ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ মানুষ সৌর বিদ্যুত সুবিধার আওতায়, গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ;###;’১৭ সালের মধ্যে টার্গেট ৬ লাখ

জ্বালানি চাহিদা পূরণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার তাগিদ ॥ সোলারে সমাধান

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জ্বালানি চাহিদা পূরণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার তাগিদ ॥ সোলারে সমাধান

শাহীন রহমান ॥ সোলার হোম সিস্টেমে দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। জানা গেছে সারাদেশে সোলার হোম সিস্টেমের গ্রাহক সংখ্যা এখন ৪০ লাখের মতো। সোলার হোম সিস্টেম নিয়ে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রতিটি সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে গড়ে ছয় জন বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। তবে এখনও দেশের যেসব অঞ্চলে গ্রিড লাইন সুবিধা পৌঁছেনি কেবলমাত্র সেসব এলাকার লোকজনই সৌর বিদ্যুতের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। তবে জানা গেছে সারাদেশে সৌর বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও দেশে অনেক জায়গায় গ্রিড লাইন সম্প্রসারিত হওয়ায় সেসব এলাকায় লোকজন এখন আর সৌর বিদ্যুতের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে না। এ কারণে সম্প্রতি সৌর বিদ্যুতের চাহিদা আগের চেয়ে কিছু কমেছে বলে জানিয়েছেন গ্রামীণ শক্তি নামের প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তারা। তারা বলেন, যেসব এলাকায় এখন বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছেনি সেসব এলাকায় কেবল সোলার হোম সিস্টেমে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। বর্তমানে সেসব এলাকায়ও অনেক গ্রামে গ্রিড লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে সৌর বিদ্যুতের প্রতি মানুষের চাহিদা কমে গেছে। সোলার হোম সিস্টেমে সৌর বিদ্যুত সংযোগ স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে গ্রামীণ শক্তি। প্রতিষ্ঠানটি দেশে দেশে প্রথম সোলার হোম সিস্টেমে তৃণমূল এলাকায় সৌর বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার কাজ শুরু করে ১৯৯৭ সাল থেকে। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে সারাদেশে তাদের গ্রাহক রয়েছে ১৬ লাখ ২১ হাজারের বেশি। একমাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই দেশে প্রায় ১ কোটি লোক বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসছে। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়াসিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি সৌর বিদ্যুতের চাহিদা আগের চেয়ে কিছু কমে গেছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ শক্তি যেসব এলাকায় সৌর বিদ্যুত পৌঁছানোর কাজের সঙ্গে জড়িত তারমধ্যে অনেক এলাকায় গ্রিড লাইন পৌঁছে গেছে। একবার যেখানে গ্রিড লাইন পৌঁছেছে সেসব এলাকায় জনগণ আর সৌর বিদ্যুতে আগ্রহী হতে চায় না। এ কারণে আগের চেয়ে সোলার হোম সিস্টেমের আগ্রহ বর্তমানে কিছুটা কমেছে। ইডকল সূত্রে জানা গেছে প্রতিমাসে সারাদেশে তৃণমূল এলাকায় সাড়ে তিন লাখ গ্রাহকের কাছে সোলার হোম সিস্টেম পৌঁছানোর টার্গেট থাকলেও চাহিদা কমে যাওয়ায় এ টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা গেছে এখন প্রতিমাসে ২ লাখের নিচে সোলার হোম সিস্টেম পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। তাদের হিসাব মতো বর্তমানে সারাদেশে সোলার হোম সিস্টেমের গ্রাহক রয়েছে ৪০ লাখের মতো। গ্রাহক প্রতি বা প্রতিটি সোলার হোম সিস্টেমের অধীনে ছয়জন বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসলেও বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনার দিক দিয়ে বিশ্বে অন্যতম।। কারণ এখানে প্রতি বছরই সূর্যের আলো পাওয়া যায়। যা সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের অন্যতম উৎস। তাদের মতে গ্রিড লাইন সম্প্রসারণের কারণে সম্প্রতি এর চাহিদা কমলেও দেশে এখনও বহুলোক বিদ্যুত সুবিধার বাইরে রয়েছে। বিদ্যুত গ্রিডের বাইরে থাকা মানুষ খুব শীঘ্রই বিদ্যুতের লাইনের আওতায় আসবে এমন সম্ভাবনা নেই। তাদের বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনতে সৌর বিদ্যুতের কোন বিকল্পও নেই। এ কারণে আগামী পাঁচ বছরে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারকারী গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখে পৌঁছানো সম্ভব হবে। জানা গেছে বর্তমানে সারাদেশে ৪০ লাখ গ্রাহক সৌর বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। আর সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০১৭ সালের মধ্যে ৬০ লাখে পৌঁছানোর। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন বর্তমান সুবিধা বজায় থাকলে তার আগেই ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক সংখ্যায় উন্নীত করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত সৌর বিদ্যুত ব্যবহারকারীদের মধ্যে সোলার হোম সিস্টেমই সবচেয়ে বেশি রয়েছে। এর বাইরে গ্রিডের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের সরকারী কোন চেষ্টা এখন পর্যন্ত কাজে আসেনি। অবশ্য ভারত, চীন, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রিডের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। সেখানে অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদ্যুত ব্যবহারের জন্য এখনও সবাই হোম সিস্টেমের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। এর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে বেসরকারিভাবে সোলার মিনি গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এ চেষ্টায় তারা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। সোলার পাম্প ইতোমধ্যে দেশে জনপ্রিয় হয়েছে। এ ছাড়া সোলার লণ্ঠন, সোলার হিটার, সোলার কুকারসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার রয়েছে দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের সব মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনতে হলে বিকল্প সব সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। দেশে ভবিষ্যতের জ্বালানি চাহিদা স্থায়ীভাবে মেটানোর জন্য সৌরশক্তি ব্যবহারে এখনই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের বাজেট বরাদ্দসহ দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রেনডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাজেদ কামাল বলেন, জার্মানি ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর ১০০ ভাগ নির্ভরতার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সও একই ধরনের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছে। নাইজিরিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশসমূহও আজ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করছে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অফুরন্ত হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের আওতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ তার অনুদ্ঘাটিত বা অব্যবহৃত নবায়নযোগ্য জ্বালানি খনি ব্যবহার করে শুধু তার নিজস্ব জ্বালানি সঙ্কট নিরসন নয় বরং সারা বিশ্বের জন্য এক অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও গম্প্রসারণে শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) নামের প্রতিষ্ঠানটি। দেশে সম্ভাবনাময় সৌর বিদ্যুত উৎপাদন ছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইডকলের সহায়তায় দেশে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সোলার হোম সিস্টেম জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সোলার মিনি গ্রিড ও সোলার সেচ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির রিনিউএ্যাবল এনার্জির টেকনিক্যাল ইউনিট হেড ওয়াহিদুর জানিয়েছেন, সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে সোলার সিস্টেম সফলতা পাওয়ার পর এখন বিদ্যুত উৎপাদনের বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইডকল সোলার মিনি গ্রিড প্রকল্প হাতে নিয়ে সফলতাও পেয়েছে।
×