ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাহাঙ্গীর কবীর পোকন

আসুক ফিরে স্বর্ণালী দিন

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আসুক ফিরে স্বর্ণালী দিন

বাঙালী মাত্রেই খেলাপ্রিয়। শৈশব, কৈশোর কিংবা তারুণ্যে এক-আধটু খেলাধুলা করেননি এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না। গ্রামের মাঠে, স্কুল কিংবা কলেজের মাঠে সব ধরনের খেলাধুলাই হতো বিপুল উৎসাহে। এখনও হয়। তবে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। সেই ফুটবলেরই রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস। এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্র এই ফুটবল খেলা হতো অসীম আনন্দে-উচ্ছ্বাসে। ঢাকার প্রথম বিভাগের ফুটবল খেলা তো এই গত দুই দশক আগেও ছিল টানটান উত্তেজনার। আবাহনী-মোহামেডানের খেলা মানেই তো ছিল এক অন্যরকম আবেদন, যা আজ কেবলই স্মৃতি। কী তুমুল তর্কের ঝড় যে তখন বয়ে যেত দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে তা আজও অম্লান হয়ে আছে। তৎকালীন ব্রিটিশ আমল থেকে ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলা চালু হয়ে গত দুই দশক আগ পর্যন্ত ছিল এক ভিন্ন রকম রোমাঞ্চ। ছিল জেলা পর্যায়ের ফুটবল, যে ফুটবল টিম থেকেই তখন প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়রা পরবর্তীকালে ঢাকার বড় বড় ফুটবল টিমে অংশ নিত। সেই সময় ফুটবলে লেগেছিল পেশাদারিত্বেরও ছোঁয়া। কিন্তু আজ ফুটবলে সেই ঐতিহ্য আর গৌরবগাথা কালের অতলে তলিয়ে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলকে নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন করে জনপ্রিয় করে তুলতে নেয়া হয়েছে জোরালো পদক্ষেপ। ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলসহ জেলা পর্যায়েও নতুন উদ্যোগে ফুটবল খেলার ব্যাপক আয়োজন চলছে, যা ফুটবলের জন্যে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত বয়ে আনবে। যে কোন বাঙালীই কোন না কোন সময় ফুটবল খেলতে পছন্দ করত। বিকেল হলেই বন্ধুরা মিলে দুই দলে বিভক্ত হয়ে নেমে পড়ত ফুটবল নিয়ে। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে অনেকে আজও হয়ে পড়েন ভীষণ নষ্টালজিক। সব থেকে বিস্ময়কর যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও স্কুল এবং কলেজ জীবনে ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে। সেকালের ফুটবলের ইতিহাস ঐতিহ্য আজ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেলেও একালে পুনরায় ফুটবল খেলা নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি অতীতের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলেও ফুটবলপ্রিয় মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস। তাছাড়া বাঙালী যে কতটা ফুটবলপ্রেমিক তার উদাহরণ পাওয়া যায় যখন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলে তখন। সারাদেশের বাড়ির ছাদে তখন দেখা যায় প্রিয় দল ও দেশের পতাকা উড়ছে, যা সেকালেও উড়ত। তবে সেই পতাকা ছিল আবাহনী এবং মোহামেডানের পতাকা। সেই সময় ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়েও ছিল সমর্থকদের ভিন্ন-ভিন্ন আবেগ। ফুটবল ক্রেজ আজ ম্রিয়মাণ হয়ে এলেও তিরিশের বেশি বয়সী প্রতিটা বাঙালীই তার শৈশব-কৈশোর আর তারুণ্যের ফুটবল খেলা নিয়ে হয়ে পড়েন নিদারুণ আবেগাপুøত। ফেলে আসা উদ্দাম জাগা ফুটবল খেলা। হৈ হল্লা নিয়ে তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই জেগে ওঠে এক অন্যরকম সুখানুভূতি। কখনও কখনও তারা তাদের খেলার জীবন নিয়ে আজও হয়ে পড়েন অসম্ভব স্মৃতিকাতর। এক সময় আমি নিজেও ঢাকার ফার্স্ট ডিভিশনের আজাদ স্পোর্টিং এবং ওয়ারী ক্লাবে খেলেছি অনেক দিন। তাই বলব সময়ের ধারায় ফুটবলের আকাশে এক চিলতে মেঘ জমলেও সেদিন খুব দূরে নয় যে, আবারও একদিন ফুটবলের স্বর্ণালী দিন ফিরে আসবে। যার দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, এই সেদিন ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের অনুর্ধ ১৬ দলের ফুটবলাররা চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করেছে। তাই বলব- হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশ আবারও জেগে উঠবে আপন মহিমায়। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলাররা যদি স্ব স্ব অবস্থানে থেকে ফুটবলের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আরও উদ্যোগী হন তাহলে ফুটবলের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। খানপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×