ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত সরবরাহ উন্নত করতে এনএলডিসি হচ্ছে নতুন কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিদ্যুত সরবরাহ উন্নত করতে এনএলডিসি হচ্ছে নতুন কোম্পানি

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) কে পৃথক কোম্পানি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ক্রমেই বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হওয়ায় এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে। এখন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এনএলডিসি। কোন কোন সময় এনএলডিসিকে পিডিবির ইচ্ছা অনিচ্ছায় কাজ করতে হয়। এতে করে সব চেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলে এনএলডিসি এক ধরনের হুকুমের গোলামে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্ল্যাক আউটের মতো বড় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। সারাদেশে বিদ্যুত সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মতো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে এনএলডিসি। দেশে কখন কী পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন, কোন কোন কেন্দ্র থেকে তা উৎপাদন হবে, কখন কোন বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে হবে কখন কোন কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব রয়েছে এনএলডিসি-এর কাঁধে। কাজেই বিদ্যুত ব্যবস্থার নিত্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা এনএলডিসিকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের সব দেশেই এনএলডিসি পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে কিন্তু আমাদের এখানে অন্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি চলছে গুরুত্বহীনভাবে। সব থেকে বড় দুর্বলতা হচ্ছে এনএলডিসি’র ম্যানুয়াল সিস্টেম। আধুনিক যুগে বিশ্বের সবখানেই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে এনএলডিসির কাজ হলেও আমাদের এখানে অনেকাংশেই করা হচ্ছে মৌখিক নির্দেশে। যা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয় ভয়ঙ্করও। কেবল এনএলডিসির কারিগরি, ব্যবস্থাপনাগত এবং তদারকির গাফিলতির জন্য গত বছর ১ নবেম্বর সারাদেশে ব্লাক আউটের ঘটনা ঘটে। সারাদেশের সব বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে সারাদেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সূত্র জানায়, বিদ্যুত সঞ্চাল ব্যবস্থায় ভোল্টেজ লেবেল কমে গেলে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে তা সামাল দিতে হয়। কিন্তু গত ১ নবেম্বর ব্ল্যাক আউটের সময় দেখা যায় এনএলডিসি তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে ওই সময় গঠিত তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছিল এনএলডিকে শক্তিশালী করা জরুরী। আর পৃথক সংস্থা গঠন না করে তা করাটা অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুত বিভাগ জানায়, বুধবার পিজিসিবিতে এনএলডিসিকে পৃথক সংস্থা অর্থাৎ ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিস্টেম অপারেটর (আইএসও) করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের চিঠি পৌঁছেছে। বিদ্যুত বিভাগের চিঠিতে দেখা যায় গত ৩০ আগস্ট বিদ্যুত বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ মোখলেসুর রহমান আকন্দ চিঠিটি পিজিসিবিতে পাঠিয়েছেন। পিজিসিবিকে মাত্র একদিনের সময় দিয়ে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে ১২ আগস্ট অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে বিদ্যুত বিভাগের কাছে চেয়ে পাঠায়। মাত্র একদিনে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে পিজিসিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেসে বলেন, এভাবেই সব কিছু চলে বলেই কোন কিছু ঠিক ঠাক হয় না। আর তাও চিঠিটি আমরা হাতে পেলাম ২ সেপ্টেম্বর। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে দেশের প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসে ৪০ বছরের পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে। এছাড়া দেশের গ্রিড এবং সাবস্টেশনের অনেকটাই মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরাতন। এসব বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর তথ্যও দ্রুত পাওয়া যায় না। আবার ব্ল্যাক আউট এরপর দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনা অতি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া এখন দেশেই নয় দেশের বাইরে থেকেও বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। সুতরাং দেশের সমস্যাগুলোর পাশাপাশি দেশের বাইরের গ্রিডের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয় এনএলডিসিকে। যা এনএলডিসির বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে কোন ক্রমেই সম্ভব হয়ে উঠছে না। জানতে চাইলে পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইস জনকণ্ঠকে বলেন, এখন যেভাবে এনএলডিসি চলছে তা দিয়ে বিশদ বিদ্যুত ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এখন এনএলডিসিকে পিজিসিবি এবং পিডিবি উভয়ের কথা শুনতে হয়। অধিকাংশ কাজ হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এভাবে চলতে থাকলে বারবার ব্ল্যাক আউট এর ঘটনা ঘটবে। পৃথিবীর সবখানেই এনএলডিসি ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিস্টেম অপারেটর (আইএসও) হিসেবে চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে তা এখনও সম্ভব হয়নি। সূত্র বলছে দিনের বিদ্যুতের চাহিদা হিসাব করে প্রথমে সব থেকে কম দামের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালানোর নির্দেশ দেয় এনএলডিসি। এভাবে পর্যায়ক্রমে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষাকৃত বেশি দামের বিদ্যুত নেয়া হয়। আবার কোন বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে কোন গ্রিডে কোন সময় কতটা বিদ্যুত দেয়া হবে এসব কিছুর নিয়ন্ত্রণও যেহেতু এনএলডিসির হাতে তাই বিদ্যুত ব্যবস্থাপনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এনএলডিসি। অন্য কারো আদেশে চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জানতে চাইলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী জনকণ্ঠকে বলেন, পৃথিবীর নানা দেশেই এনএলডিসি পৃথকভাবে কাজ করছে। আমাদের বিদ্যুত ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন সরকার এনএলডিসিকে পৃথক করার কথা চিন্তা করছে। আমরা আজই (বুধবার) বিদ্যুত বিভাগের চিঠি হাতে পেয়েছি। পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ তুলে ধরব। এটা হলে এনএলডিসি পৃথক কোম্পানি হিসেবে কাজ করতে পারবে।
×