ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বর্ষায় যা বৃষ্টি হলো, শরতে তারও বেশি! নতুন ঋতু পুরনো হতে চলেছে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। উল্টো সে কী কাণ্ড! গোটা রাজধানী একরকম জলে ডুবেছিল। হ্যাঁ, গত মঙ্গলবারের কথা বলছি। এদিন বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাকে শতভাগ নাকানি-চুবানি খাইয়ে তবেই ক্ষান্ত দিয়েছে বৃষ্টি। অলিগলি ডুবেছিল বহু আগেই। আর তার পর প্রধান প্রধান সড়ক। গাড়ি চলে না। চলতে গিয়ে ইঞ্জিন নষ্ট। এ অবস্থায় হাঁটাই একমাত্র বিকল্প। সেটিও সম্ভব হয়নি অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে দুঃসহ ভোগান্তির একটি দিন। এদিন সকাল থেকেই মুখ গুমরা করেছিল আকাশ। বৃষ্টি শুরু হয় বেলা ১১টার দিকে। অচিরেই ভারি বর্ষণ। ভারি মানে, যে সে ভারি নয়। অভাবনীয়। মাত্র দেড় ঘণ্টায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি! অতি বৃষ্টির ফলে ঢাকা ও চারপাশের নদীগুলোর পানির উচ্চতা দ্রুতই বেড়ে যেতে থাকে। শহরের ভেতরের পানি যথাসময়ে বের হতে পারেনি। ফলাফলÑ ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। দেখতে দেখতে তলিয়ে যায় মিরপুর, শান্তিনগর, কাওরান বাজার, ধানম-ি, তল্লাবাগ, শুক্রাবাদ, গ্রীন রোড, ইন্দিরা রোড, পরীবাগ, বাংলামোটরসহ বহু এলাকা। রাপা প্লাজার সামনের রাস্তাটির কথা ভাবলে তো গা শিউরে ওঠে! মনে হচ্ছিল বড় কোন নদী বা হাওড়! এই হাওড়ে ইঞ্জিন বিকল গাড়ি। এখানে ওখানে পড়েছিল। মানুষ একরকম সাঁতরে পার হয়েছে। অতি সুরক্ষা যে সংসদ ভবনের জন্য, সেটিও ডুবতে বসেছিল। সংসদ ভবনে প্রবেশের রাস্তায় ছিল কোমড় সমান পানি। কাওরান বাজার দিয়ে আসার সময় রিক্সার বড় চাকার সবটুকু জলের নিচে ডুবেছিল। বাজারের ভেতর দিয়ে আসতে আসতে দেখা যায়, জল থৈ থৈ চারপাশ। বেচাকেনা বন্ধ করে মালামাল রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা। কাওরান বাজারের দিক থেকে নদীর স্রোতের মতো পানি গিয়ে পড়ছিল ওয়াসা ভবনের সামনের রাস্তায়। এভাবে এক এলাকা অন্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টি শেষ হলে যানবাহনের সঙ্কট তীব্র হয়। একটি গাড়ি পাওয়া গেলে পতঙ্গের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায় যাত্রীদের। কিন্তু এই যুদ্ধে জয়লাভ অনেক কঠিন ছিল। তাই অসংখ্য মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা যায়। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তীর্থযাত্রা! অবশ্য অবস্থার যত দ্রুত অবনতি ঘটেছিল, তেমনি দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার তেমন বৃষ্টি হয়নি। এই সুযোগে অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলগুলো থেকে জল নেমে গেছে। তবে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। মঙ্গলবারের জলাবদ্ধতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বুধবারের গল্পটা একটু অন্য। সকালে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। পরে আর ধারাবাহিতা ছিল না। তবে আগের দিনের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেছিলেন নগরবাসী। অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। আক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও সচল করা যায়নি। সব মিলিয়ে রাস্তাঘাট ছিল মোটামুটি ফাঁকা। মঙ্গলবার অথৈ জলে রিক্সাটাই বেশি চলেছে। ইঞ্জিন না থাকায় জল ঢুকে বিকল হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। ফলে রিক্সাটাই চলেছে বেশি। ভাড়া অনেক গুনতে হয়েছে। তবু রিক্সা পেলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যাত্রী। এভাবে ভাল উপার্জন হয়েছে বটে। তবে বুধবার পর্যাপ্ত যাত্রী পায়নি রিক্সাচালকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাস্তায় রিক্সা থামিয়ে এক চালককে বাঁশি বাজাতে দেখা গেল। তার বক্তব্যÑ যাত্রী কম। তাই নিজেই যাত্রী হইছি। অন্যদিন খুব ক্লান্ত থাকি। আজকে ফ্রি। তাই নিজেরে একটু গান শুনাই। অবশ্য নিজের জন্য বাজালেও, তার বাঁশি মনোযোগ দিয়ে শুনতে দেখা যায় সাধারণ পথচারীদের। ক্লান্তি আর দিন যাপনের গ্লানি ভুলার এ প্রয়াস মুগ্ধ হওয়ার মতো বৈকি! এবার অনুমোদনহীন ওষুধের কথা। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নকল হয়। অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি হয় রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে। পুরনো এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় অনুমোদনহীন ওষুধ পাওয়া যায় এমনকি লাজ ফার্মায়। নামীদামী এই ফার্মেসিকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। লাজ ফার্মার জরিমানা প্রদানের ঘটনাটি উপস্থিত অনেককে অবাক করে। একই সময় তাজরীন ফার্মেসিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আদালত পরিচালনাকারী র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আহমেদ জানান, ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন ওষুধ বাংলাদেশে আমদানি করা যায় না। ফার্মেসিগুলোতে অবৈধ পথে আসা ব্যথানাশক বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি হচ্ছিল। এমন অভিযান আরও চালানো হবে বলে জানান তিনি।
×