ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই হাজার কিলোমিটার ড্রেনের বেশি অংশ বন্ধ

নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করা সহজে সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করা সহজে সম্ভব নয়

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন, কাছে যাব কবে পাব ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।’ বর্ষায় প্রিয়জনের কথা ভাবতে ভাবতেই হয়ত গানটি গেয়েছিলেন খ্যাতিমান শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। যাকে বলে ভালবাসার টান। কিন্তু এ সময়ে রাজধানী ঢাকায় কেউ যদি প্রিয়জনের জন্য ঘর থেকে বেরুতে চান; তা মোটেও সম্ভব নয়। বৃষ্টিতে ভেজা বা ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ জলজট আর যানজটের কারণে অল্পতেই ম্লান হয়ে যাবে। দুর্ভোগের শিকার হয়ে প্রেমকে হয়ত অনেকে নির্বাসনে পাঠাতে চাইবেন। ঠাণ্ডা মেজাজের হলে হয়ত আপাতত প্রেমকে ছুটি দেবেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ সময়ে একটি দেশের রাজধানী শহর বৃষ্টিতে অচল হয়ে যাবে? তা কি ভাবা যায়। সরল উত্তরÑ মোটেও না। দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে থাকবে তাও মেনে নেয়া সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো কেন এ সমস্যা। আর এ থেকে পরিত্রাণেরই বা উপায় কী? বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, চলমান সঙ্কট সমাধান মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের সমন্বয় জরুরী। পাশাপাশি দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেই এক বছরের মধ্যে নগরীর চলমান সঙ্কট অনেকাংশে দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ঐক্য থাকলে ১৫ বছরে ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের চেয়ে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলা সম্ভব। রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমানোর উদ্দেশ্যে ২০১১-১৪ সাল পর্যন্ত চার বছরে খরচ করা হছে ৩০৩ কোটি টাকা। কিন্তু তার ফল কী? বাস্তবতা হলো অর্থ গেলেও সুফল মেলেনি। জলাবদ্ধতা আছেই। বরং বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জলজট সমাধানে নতুন করে ভাববার বিকল্প নেই। তাই দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে। করণীয় ঠিক করারও চেষ্টা চলছে। ২০০৯ সালের ২৮ জুলাই ঢাকা মহানগরীতে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩৩৩ মিলিলিটার। এখন ৮০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাতে গোটা নগরী নদীতে পরিণত হয়, এমন বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৪ মিলিলিটার। এতেই যা হয়েছে তা সবার জানা। রাজধানীর প্রায় সব রাস্তাই ছিল পানির নিচে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে পানি সরতে। এ প্রেক্ষাপটে আরও ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত নই। বৃষ্টি বেশি হলে, জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। বৃষ্টির কারণে গাড়ি বন্ধ হয়ে অচল হয়ে যাবে রাস্তা। মঙ্গলবারের মতো বুধবারেও প্রায় দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে নগরীতে। একে তো রাস্তা ভেঙ্গেচুরে খানখান, অন্যদিকে অতিবর্ষণে জলজট। সব মিলিয়ে গণপরিবহন থেকে শুরু করে সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে ছিল ধীরগতি। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব সড়কে ছিল যানজটের দুর্ভোগ। গণপরিবহনের সংখ্যাও ছিল কম। সকাল থেকে চলা বৃষ্টির কারণে যারা ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন তাদের সবার কমবেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ফুটপাথ ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের ছিল মাথায় হাত। সন্ধ্যায়ও মালিবাগ ও রাজারবাগ এলাকার রাস্তায় ছিল হাঁটুপানি। মৌচাক-মালিবাগ উড়াল সড়কের আট কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই যেন বড় ড্রেনে পরিণত হয়েছে। রাস্তা ভেঙ্গে হাঁটু সমান গর্ত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, ৪ সেপ্টেম্বর থেকে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। অর্থাৎ আগামী অন্তত এক সপ্তাহ বৃষ্টির ঝুঁকি রয়েই গেছে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, এক সময় ঢাকায় অন্তত ৬৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। তবে বর্তমানে এর অন্তত ২১টিই এখন হারিয়ে গেছে। বাকি খালগুলোও ক্রমে দখল হয়ে যাচ্ছে। দখলের ফলে অনেক খাল সরু হয়ে গেছে। এছাড়া দখলে দূষণে তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যাসহ চার নদী মৃতপ্রায়। প্রভাবশালীদের খুশি রাখতে জায়গা ছেড়ে দিয়ে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে; দিন দিন বিভিন্ন এলাকার উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা জমে নদীর গভীরতা কমছে। নগরীর অন্যান্য জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে ঢাকার চারপাশজুড়ে নদীগুলোতে চার দশমিক পাঁচ মিটার পানি থাকলে বাইরের পানি টানতে পারে না। এজন্য নগরের পানি সরে না। ঢাকা ওয়াসা ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা বর্তমান ড্রেনেজ-ব্যবস্থা