ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিজমি হ্রাস

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কৃষিজমি হ্রাস

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে কৃষিমন্ত্রী দেশে কৃষিজমি ক্রমান্বয়ে হ্রাসের যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা উদ্বেগজনক। তিনি যথার্থই কারণ চিহ্নিত করে জানিয়েছেন, বেসরকারী খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের কারণে এটা ঘটছে। জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে কৃষিজমি রক্ষারও একটা সীমা আছে। ‘জমি অধিগ্রহণে সরকার যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না’- মন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সামান্যতম অবকাশ নেই। প্রতিবছর অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, নদী ভাঙ্গন ও লবণাক্ততার কারণে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে শতকরা ১ ভাগ হারে। তারপরও দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি, গমের দ্বিগুণ, সবজির পাঁচগুণ এবং ভুট্টার ১০ গুণ। বছরে ১০ লাখ টন আম উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় নবম স্থানে। ৯৬ লাখ টন আলু উৎপাদন করে পৃথিবীর শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় ১০ম স্থানে। পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানি হচ্ছে। কৃষিতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে বাংলাদেশ কৃষকদের জন্যই। কৃষিক্ষেত হেসে ওঠে কৃষকেরই সৌজন্যে। অথচ বছরের অনেক সময়ই অনেক কৃষকের মুখে হাসি থাকে না। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। ফলে অর্থাভাবে তাদের জীবনমান নেমে আসে। অপরদিকে কৃষিপণ্য নিয়ে যারা ব্যবসা করেন তাদের পোয়াবারো। বাড়তি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করে আসলে লাভবান হন তারাই। মুনাফাই যাদের নীতি, বাজে অজুহাত দিতে তাদের বাধে না। যেমন বিগত বর্ষা মৌসুমে আমরা দেখেছি বৃষ্টির দোহাই দিতে। মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমানোর পাশাপাশি কৃষকবান্ধব নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের আবশ্যকতা অস্বীকার করা যাবে না। কৃষকের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কৃষি আদালত গঠনের কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, আধুনিক এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী যাতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কেউই নিয়মমাফিক স্ব স্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয়। এক্ষেত্রে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থারও আধুনিকায়ন জরুরী। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশে কৃষিজমি সংরক্ষণে কঠোর বিধিবিধান রয়েছে। কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আমাদের দেশে কৃষিজমি ফসল উৎপাদনের পরিবর্তে ভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হওয়া রোধ করতে না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকবে কী উপায়ে? গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির জন্য একটি পৃথক সংস্থা গঠন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি কৃষিজমিতে কোনভাবেই যাতে কোন শিল্প ও আবাসন গড়ে উঠতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে কৃষিজমি হ্রাসের হার কমিয়ে আনা যেমন সম্ভব তেমনি সম্ভব কৃষিজমির সর্বোচ্চ পরিচর্যা ও ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখা। কৃষিজমি রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের নজরদারি বাড়ানো আজ সময়ের দাবি।
×