ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদীর আশাবাদ

গার্মেন্টসে সংস্কার শেষ হলে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের হবে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

গার্মেন্টসে সংস্কার শেষ হলে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাক কারখানায় চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হলে বাংলাদেশের এই শিল্প পরবর্তী ধাপে পৌঁছবে। এতে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি আবারও দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করবে বলে জানান উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জোট এ্যালায়েন্সের চূড়ান্ত পরিদর্শনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্বীকৃতি পাওয়া লন্ড্রি ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। দৈনিক জনকণ্ঠকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জোট এ্যালায়েন্সের চূড়ান্ত পরিদর্শন শেষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উর্ত্তীণের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের ৬ তৈরি পোশাক কারখানা। এসব কারখানা হলো গ্রীন টেক্সটাইল, কুন টং এ্যাপারেলস, এনভয় গ্রুপের লন্ড্রি ইন্ডাস্ট্রিজ, লেনি এ্যাপারেলস, অপটিমাম ফ্যাশনস ও ইউনিভোগ ফ্যাশনস। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ্যালায়েন্সের পরিদর্শন কার্যক্রমের দুই বছরের অগ্রগতি জানাতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান এ্যালায়েন্সের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। তিনি জানান, ৮টি কারখানা চূড়ান্ত পরিদর্শন শেষে ৬টি কারখানার অগ্নি, ভবনের কাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মানদ-। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্বীকৃতি পাওয়া লন্ড্রি ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে এই লন্ড্রিতে প্রতিদিন এক লাখ পিস পোশাক ওয়াশ করা হয়। নিরাপত্তার সর্বোচ্চ মানে পৌঁছার স্বীকৃতি পেতে প্রথমদিকে সংস্কার শুরু করা প্রতিষ্ঠান বলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তবে এটি অসম্ভব কিছু নয়। তিনি বলেন, রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না। প্রথমধাপে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পেলেও আগামী দুই কিংবা তিন মাসের মধ্যে আরও প্রায় ২শ’ কারখানা এ তালিকায় চলে আসবে। সব কারখানার সংস্কার সম্পন্ন হতে আগামী তিন বছর লাগবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। অনুষ্ঠানে জেমস মরিয়ার্টি বলেন, বড় কারখানা মালিকরা বুঝতে সমর্থ হয়েছেন, ব্যবসায়ের জন্য শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী। এ জন্য তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মনযোগী হয়েছেন। অন্যদিকে ছোট ও মাঝারি কারখানার মালিকদের অর্থায়নের বিষয়টিও আমরা অনুধাবন করছি। এ জন্য আইএফসি’র পাশাপাশি ইউএসএআইডি এগিয়ে এসেছে। তবে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শ্রম আইনের বিধি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। দুই বছরের অগ্রগতি হিসেবে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ্যালায়ান্সের সদস্য কারখানার সংখ্যা ৭৯০টি। এর মধ্যে ৬৬২টি সক্রিয়। প্রথম দফায় ৫২৮টি কারখানার সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে এ্যালায়েন্স। এসবের মধ্যে ১৫৪টি কারখানা ২০ শতাংশ বা তার চেয়ে কম সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। দ্বিতীয় দফায় ১৭টি কারখানার সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আগামী ৩ বছর কারখানার সংস্কার কার্যক্রমে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত থাকবে এ্যালায়েন্স। এ সময়ে পরিদর্শনের আওতায় থাকা ৬৬২টি কারখানাই নিরাপত্তা মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে বলে আশা করছে এ্যালায়েন্স। বাংলাদেশে এ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন বলেন, ২০১৮ সালে এ্যালায়েন্সের কার্যক্রম শেষ হলেও সংস্কার পরিকল্পনা (কারেকটিভ এ্যাকশন প্ল্যান/ক্যাপ) চলমান থাকবে। এ সময তিনি বলেন, শ্রমিকদের কথা জানানোর জন্য চব্বিশ ঘণ্টা হেল্প লাইন খোলা রয়েছে। নেপালে ভূমিকম্পের পর কারখানার ফাটল নিয়ে ৩৬টি ফোন কল পাই। কারিগরি দল পরীক্ষা করে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছে। এ সময় শ্রমিক, মধ্যম স্তরের ব্যবস্থাপনা ও সিকিউরিটি গার্ডদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন তারা আগের চেয়ে সচেতন হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ্যালায়েন্সের পরিদর্শন তালিকায় থাকা কারখানা সংস্কারে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ৫ কোটি মার্কিন ডলার দেবে। এছাড়া কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানার সংস্কারে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা (১ কোটি ৮০ লাখ ডলার) অর্থ সহায়তা দেবে ইউএসএআইডি। এ তহবিল থেকে কারখানার মালিকরা স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবেন। ইউএসএআইডি’র বাংলাদেশ মিশন পরিচালক জেনিনা জারুজেলস্কি বলেন, চলতি মাসের শেষদিকে তাদের অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর উদ্যোক্তারা প্রাইম ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবেন। যদিও প্রশ্নোত্তর পর্বে ফ্লোর নিয়ে আবদুস সালাম মুর্শেদী অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো সেই সব কারখানাগুলোকে ঋণ দিচ্ছে, যাদের সঙ্গে আগে থেকেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। সবাইকে সমান সুবিধা দিতে সরাসরি অর্থায়নের প্রস্তাব করেন তিনি। তার এমন দাবিতে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন জেমস মরিয়ার্টি। রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক চাপে বাংলাদেশের কারখানার নিরাপত্তা মান পরিদর্শনের লক্ষ্যে দুই বছর আগে কাজ শুরু করে এ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি (এ্যালায়েন্স)। এর বাইরে ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জোট এ্যাকর্ড এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনটিপিএ) মধ্যস্থতায় সর্বমোট প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানার নিরাপত্তা মান পরিদর্শন শেষে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এ্যালায়েন্স বাংলাদেশের কারখানার উন্নয়নে ৫ বছর কাজ করার কথা। পরিদর্শনে চিহ্নিত হওয়া ত্রুটি সংস্কারে প্রয়োজনে অর্থায়ন করারও কথা রয়েছে তাদের। যদিও অর্থায়ন না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে কারখানা মালিকদের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিকেএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ছাড়াও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার স্বীকৃতি পাওয়া কারখানা মালিক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
×