ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুঃখিত কিন্তু ক্ষমাপ্রার্থী নন

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দুঃখিত কিন্তু ক্ষমাপ্রার্থী নন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাটির পার্টির প্রধান মনোনয়ন প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, তার প্রাইভেট ইমেল সার্ভার নিয়ে অনেক বিতর্ক দেখা দেয়ায় তিনি দুঃখিত কিন্তু তিনি সেটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন। তিনি ওই পদে রিপাবলিকান পার্টির অগ্রগামী মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে অভিহিত করেন। তিনি শুক্রবার এনবিসি নিউজ/এমএসএনবিসির এ্যান্ডু মিচেলের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। খবর এনবিসির। হিলারি তার ইমেল সার্ভার প্রসঙ্গে বলেন, এটি জনগণের কাছে বিভ্রান্তিকর হওয়ায় এবং অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়ায় আমি দুঃখিত, কিন্তু এসব প্রশ্নের জবাব রয়েছে। এর আগে এ বিতর্কের জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত কিনা মিচেল তাকে এ প্রশ্ন করেন। হিলারি বলেন, আমি দায়িত্ব নিচ্ছি এবং এটিই সর্বোত্তম উপায় ছিল না। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় সম্পূর্ণভাবে একটি প্রাইভেট ই-মেইল এ্যাকাউন্ট ও সার্ভার ব্যবহার করার জন্য সরাসরি ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান। তার প্রাইভেট ই-মেইল ব্যবহার ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ সময়ে অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এপ্রিলে হিলারির প্রচারাভিযান শুরুর কথা ঘোষণার পর এটিই ছিল তার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মাত্র তৃতীয় সাক্ষাতকার। যারা তাকে অসৎ বলে দেখতে পান তাদের ব্যাপারে মিচেল প্রশ্ন করলে হিলারি বলেন, অবশ্যই এতে আমি ভালবোধ করি না। কিন্তু আমি আস্থাশীল যে, যখন প্রচার অভিযান শেষ হবে, তখন জনগণ জানবে যে, আমি যা বলে এসেছি তা সঠিক। তার সার্ভার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন কয়েক মাস ধরে হেসে উড়িয়ে দেয়ার পর এখন হিলারি অনুতাপের সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত এক সিনেটর হিসেবে একটি ব্যক্তিগত ইমেল এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন। তিনি যখন ২০০৯ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন তখন তিনি এর বিকল্প নিয়ে ভেবে দেখতে খুব একটা সময় ব্যয় করেননি। হিলারি বলেন, আমি সিনেটে আমার ব্যক্তিগত ইমেলে আমার সব কাজ করেছিলাম। যখন আমি পররাষ্ট্র দফতরে যোগ দেই তখন আমি খুব বেশি ভাবছিলাম না। অনেক কাজ করার ছিল। বিশ্ব জুড়ে আমাদের অনেক সমস্যা ছিল। আমি আসলে বিরতি দেইনি এবং কোন ধরনের ইমেল সেখানে থাকবে তা নিয়ে ভেবে দেখিনি। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবেই বৈধ এবং লোকজন জানে যে, আমি একটি ব্যক্তিগত ইমেল ব্যবহার করছি। আমি কাজের সুবিধার্থেই তা করেছিলাম। মিচেল হিলারির দীর্ঘদিনের সহকারী হুমা আবেদিনের বিষয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে হিলারি বলেন, ঐ রিপাবলিকানের প্রার্থী হওয়া আমাদের আমেরিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এক খারাপ ঘটনা। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তার দুঃসাহসিকতা বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তিনি বলেন, বেপরোয়া কথাবার্তা, হুমকি, অপমানজনক উক্তির গুরুতর ফল রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেন তা নিয়ে তার সতর্ক থাকা উচিত। হিলারির ইমেল ব্যবহার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ভোটার হিলারিকে অবিশ্বাসভাজন মনে করেন বলে জনমত জরিপে দেখা যায়। তার ইমেল ব্যবহারকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন ওঠাই এর অন্যতম কারণ। মার্কিন ফেডারেল আইন অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের চিঠিপত্র মার্কিন সরকারের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়। সরকারী কর্মচারীগণকে অফিসিয়াল ইমেল এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়, যদিও কোন কোন শীর্ষ কর্মকর্তা অতীতে ব্যক্তিগত এ্যাকউন্ট ব্যবহার করেন। মার্চ মাসে হিলারি ও তার আইনজীবীরা কোন কোনগুলোকে সরকারী কাজ সম্পর্কিত ইমেল বলে গণ্য করা হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ে তার পাঠানো মোট ৬০ হাজার ই-মেলের মধ্যে প্রায় অর্ধেককে সরকারী কাজ সম্পর্কিত বলে গণ্য করা হয়। তিনি যে ইমেলগুলোকে ব্যক্তিগত বলে গণ্য করেন, সেগুলোকে মুছে ফেলা হয় বলে তিনি জানান। সেই সময় থেকে পররাষ্ট্র দফতর দফায় দফায় মাসে প্রায় একবার করে সরকারী কাজ সম্পর্কিত ইমেলগুলো প্রকাশ করছে। হিলারি সহকারীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আগামী সপ্তাহগুলোতে নারীদের দিকে আরও মনোযোগ দেবেন এবং এক সম্ভাব্য নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ভূমিকা গুরুত্বের সঙ্গে ব্যক্ত করবেন। তিনি মিচেলের সঙ্গে সাক্ষাতকারে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন বলে মনে হয়। হিলারি বলেন, তার প্রার্থিতা বিশ্বের নারীদের সহায়তা করার কর্মজীবনব্যাপী ব্যক্ত প্রতিশ্রুতিরই অংশ। তিনি বলেন প্রেসিডেন্ট পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক বার্তা পাঠানোরই অন্যতম উপায়Ñ প্রত্যেকের উন্নতি সাধনের সুযোগ আমাদের রয়েছে।
×