ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিএসপির ১৬ শর্তের অগ্রগতি দেখতে প্রতিনিধি দল আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জিএসপির ১৬ শর্তের অগ্রগতি দেখতে প্রতিনিধি দল আসছে

এম শাহজাহান ॥ পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লান নামে যে ১৬টি শর্ত দেয়া হয়েছে তার চূড়ান্ত অগ্রগতি দেখতে ইউএসটিআরের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা অনুমোদন দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। আগামী ১৯-২১ সেপ্টেম্বর তিন দিন বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হবে। ওই সময় এ খাতের ছোট, মাঝারি এবং বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো তারা স্বচক্ষে দেখবেন। সন্তুষ্ট হলে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ইউএসটিআর বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট গ্রুপ নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে বিজিএমইএকে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ্যাকশন প্লানের ১৬টি শর্তের সব পূরণ করা হয়েছে। ইউএসটিআরের (ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ) পরামর্শে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। এখন বিধিমালা অনুমোদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুমোদন কেন হচ্ছে না তা জানতে চেয়েছে ইউএসটিআর। সরকারের পক্ষ থেকে ইউএসটিআরকে বলা হয়েছে, বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। শীঘ্রই বিধিমালাটি অনুমোদন হবে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ইউএসটিআরের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিখাইল ডিলানির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফর করবেন। তাই বিধিমালাটি ওই সময়ের আগেই অনুমোদন দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, জিএসপি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬টি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। শুধু সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালাটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ্যাকশন প্লানের শর্ত পূরণ হওয়ার পরও বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছে। তাই আমাদের অগ্রগতি স্বচক্ষে তারা (ইউএসটিআর) দেখতে আসছেন। আশা করছি, শর্ত পূরণ হওয়ায় এবার তারা বাংলাদেশকে জিএসপি পুনর্বহাল করবে। বাণিজ্য সচিব বলেন, কমপ্লায়েন্ট কারখানা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিতে সমর্থ হয়েছে। কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে এ রকম অনেক দেশ জিএসপি সুবিধার আওতায় আসলেও আমরা নেই। এ বিষয়টি ইউএসটিআরকে জানানো হয়েছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, এবারের সফরের সময় ইউএসটিআরের প্রতিনিধি দলটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোশাক কারখানাগুলো দেখানো হবে। আশা করা হচ্ছে, তারা সন্তুষ্ট হয়েই বাংলাদেশকে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে। জানা গেছে, জিএসপি সুবিধার বাইরে রেখে বিদেশী দুই ক্রেতা জোট এ্যাকোর্ড ও এ্যালায়েন্স বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত ম্যানুপুলেট করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুই জোটের ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাকের মূল্য কমিয়ে দিয়েছে ২ দশমিক ৯ ডলার। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে ইউএসটিআরে। এ কারণে এবার সরকারী নির্দেশে বিজিএমইএ যুক্তরাষ্ট্রে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। তবে জিএসপি ইস্যুতে বাংলাদেশ থেকে কোন প্রতিনিধি দল ইউএসটিআরে যাচ্ছে না। জানা গেছে, বাংলাদেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ৭৮তম। আর যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭তম বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ। দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি হচ্ছে বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ রফতানি করছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। যার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক। কিন্তু তৈরি পোশাক রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৬ ভাগ শুল্ক দিতে হচ্ছে। জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ার কারণে পোশাক শিল্প খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ভয়াবহ ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে এ খাতটি। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে পোশাক শিল্প খাত। পোশাক শিল্প খাতে বিপর্যয় নেমে এলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক শিল্প খাতের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই জেনেভাতে সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট গৃহীত হয়। এ সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট এ শ্রম আইন সংশোধন, ২০০ শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ, ইপিজেড আইন সংশোধন, সাধারণের প্রবেশযোগ্য ডাটাবেজ স্থাপন, রফতানিমুখী গার্মেন্টস কারখানা যাচাই-বাছাই, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্র্রেশন প্রদান, শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ বিনির্মাণ ও শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
×