ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাবি শিক্ষকদের অনশন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাবি শিক্ষকদের অনশন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগ ও বিচার দাবিতে চার ঘণ্টার প্রতীকী অনশন পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকবৃন্দ। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারে একটি অংশ উপাচার্যের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন দফতর প্রধানরা দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে রবিবার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে অনশন শেষে রবিবারের কর্মসূচী ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক সামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, উপাচার্য শনিবারের মধ্যেই পদত্যাগ করবেন। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় ভিসি ভবনের সামনে এই অনশন শুরু হয়ে দুপুর একটায় শেষ হয়। দুপুর একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস শরবত খাইয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙ্গান। শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম জানান, ‘আমাদের একটাই দাবিÑ উপাচার্যের অপসারণ। উপাচার্য অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে কোনভাবেই সরে দাঁড়াব না। পরবর্তীতে তার বিচারও করতে হবে।’ গত ৩০ আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ওই দিনের হামলার হোতার পাশাপাশি যারা জড়িত তাদের সবার বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আমি মনে করি সরকার উপাচার্যকে আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যেই সরিয়ে নেবে। তা না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচীতে যাব। উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘উস্কে’ দেয়া হয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচীর পর দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র দু’একটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। শিক্ষার্থীরা কোথা থেকে এসে শিক্ষকদের পাশে বসল? কিভাবে বসল? উনাদের সমর্থন ছাড়া কি ছাত্র এসে এভাবে শিক্ষকদের পাশে বসতে পারে? এটা একেবারেই ঠিক হয়নি।’ উপাচার্য আরও বলেন, ‘এর আগে জাফর ইকবালরাই বলেছেন, শিক্ষকদের আন্দোলনে ছাত্রদের সংশ্লিষ্ট করা ঠিক হয়নি। তাহলে আজকে উনারা এটা কী করলেন? আমি এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছি।’ দফতরপ্রধানদের কর্মবিরতি ॥ শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরিত পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় দফতরপ্রধান ফোরাম। ফোরামের আহ্বায়ক আ ন ম জয়নাল আবেদীন এ তথ্য জানান। তারা শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাও ॥ উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শাবি শিক্ষার্থীরাও। পদত্যাগ করতে তারা উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আগামী রবিবার তারা কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার হুমকি দেন। বৃহস্পতিবার মিছিল পরবর্তী অবস্থান কর্মসূচী থেকে শিক্ষার্থীরা এ আল্টিমেটাম দেন। জানা যায়, উপাচার্যের পদত্যাগ ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করে। লাঞ্ছনাকারী শিক্ষকদের বহিষ্কার দাবি ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমিনুল হক ভুঁইয়াকে ‘লাঞ্ছনাকারী’ শিক্ষকদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পংকজ দেবনাথ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এই দাবি জানান। পংকজ দেবনাথ তার বক্তব্যে গত রবিবার শাবিতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রসঙ্গটি টেনে বলেন, ‘শাবিতে সেদিন উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করেন শিক্ষকরা। এই লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসেছিল। এজন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শাবির তিন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু যেসব শিক্ষক উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করলেন তাদের তো কোন শাস্তি হলো না! তাদেরও বহিষ্কার করতে হবে।’
×