ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তফা জব্বার

অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়া হাতে হাতকড়া, পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি নেই

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়া হাতে হাতকড়া, পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি নেই

যদিও ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের সভার পর তথ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত খসড়াটির কোন মূল্যই নেই, তথাপি এটি একটু পর্যালোচনা করা দরকার যে তাতে ভুল সঙ্কেতটি কি ছিল। ক. খসড়া নীতিমালায় এটি তৈরি করার উদ্দেশ্য কি সেটি না থাকায় প্রথম সন্দেহ তৈরি হয় যে, সরকার ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ফলে শেখ হাসিনার একটি গণতান্ত্রিক ও প্রযুক্তিবান্ধব সরকারের ইমেজে ব্যাপকভাবে চিড় ধরে। এর আরও একটি কারণ ছিল যে, এতে গণমাধ্যম বলতে কি বোঝানো হয়েছে সেটি বলা ছিল না। ২৬ সেপ্টেম্বরের সভায় যখন স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, এই নীতিমালাটি কেবল নিউজ ওয়েব পোর্টালবিষয়ক তেমনটি আগে বলা হলে ভুল বোঝার প্রথম সঙ্কেতটি থাকত না। যদি বলা হতো যে, নিউজ পোর্টালগুলোকে সরকারের সহায়তা করার জন্য নীতিমালা তৈরি করার হচ্ছে তাহলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতো না। বরং অনেকের কাছ থেকে সাধুবাদ পাওয়া যেতে পারত। অথচ খসড়া নীতিমালাটি প্রশংসার বদলে নিন্দা কুড়িয়েছে। খ. নীতিমালায় আবেদন ফিস, আর্নেস্ট মানি, লাইসেন্স ফিস, নবায়ন ফিস এসব আরোপ করার কথা বলা হয়েছিল। এসব টাকার অংক অনেক বড় ছিল। ২ লাখ টাকার আর্নেস্ট মানি বা ৫ লাখ টাকার লাইসেন্স ফিস এবং ৫০ হাজার টাকার নবায়ন ফিস ছোট ছোট নিউজ পোর্টালগুলোর জন্য খুবই বড় রকমের ব্যয় হিসেবে গণ্য হতে পারে। কেবল দু’চারটি অনলাইন নিউজপোর্টাল এসব অর্থের যোগান দিতে সক্ষম। অন্যদিকে এসব অর্থ ব্যয় করার বিনিময়ে পোর্টালগুলো সরকারের কাছ থেকে কি ধরনের সহায়তা পাবে সেটিও নীতিমালায় ছিল না। বিশেষ করে সরকার এসব পোর্টালগুলোতে বিজ্ঞাপন কিভাবে দেবে, কি হারে দেবে এবং তাতে পোর্টালগুলোর আয় কেমন হবে তার একটি বর্ণও তাতে ছিল না। এসব বিধিবিধান দেখে এমন সন্দেহ হতেই পারে যে, সরকার শত ফুল ফুটতে দিতে চায় না। সরকারের উদ্দেশ্য যে ছোট পুঁজিকে সহায়তা করা নয়, সেটিও এতে প্রকাশিত হয়। কাগজের বা টিভির জগতে যেমন করে পুঁজিবাদের থাবা পড়েছে তেমন করে এখানেও পুঁজির থাবা পড়বে তেমন সন্দেহ দেখা দেয়। এই সন্দেহ খুব স্বাভাবিক ছিল এজন্য যে, আমরা দেশের পত্রিকাগুলো রাঘব বোয়ালদের হাতে বন্দী হতে দেখেছি। এমনকি যেসব ছোট ছোট উদ্যোক্তা টেলিভিশনের লাইসেন্স পেয়েছিলেন তারাও তাদের সঙ্গে বড় পুঁজির মালিকদের সম্পৃক্ত করেছেন। অন্যদিকে হাতেগোনা দু’চারটি নিউজপোর্টাল ছাড়া বাকিগুলো প্রকৃতপক্ষে ছোট ছোট ব্যক্তি উদ্যোগ। ছোট ছোট পুঁজি বা কুটির শিল্পের মতো কর্মকা- এটি। অনেকেই বছরের পর বছর স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন বা আয়ের বদলে ব্যয় করে বেড়াচ্ছেন। এসব পোর্টালের কামাই বলতে তেমন কিছুই নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে এটি পারিবারিক কর্মকা-ের মাঝেও সীমিত হয়ে পড়ছে। অথচ এই মিডিয়াগুলো দেশের বিপুলসংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্যক্ষুধা মেটাচ্ছে। মাত্র চার বছরে ১২ লাখ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যে প্রায় ৫ কোটিতে পৌঁছেছে তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছেÑ এসব নিউজপোর্টাল কর্তৃক বাংলায়, দেশীয় আঞ্চলিক কনটেন্ট তৈরি করা হয়। অন্যদিকে সরকার কাগজে প্রকাশিত পত্রিকা কোন লাইসেন্স ফিস, আর্নেস্ট মানি, আবেদন ফিস বা নবায়ন ফিস আদায় করে না। জেলা প্রশাসকের কাছে একটি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করা ছাড়া সরকারকে আর কোন অর্থ দিতে হয় না কোন পত্রিকাকে। তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম নীতিমালাটি বিষয়ে আমার লেখাটির আরও কিছুটা অংশ রয়েছে যেখানে আমি সেই প্রথম খসড়াটির আরও বিশ্লেষণ করেছি এবং সেই