ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শুভ জন্মাষ্টমী

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আজ শুভ জন্মাষ্টমী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সনাতন ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার। ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ। ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে। দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় আজ রবিবার উদযাপন করা হচ্ছে মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন। এছাড়া বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে এবং বেতার-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। আজ বিকেলে ঢাকার ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গন থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য-মনোলভা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী মিছিল। মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির দুইদিনের কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসব আজ শনিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে শুরু হচ্ছে। আজ সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের সীতাকু- শঙ্কর মঠ ও মিশন এই গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে। বিকেল ৩টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির সংলগ্ন পলাশীর মোড় থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত জন্মষ্টমীর শোভাযাত্রা এবং রাতে কৃষ্ণপুজো অনুষ্ঠিত হবে। বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যৌথভাবে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আজ থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে অনুষ্ঠিত হবে। রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের তিনদিনের অনুষ্ঠানমালা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজাম-প ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
×