জাফর বলেন, “অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে যারা দোভাষী হিসেবে বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করছে, তারা বাংলাদেশী পাওয়ার খবর আমাদের জানিয়েছে।” “তবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, আশ্রয় প্রত্যাশী আমাদের দেশের কারও বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না,” বলেন রাষ্ট্রদূত।
×