খসড়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। যে নীতিমালাটি নিয়ে এতসব লঙ্কাকা- হয়েছে সেটিরই আরও ভয়ঙ্কর দিকগুলো ছিল। এর মাঝে একটি ভয়ঙ্কর দিক ছিল বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশনের অনুমতিবিষয়ক। আমরা খুব সহজ ভাষায় বুঝি যে, বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবাদানকারী বা মোবাইল সেবাদানকারী বা কোন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানকে তরঙ্গ বরাদ্দ করে থাকে। ফলে রেডিও-টিভি, আইএসপি, মোবাইল অপারেটরকে বিটিআরসির অনুমতি নিতে হয়, যখন সে তরঙ্গ ব্যবহার করে। কিন্তু অনলাইন পোর্টাল যারা পরিচালনা করেন তারা সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। হোস্ট করার জন্য তাদের কারও সহায়তা নিতে হতে পারেÑ কিন্তু তাদের সঙ্গে বিটিআরসির কোন সম্পর্কই নেই। কারণ এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যে ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করে এবং সেসব ব্যান্ডউইদথ যে তরঙ্গপথে প্রবাহিত হয় তা বিটিআরসির অনুমতি নিয়েই করা হয়ে থাকে। এজন্য পোর্টালসমূহের আর নতুন করে অনুমতি নেয়ার কোন প্রশ্নই নেই। এই বিধানটিতে নীতিমালাটি প্রণেতাদের অজ্ঞতাকেই প্রকাশ করেছে। এই প্রণেতারা সম্ভবত রেডিও-টিভির সঙ্গে অনলাইন গণমাধ্যমকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রথম খসড়া নীতিমালাটি যারা পাঠ করেছেন তারা অবাক হয়েছেন এটি দেখে যে, এটি কোন পেশাদারি দলিল হয়নি। এতে সাংবাদিকদের অধিকারের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত ছিল। এসব গণমাধ্যমের শ্রেণীবিন্যাস, জনপ্রিয়তার মাপকাঠি, পেশাদারি মান, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের যোগ্যতা, আর্থিক সঙ্গতি এসব নানা প্রসঙ্গ অনালোচিত ছিল। এটি সত্যিই ভাবতে কষ্ট হয় যে, এমন একটি অগোছালো দলিল সরকারীভাবে কেমন করে প্রকাশ করা হয় বা এমন একটি দলিলকে যাচাই-বাছাই করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কেমন করে অনুরোধ করা হয়! দেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় একটি পেশাদারি নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে পারে না- সেটি ভাবা যায় না। যা হোক, অতি অল্পতেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের বোধোদয় হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল। নীতিমালায় বিষয়বস্তু : যেহেতু এরই মাঝে নিউজ পোর্টালের নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে এবং সরকার নিয়ন্ত্রণের বা কণ্ঠরোধের বদলে সহায়তার কথা বলছে, সেহেতু একটি প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়া আলোচিত হতেই পারে। সংশ্লিষ্ট মহল এসব বিষয়ে অনেক আলোচনা করতে পারবেন। আশা করি যাদের জন্য নীতিমালা তারাও এ বিষয়ে সোচ্চার বা সরব হবেন। তারা তাদের মতামত ও পরামর্শ দেবেন এবং নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি তাদের মতকে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে সেটি নীতিমালায় সন্নিবেশিত করবেন। নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগের প্রেক্ষিতে এই জগতের একজন অধিবাসী হিসেবে একদম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামতের কিছু বিষয় এখানে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরছি। প্রথমত : যে কথাটি খুব স্পষ্ট করে বলা দরকার সেটি হলোÑ আজকের দিনে ইন্টারনেট বা যে কোন ধরনের গণমাধ্যমকে সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবাও উচিত নয়। পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে এই নীতিমালা প্রণয়নের নামে বা সরকারের সুবিধা বিতরণ করার নামে সেই প্রচেষ্টা যেন গ্রহণ না করা হয়। নীতিমালাটি কোনভাবেই যেন সেই দরজা বা ফাকফোঁকর না রাখে। ক. প্রস্তাবিত নীতিমালাটি বাধ্যতামূলক হতে পারে না। কেবল যারা সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নিতে চায়, সরকারের সুবিধা পেতে চায় বা স্বীকৃতি পেতে চায় নীতিমালাটি কেবল তাদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। অন্য অর্থে নীতিমালাটি স্বেচ্ছায় আরোপযোগ্য