ধারণ করতে পারে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) প্রায় দিনই এর ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তাই ১০ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলে বিদ্যমান ড্রেনেজ লাইনে পানি সরতে বেশি সময় নেবে। কিন্তু ড্রেনেজ লাইন ও এগুলোর সংযোগ লাইনগুলোর বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য জমে থাকায় পানি নিষ্কাশনে বাধা তৈরি হয়। ওয়াসা ৩৬০ কিলোমিটার ও সিটি কর্পোরেশন দুই হাজার কিলোমিটার ড্রেন তৈরি করেছে। তাছাড়া ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেমের সঙ্গে ১৪টি প্রতিষ্ঠান জড়িত। বাস্তবতা হলো ২-১টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া ড্রেন সংরক্ষণে কেউ কাজ করে না। এছাড়া কাজের ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন সমন্বয় নেই। এছাড়া চলমান ড্রেনগুলোর অর্ধেকের বেশি ময়লা আবর্জনায় বন্ধ থাকে। এতে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণেও জলাবদ্ধতা হচ্ছে। তাছাড়া সঙ্কটের জন্য কালভার্ট করাকেউ দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, খাল, জলাশয়, দখলসহ নদী হারিয়ে যাওয়াই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। বিগত ৩০ বছরে ঢাকা উন্নয়নের সঙ্গে ড্রেনেজ পদ্ধতিও মানানসই নয়। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জলজটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন অত্যন্ত জরুরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বসে নেই। প্রতিনিয়তই কাজ করে চলেছি। প্রায় প্রতিদিনই দাফতরিক কাজের পাশাপাশি নাগরিকদের নানাবিধ সমস্যা সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে প্রকৃত সমস্যা অনুধাবনের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সমস্যায় নগরবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তবে জলাবদ্ধতা একটি জটিল সমস্যা। এটি নিরসনে সময় লাগবে। আমরা সম্মিলিতভাবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহনের উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই নগরবাসী এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাবেন বলে আশা করছি। উত্তরের মেয়র আনিসুল হকও জলাবদ্ধ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সঙ্কট সমাধানে করণীয়ও তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তিনি বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ১৪টি বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতর রয়েছে। তারা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। কিন্তু এসব কার্যক্রমের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে যে নামেই হোক একটি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠন জরুরী। এর কোন বিকল্প নেই। বুধবার শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা পরিদর্শনকালে তিনি নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাদের কী কী সমস্যা সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। মেয়র সাঈদ বলেন, কর্পোরেশনের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। চলমান এসব কার্যক্রমে নগরবাসীরও আন্তরিক সহায়তা চান। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চলছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’ এর কাজ। এ প্রকল্পের নিউমার্কেট থেকে মোহাম্মদপুর আদাবর এবং নিউমার্কেট থেকে ধানম-ি পান্থপথ পর্যন্ত এলাকায় কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন জার্মানির আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘লাউদিং পাইফার’। হাঁটু পানির কারণে কাজ করতে না পেরে প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় স্যান্নাল জনকণ্ঠকে জানান, টানা বৃষ্টিতে তারাও বিপাকে পড়েছেন। এতে তাদের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার উন্নয়নকাজ করা যাচ্ছে না। এতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনেও সমস্যা হচ্ছে। নানা দুর্ভোগে পড়ছে লোকজন। গেল শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে ‘নগর ঢাকায় জলজট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগে একটি পৃথক অথরিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। রাজধানীর বর্জ্য সম্পদ হিসেবে দেখে তা কাজে লাগাতে বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে এলে জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন তারা। আবার নগরীর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে ১০টি পৃথক টাস্কফোর্সের কথাও বলেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন নবনির্বাচিত দুই মেয়র। পরামর্শ হিসেবে বক্তারা বলেন, জলজট সমাধানের জন্য ড্রেনগুলো আরও গভীর করতে হবে। সকল সংস্থাসমূহের মধ্যে একক নিয়ন্ত্রণ বা নগর সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। গঠন করতে হবে সমন্বিত ড্রেনেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন কঠোর রাজনৈতিক পরিকল্পনা। বক্তারা বলেন, চলমান ড্রেনগুলো সচল করা হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে এটা হবে আপদকালীন দ্রুত পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উত্তরা থার্ড ফেজে ৫৩ একর জমি দখল করে বিক্রি করেছে রাজউক। এ কারণে ওখানে জলাবদ্ধতা হবে। গবেষণা প্রতিবেদনে, মিরপুর ২৭ নম্বর, বাড্ডা, মতিঝিল, নাজিমউদ্দিন রোড, রাপা প্লাজা, ফার্মগেট, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, বেইলীরোড, মগবাজার, মৌচাক, নিউমার্কেটসহ আরও বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জলাবদ্ধতা বেশি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সেমিনারে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, জনগণ সঙ্গে থাকলে আদর্শ ঢাকা গড়ে তুলতে পারব। দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকার জলজট, ঢাকার দুঃখ। