ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্তব্য ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ॥ শাবিতে অনশন আজ

ছাত্রলীগের কোন দোষ নেই, ওদের শাস্তি দেয়া অন্যায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ছাত্রলীগের কোন দোষ নেই, ওদের শাস্তি দেয়া অন্যায়

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কোন দোষ নেই উল্লেখ করে দলটির নেতাকর্মীদের শাস্তি দেয়াকে অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বুধবার শাবি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জাফর ইকবাল ছাত্রলীগরা ‘বাচ্চা ছেলে’ বলেও অভিহিত করেছেন। শাবিতে রবিবারের হামলার ঘটনায় ৩ ছাত্রলীগ নেতার দল থেকে এবং ৪ ছাত্রলীগ কর্মীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে শাস্তি দেয়ায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন জানিয়ে এই লেখক শিক্ষক বলেছেন, ‘শিক্ষকদের ওপর কে হামলা করেছে? ছাত্রলীগের ছেলেরা? না। এরা তো ছাত্র, আমাদের ছাত্র। এত কম বয়সী ছেলে, এরা কী বুঝে? ওদেরকে আপনি যা-ই বোঝাবেন, তাই বুঝবে। কাজেই আমি যখন দেখলাম যে চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে; এখন আমার লিটারালি আক্ষরিক অর্থে ওদের জন্য মায়া লাগছে। আহা বেচারারা!’ শিক্ষকদের ওপর হামলার পর প্রচ- ক্ষোভ দেখিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে প্রতিবাদ করা এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘যারা ব্যবহার করছে কেউ তাদের কাছে যাচ্ছে না কেন? যারা এই বাচ্চা ছেলেগুলোকে, মিসগাইডেড করে পাঠিয়ে দিয়েছে, এখন তারাই বিপদে পড়েছে। ছাত্রত্ব বাতিল হবে, শাস্তি হবে। ওরা কী দোষ করেছে? কাজেই, এখন আমার খুবই খারাপ লাগছে। এই ছাত্রলীগের ছেলেদের শাস্তি দেয়াটা এক ধরনের অন্যায়। যে তাদেরকে পাঠিয়েছে তাদেরকে শাস্তি দেন।’ শাবিতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার খবর শিরোনামে উঠে এলে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগাছা পরিষ্কার করতে ছাত্রলীগকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এরা আমাদের ছাত্র। এদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে, ওদের সঙ্গে কথা বলে, ওদেরকে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগাছাকে দূর করে দিতে। আমি বলি যে, না। আগাছাকে আমরা ফুল গাছে পরিণত করব। সম্ভব। আমাদের ছাত্র; আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ওদেরকে ঠিক করে দেব।’ যদিও শিক্ষকদের ওপর হামলার পর প্রতিবাদ করে প্রথমদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দুঃখ হয়, যে জয় বাংলা সেøাগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই জয় বাংলা বলে ছাত্রলীগ শিক্ষকদের পিটাল। এরা যদি আমার ছাত্র হয়ে থাকে, তাহলে গলায় দড়ি দিয়ে আমার মরে যাওয়া উচিত। কারণ আমার ছাত্রদের আমি মানুষ করতে পারিনি।’ এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. জাফর ইকবাল উপাচার্যের কঠোর সমালোচনা করেন এবং ফের পদত্যাগের দাবি জানান। ড. ইয়াসমিন হক ॥ শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের ‘দোষ নেই’ বলে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। ছাত্রলীগের প্রতি তাদের কোন ক্ষোভ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বুধবার দুপুরে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের মিছিল ও সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের ওপর কোন ক্ষোভ নেই বলে জানান ড. ইয়াসমিন হক। সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কোন দোষ নেই। তাদের প্রতি আমাদের কোন রাগ-ক্ষোভ নেই। তারা আমাদের ছাত্র। তাদেরকে আমাদের ওপর হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের লেলিয়ে দিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন ভিসি। তিনি বার বার মিথ্যা কথা বলছেন। তাকে এ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। গত রবিবার সকালে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার দায়ে চার ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) প্রশাসন। বহিষ্কৃত চারজনই ছাত্রলীগ কর্মী। শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ধনিরাম রায়, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের জাহিদুল ইসলাম নাঈম, একই বিভাগের আরিফুল ইসলাম, এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসুম। এর আগে সোমবার রাতে এ ঘটনায় শাবির তিন ছাত্রলীগ নেতাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, ১ম যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ। শাবি শিক্ষকদের প্রতিবাদ অব্যাহত, আজ অনশন ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচীর প্রথম দিন বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি, কালোব্যাজ ধারণ, মৌন মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে উপাচার্যপন্থী সরকার সমর্থকের একাংশ এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা ক্লাস নিয়েছেন। বেলা ১১টায় আন্দোলনকারী শিক্ষকরা মৌন মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানেই সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। মোঃ ফারুক উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোঃ ইউনুছ, অধ্যাপক আব্দুল গণি, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক মস্তাবুর রহমান, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দিপু, সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হক, অধ্যাপক দীপেন দেবনাথ প্রমুখ। সমাবেশে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। এই কর্মসূচী অনুয়ায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপাচার্য ভবনের সামনে অনশন পালন করবেন শিক্ষকরা।
×