হতে পারে। এই নীতিমালার বাইরেও গণমাধ্যম জন্ম নিতে পারবে, পরিচালিত হতে পারবে এবং সেইসব গণমাধ্যম অবৈধ বা বেআইনী বলে গণ্য হবে না। খ. সরকারের সহায়তা পাওয়ার জন্য নিবন্ধন করা হতে পারে এবং প্রাক যোগ্যতার সহজ শর্তাবলী থাকতে পারে। নীতিমালায় এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট, সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের সহায়ক হবে। গ. কোন বড় ধরনের আবেদন ফিস, আর্নেস্ট মানি, লাইসেন্স ফিস, নবায়ন ফিস থাকবে না। ঘ. বিটিআরসির কোন উল্লেখই থাকবে না- নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা। ঙ. নীতিমালায় বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিক ও প্রদায়কদের যোগ্যতার বিবরণ থাকবে। চ. নীতিমালায় এ ধরনের মিডিয়ার শ্রেণীবিন্যাস থাকতে পারে। ছ. কোন কোন ভিত্তিতে সরকারের কোন কোন সুবিধা প্রদান করা হবে তার সুস্পষ্ট নীতিমালা এতে থাকতে হবে। একইসঙ্গে এটিও নিশ্চিত করতে হবে যে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বা মতামতের ওপর সরকারের সহায়তা নির্ভর করবে না। কমিটি যখন আলোচনায় বসেছে তখন এসব প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। বস্তুত সেই আলোচনাগুলো আমরা করেছি এবং একটি খসড়া নীতিমালা আমরা প্রস্তুত করেছি। যে খসড়াটি আমরা প্রস্তুত করেছি সেটি মূল কমিটির কাছে পেশ করার পর মতামতও নেয়া হয়েছে। এবার আমরা নতুন খসড়াটির দিকে তাকাতে পারি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের টেলিভিশন-১ শাখার পত্র নং ১৫-০২৩.০০৬.০০.০০.০১.২০১২/৩৮ (১৪) তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩ মোতাবেক অনলাইন গণমাধ্যম সহায়ক নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন উপ-কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটির আহ্বায়ক আমাকে মনোনীত করা হয়। বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম-এর এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন, ভি নিউজ বিডি ডটকম-এর সম্পাদক জয়ন্ত আচার্য, পিটিবি নিউজ ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে, বাংলাদেশ অনলাইন নিউজপোর্টাল এ্যাসোসিয়েশন (বনপা)’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক এই কমিটির সদস্য মনোনীত হন। পিআইবির মহাপরিচালক এই কমিটির সদস্য সচিব মনোনীত হন। আমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কমিটির গত ২০.০১.১৩, ০৩.০৯.১৩, ১৩.১১.১৩ ও ১৮.০২.১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত চারটি সভায় আলাপ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিম্নোক্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৫ নামে প্রণীত এই খসড়ার পটভূমির কথা বলা হয়েছে এভাবে : ১. পটভূমি : বর্তমান সভ্যতাকে বলা হয় ইন্টারনেট সভ্যতা। ইন্টারনেট মানেই অনলাইন। এই সভ্যতায় আমাদের যাত্রাকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে চিহ্নিত করেছি। আমাদের স্বপ্ন আমরা ২০২১ সালের মাঝে বঙ্গবন্ধুর একুশ শতকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। আমরা এই সময়ে হতে চাই একটি সমৃদ্ধ-উন্নত মধ্য আয়ের দেশ, যাতে থাকবে না দারিদ্র্য, থাকবে না অশিক্ষা বা বৈষম্য। আমরা সেই স্বপ্নকে পূরণ করতে চাই ডিজিটাল প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা এরই মাঝে আমাদের চারপাশের সবকিছুকে ডিজিটাল রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। সেই লক্ষ্য অর্জন এবং সার্বিকভাবে সারা দুনিয়ার মতো জাতিগতভাবে আমাদের ইন্টারনেট নির্ভরতাও প্রশ্নাতীত। ২০১৩ সালের জুন মাসের হিসাব অনুসারে দুনিয়ার ২৪০ কোটি ৫৫ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৬ জন ইন্টারনেট ব্যবহার করত, যার শতকরা ৪৪ ভাগই এশিয়ার। বাংলাদেশের অবস্থা দুনিয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এদেশে ২০১৩ সালের জুন মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৫৯ লাখ। ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক ॥ ই-মেইল : সঁংঃধভধলধননধৎ@মসধরষ.পড়স ওয়েবপেজ : িি.িনরলড়ুবশঁংযব.হবঃ, িি.িনরলড়ুফরমরঃধষ.পড়স
×