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এর সমাধান করতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরুর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে যেন ৫০ ভাগ কাজ শেষ করতে পারি। সাঈদ খোকন বলেন, প্রত্যেক জনগণ নিজেকে মেয়র ভাবলে নগরীর সমস্যা সমাধান হবে। আনিসুল হক আরও বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলতে সকলের সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। নগর সরকার বিষয়ে দুই মেয়র বলেন, নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে এই মুহূর্তে নগর সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। আরও সময় লাগবে। ঢাকার যানজটকে অন্যতম সমস্যা উল্লেখ করে তারা বলেন, এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সকলের মধ্যে ঐক্য থাকলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত করা সম্ভব। নগর সরকার না হওয়া পর্যন্ত মেয়ররা ছায়া হিসেবে কাজ করলে ঢাকা বদলে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি। গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ঢাকার উঁচুনিচু কোনটি এখন বোঝা মুশকিল। এখন আমাদের পরিকল্পনা নিতে হবে বৃষ্টির পর কত মিনিটে পানি সরানোর জন্য পরিকল্পনা নেব। এজন্য ১৫ মিনিট থেকে আধাঘণ্টার মধ্যে পরিকল্পনা নেয়ার তাগিদ দেন তিনি। বলেন, ঢাকার নদীগুলো খালের মতোই আক্রান্ত। মোট কথা হলোÑ বিল-খাল-নদী ফেরত আনতে না পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। ধোলাইখাল-মা-া-জিরানী এই তিন খাল একেক করে হাতিরঝিলের মতো করার প্রস্তাব দেন এই বিশেষজ্ঞ। পান্থপথের ৮০ ভাগ বক্স কালভার্ট ভরাট থাকার কথাও জানান তিনি। ঢাকার নদী রক্ষায় মেগা প্রকল্প নেয়ার কথা জানান পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক সুলতান আহমেদ। জলাবদ্ধতাসহ নাগরিক সঙ্কট সমাধানে নগর সরকারের প্রস্তাব দিয়ে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগর বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে কোন মূল্যে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। ড্রেন, পার্ক, বর্জ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বিষয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে কাজ করলে সঙ্কট কমে আসবে। নগরীকে রক্ষায় জলাশয় ও সবুজায়নের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। ড্রেনের মাস্টারপ্ল্যানে কোন অবস্থাতেই ভুল না করার পরামর্শ দিয়ে ওয়াটার এইডের ড. মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি সঙ্কট সমাধানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যেতে পারে। স্থপতি মাকসুদ সিনহা বলেন, নগরীর ৮৫ ভাগ ময়লা রিসোর্স হিসেবে কাজ করে। তাই বর্জ্যরে রিসাইকেল প্রজেক্ট না করলে সঙ্কট কমবে না। স্থপতি আবু সাঈদ আহমেদ বলেন, ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়ার পর নির্মাণকালীন শর্ত মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখার কেউ নেই। ফলে ইচ্ছেমতো ভবন নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণ বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণ করলে সংস্থাগুলোকে কোন প্রকার সেবা না দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। চলমান ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর খালগুলো প্রশস্ত করার সুযোগ না থাকার কথা উল্লেখ করে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, তবে খাল দখল রোধে সোচ্চার থাকতে হবে। যে কোন মূল্যে দখল ঠেকাতে হবে। ওয়াসার খালের জমি রাজউক দখল করে বিক্রি করছেÑ এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, রাজধানীর মোট বর্জ্যরে মধ্যে ৫০ ভাগ হলো শিল্প খাতের। ইস্টার্ন বাইপাস হলে এটি হবে রং প্রজেক্ট। বিকল্প হিসেবে তিনি এলিভেটেড রোড করার পরামর্শ দেন। ওয়াসার ড্রেন সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ারও প্রস্তাব করেন তিনি। শুধু নদী বা খাল দখল নয়, এগুলোকে ঘিরে উন্নয়ন কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। প্রকৌশলী কাজী হাবিব বলেন, ঢাকার নদীগুলোর দুই ঢালেই ১৫০ ফুট জায়গা খালি রাখার কথা থাকলেও সেসব অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। খালগুলোও ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান দরকার। খাল ভরাট ও নদী দখলের কারণেই জলাবদ্ধতা সমস্যা তীব্রতর হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
×