ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাল শেয়ার বিক্রির মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলবে কিনা আজ রায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জাল শেয়ার বিক্রির মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলবে কিনা আজ রায়

অপূর্ব কুমার ॥ বিনিয়োগকারীদের কাছে জাল শেয়ার, সার্টিফিকেট ও বরাদ্দপত্র বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত আসামিদের জাল শেয়ার বিক্রির মামলার কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালে চলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় কাটবে আজ রবিবার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আসামিদের রবিবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধিতে দায়ের করা এ মামলাটি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ২১টি। তিনটি মামলার রায়ও দিয়েছেন আদালত। এর আগে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ভবনে অবস্থিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) বৃহস্পতিবার বিকেলে আসামিদের রবিবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওইদিন ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেয়ার দিন থাকলেও আসামিরা কেউই উপস্থিত হননি। তবে তানলিন মাশফুর আইনজীবী প্রাণ কানাই রায় চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন। তবে এ মামলার বিচার কার্যক্রম পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। কারণ এ মামলা আসামিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪০৩, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭০, ৪৭১ ও ৪৭২ আইনের অধীনে করা হয়েছে। ওই দণ্ডবিধি অনুযায়ী পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলা পরিচালিত হবে কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় জানাতেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর আসামিদের আজ রবিবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আজকেই মামলাটির ভাগ্যও নির্ধারিত হবে। মামলাটির আসামিরা হলেনÑ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান (সদস্য নম্বর ৫৯) টি. মাশফু এ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী তানলিন মাশফু ও হাওলাদার মোহাম্মদ আব্দুল বারিক। এর আগে সম্প্রতি মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। ওই দিন মহানগর দায়রা জজ আদালতের জারিকারক মোহাম্মদ খোরশেদ এ মামলার যাবতীয় প্রয়োজনীয় নথিপত্র পুঁজিবাজার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে মামলা অন্তর্ভুক্তির ফলে নতুন করে নম্বর দেয়া হয়েছে। মামলার নম্বর দেয়া হয়েছে ২০/২০১৫। এ মামলায় আসামির সংখ্যা দুইজন। অন্যতম আসামি টি. মাশফু এ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী তানলিন মাশফু ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির জাল শেয়ার লেনদেন করতেন। ১৯৯৮ সালে তানলিন মাশফু গালফ ফুড লিমিটেডের ১০০টি ও কনফিডেন্স সিমেন্টের ২৪০টি জাল শেয়ার লেনদেন করেন। ১৯৯৯ সালে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের ১ লাখ ২৫ হাজার ও শাইনপুকুর হোল্ডিংসের ৬ হাজার ৬০০টি শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে তিনি শাইনপুকুর হোল্ডিংস ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের জাল শেয়ারগুলো মনির আহমেদের পক্ষে বিক্রি করেছিলেন। এছাড়া কনফিডেন্স সিমেন্টের জাল শেয়ার শহিদুল ইসলামের পক্ষে বিক্রি করেছিলেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করেও মনির আহমেদকে খুঁজে পায়নি। একই সঙ্গে তানলিন মাশফু তদন্ত কমিটিকে গালফ ফুডের জাল শেয়ার বিক্রেতার নাম তাৎক্ষণিক দেখাতে ব্যর্থ হন। গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তানলিন মাশফুর অফিস পরিদর্শন করে। ওই সময় তার অফিস থেকে শাইনপুকুর হোল্ডিংসের ৯১টি বাতিল করা জাল সার্টিফিকেট জব্দ করে তদন্ত কমিটি। এ সময় কমিটি দেখতে পায় ৯১টি জাল শেয়ারের মধ্যে ৯০টি ফারইস্ট লিমিটেডের (সোমারস নোমিনি) নামে ইস্যু করা স্ক্রিপ (স্ক্রিপ নম্বর-১৪৯৪৭১), যা ১৯৯৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাজন করে দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে শাইনপুকুর হোল্ডিংসের অফিস পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি দেখতে পায়, ১৪৯৪৭১ নম্বর স্ক্রিপটি কোনো বৈধ সার্টিফিকেট নয়। কারণ ওই নম্বর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইস্যু করেনি। এছাড়া তদন্তকালে বিভিন্ন কোম্পানির বেশকিছু জাল শেয়ার, বরাদ্দপত্র এবং জাল ফরম-১১৭ জব্দ করেছে তদন্ত কমিটি। মাশফু এ্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে ডিএসইর ক্লিয়ারিং হাউসে ওই সময়ে জমা পড়েছিল। এর মধ্যে শাইনপুকুর হোল্ডিংসের মোট ২৮টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০০টি। আজিজ পাইপসের মোট ১৫টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৭৫টি। গালফ ফুডসের মোট ৭টি বরাদ্দপত্র রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৩৫০টি। এটলাস বাংলাদেশের মোট ১টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৫০টি। কনফিডেন্স সিমেন্টের মোট ১২টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ২৪০টি। মুন্নু ফেব্রিক্সের মোট ১টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৫০টি। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে তানলিন মাশফু ও টি. মাশফু কোম্পানি যোগসাজশে জাল শেয়ার লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা অবৈধ কার্যকলাপ করে উভয়ই অসৎভাবে লাভবান হয়েছেন এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪০৩, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭০, ৪৭১ ও ৪৭২ আইনের অধীনে মামলা দায়ের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ার কবির ভূইয়া। এদিকে মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়। পরবর্তী সময়ে তা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এর পর চলতি বছরের জুন মাসে তা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে মামলার সব আসামি জামিনে আছেন। তবে আদালত স্থানান্তরিত হওয়ায় আসামিদের আবারও নতুন করে জামিন নিতে হবে। সেই বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল ২০/২০১৫ নম্বর মামলার আসামিদের ৩ সেপ্টেম্বর হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন থেকে আসামিদের বিচার কার্যক্রম চালু হবে।
×